গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রবীণ ভোটদাতাদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের বন্দোবস্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল তৃণমূল। নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাল পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে যে ভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাকে অগণতান্ত্রিক আখ্যা দেওয়া হল তৃণমূলের তরফে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সি ভোটদাতাদের ভোট পোস্টাল ব্যালটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সংবিধানের এবং দেশের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের বিরোধী, এমনও লেখা হল তৃণমূলের তরফ থেকে পাঠানো চিঠিতে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী সোমবার দলের তরফ থেকে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে চিঠি লিখেছেন। জুন মাসেই কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ৬৫ বছরের বেশি বয়সি ভোটদাতাদের ক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালটে ভোট নেওয়া হবে। বুথে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁদের ভোট দেওয়ার দরকার নেই। বরং সরকারি কর্তারাই পোস্টাল ব্যালট নিয়ে তাঁদের কাছে যাবেন। ২ জুলাই কমিশনের এক মুখপাত্র সেই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণাও করে দেন। তৃণমূল এ দিন চিঠি পাঠিয়ে দাবি করেছে যে, ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।
কেন প্রত্যাহার করতে হবে পোস্টাল ব্যালটে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত, তার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে। প্রবীণদের ভোট এ ভাবে পোস্টাল ব্যালটে নেওয়া হলে ভোটের গোপনীয়তার অধিকার এবং অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অধিকার-সহ নানা অধিকার লঙ্ঘিত হবে বলে মনে করছে তৃণমূল। কমিশনের এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক এবং স্বৈরাচারী বলেও লেখা হয়েছে তৃণমূলের চিঠিতে।
সুব্রত বক্সী লিখেছেন যে, দেশের জনসংখ্যার ৬ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে ৬ শতাংশ নাগরিককে বৈষম্যের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে তৃণমূল মনে করছে। বুথে না গিয়ে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে বলা হলে তাঁদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে বলে মত তৃণমূলের। নির্বাচন প্রক্রিয়ার এই সংশোধনী শুধু কোভিড সংক্রমণের হাত থেকে প্রবীণদের রক্ষা করার জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থাপনা নয়, বরং এটাকে স্থায়ী ব্যবস্থাপনারই মতো বলে মনে করছে বাংলার শাসক দল। তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মত না নিয়ে এই রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া গণতন্ত্রের পরিপন্থী বলে চিঠিতে লেখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘দুষ্কৃতী-হাতে বাংলার রাজনীতি’, তোপ নড্ডার, মুক্ত করার সঙ্কল্পও
সুব্রত বক্সীর চিঠিতে এ দিন নির্বাচন কমিশনকে মনে করানো হয়েছে যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং অন্তত ১৩টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বয়স এখন ৬৫-র বেশি। তাঁরা ভোটের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন, কিন্তু বুথে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন না, এটা কতটা যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্নও তোলা হয়েছে কমিশনের সামনে।
এই ভাবে ভোট নেওয়া হলে ভোটদাতাদের পছন্দের গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকছে বলে তৃণমূলের চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই ভাবে ভোট দেওয়া হলে ভোটদাতাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হবে বলে বাংলার শাসক দলের আশঙ্কা। চিঠিতে সুব্রত বক্সী লিখেছেন যে, “পোস্টাল ব্যালটে ভোট নেওয়াতে শাসক দলের এজেন্টরা, সরকারি কর্মীরা এবং নানা অশুভ শক্তি প্রভাবিত করতে পারে।” ফলে ব্যাপক রিগিংয়ের অবকাশ তৈরি হবে বলে তৃণমূলের আশঙ্কা।
নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল যে, যাঁরা করোনা-আক্রান্ত অথবা যাঁদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, তাঁদের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে এই নতুন ব্যবস্থা। কিন্তু তৃণমূল বলছে, এই নতুন প্রক্রিয়া এতই জটিল যে, এতে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়বে। কোনও ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্দিষ্ট আধিকারিকের উপস্থিতিতে ভোট দেওয়ার সময়ে, ভোট নোটারাইজেশনের সময়ে অথবা তা পোস্ট করার সময়ে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে বলে লেখা হয়েছে তৃণমূলের চিঠিতে। নতুন পদ্ধতিতে সব প্রবীণ ভোটদাতার কাছে গিয়ে যে ভাবে আধিকারিকেরা ভোট নেবেন, তাতে ভোট প্রক্রিয়ার খরচ অনেক বাড়বে বলে মনে করিয়ে দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে কমিশনকে।
এই সব যুক্তির ভিত্তিতেই কমিশনের কাছে তৃণমূলের দাবি, ৬৫ বছরের বেশি বয়সি ভোটদাতাদের ভোট, পোস্টাল ব্যালটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক। সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদে এবং ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা যাতে কেন্দ্রীয় সরকার গ্রাস করতে না পারে, তা কমিশন নিশ্চিত করুক— চিঠির শেষে এমনই লিখেছেন সুব্রত বক্সী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy