অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করে ধর্মঘটের বিরোধিতায় নেমেছে শাসক তৃণমূল সমর্থিত সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন। প্রতীকী ছবি।
আগামী শুক্রবার বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে প্রশাসনিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এক ঝাঁক সরকারি কর্মচারী সংগঠন। যার মধ্যে রয়েছে যৌথ সংগ্রাম কমিটি থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ কো-অর্ডিনেশন কমিটির মতো বামপন্থী সংগঠনগুলিও। প্রথম থেকেই এই ধর্মঘটের বিরোধিতা করে আসছে তৃণমূল সমর্থিত সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন। এ বার রাজ্যে অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ সামনে রেখে বিরোধিতার সুর আরও চড়াল তারা।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে দু’দিনের কর্মবিরতির পর প্রথমে ৯ মার্চ প্রশাসনিক ধর্মঘটের ডাক দেয় সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলি। কিন্তু ওই দিন মাধ্যমিকের শারীরশিক্ষার পরীক্ষা থাকার কারণে সিদ্ধান্ত বদল করে তা ১০ তারিখে করা হয়। আগামী শুক্রবার সেই দিন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধারাবাহিক ভাবে ধর্মঘট এবং বন্ধের বিরোধিতা করে আসছেন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটেরও বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। ১০ তারিখের প্রস্তাবিত ধর্মঘটেরও বিরোধিতা করবে রাজ্য প্রশাসন। তবে তার আগেই ময়দানে নামল তৃণমূলপন্থী সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন।
সম্প্রতি অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। সম্প্রতি বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রয়োজনে আবারও সবাইকে মাস্ক পরারও অনুরোধ করেছেন তিনি। তার পরেই অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করে ধর্মঘটের বিরোধিতায় নেমেছে শাসক তৃণমূল সমর্থিত সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন।
বুধবার তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যে অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রমণের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে সরকারি কর্মচারীদের উচিত ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা। আমরা নীতিগত কারণেই বন্ধ বা ধর্মঘটের বিরোধী। কিন্তু এ বার নীতিগত কারণের থেকে মানবিক কারণই আমাদের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ মনোজ আরও বলেন, ‘‘অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে আরও অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে মহার্ঘ ভাতার দাবিতে প্রশাসনিক ধর্মঘট করা কতটা যুক্তিযুক্ত, সেটা অবশ্যই ধর্মঘটী সরকারি কর্মচারীদের ভেবে দেখা উচিত।’’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রশাসনিক ধর্মঘটকে সমর্থন করলেও জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মীদের ছাড় দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে কো-অর্ডিনেশন কমিটির তরফে বিশ্বজিৎ গুপ্তচৌধুরী বলেছেন, ‘‘জেনে রাখা দরকার যে, আমরা আমাদের ধর্মঘট থেকে জরুরি পরিষেবাকে বাদ রেখেছি। তাই আমাদের দায়িত্ব স্মরণ না করালেও চলবে। রাজ্য সরকার নিজের দায়িত্ব পালনে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। তাই যাঁরা আমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে উপদেশ দিন! যাতে সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দেন।’’
বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার সাধ্যমতো ডিএ দিচ্ছে। তার বেশি দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রীর এমন অবস্থান জানানোর পরেও ডিএ নিয়ে বিরোধী সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছে তৃণমূল পরিচালিত সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন।
ইতিমধ্যেই লিখিত বিজ্ঞপ্তি জারি করে ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল সেকেন্ডারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’ প্রশাসনিক ধর্মঘটের দিন তাদের সদস্যদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাল্টা বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন ‘বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’-র নেতা স্বপন মণ্ডল বলেছেন, ‘‘নিজেদের দাবি আদায়ের পক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা সরকারি কর্মচারীদের অধিকার। সরকারপক্ষ আমাদের দাবি মেনে নিলেই এই ধরনের ধর্মঘট করার কোনও প্রয়োজন হবে না। সেগুলি অন্য শিক্ষক সংগঠনের বন্ধুদের বুঝতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy