(বাঁ দিকে) ঘাটালে দেব। প্লাবিত এলাকায় ত্রাণ বিলি করছেন তৃণমূল সাংসদ (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
অল্প অল্প করে উন্নতি হচ্ছে বাংলার বানভাসি এলাকাগুলির। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, সর্বত্রই জলস্তর কমছে। বাঁকুড়ার সার্বিক পরিস্থিতি এখন ভাল। যদিও এখনও জলে ডুবে হাওড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক রাস্তা। বুকসমান জলের তলায় বহু এলাকা। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘাটালই। রবিবার সেখানকার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসেন সাংসদ দীপক অধিকারী (দেব)। সেখান থেকে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে আবারও মুখ খোলেন তৃণমূল সাংসদ। তিনি জানান, ওই প্রকল্পের জন্যই তৃতীয় বার ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। সেই কাজ হবেই। কিন্তু তাঁর বক্তব্য, এ বার যে বন্যা হয়েছে, তা মাস্টারপ্ল্যান থাকলেও রুখতে পারত কি না সন্দেহ। তিনি বলেন, ‘‘ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলেও এই বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেত কি না, সে নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। অনেকগুলি জেলা, হুগলি, ২৪ পরগনা জলের তলায় চলে গিয়েছে। পাঁচ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এত পরিমাণ জল ধরে রাখার ক্ষমতা ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানেও সম্ভব নয় বলে মনে হয়। বৃষ্টির জন্য বন্যা থেকে রক্ষা মিলতে পারে।’’
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘাটাল বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছেন। আগে এক বার সাংসদ দেবও এলাকাগুলি দেখেছেন। রবিবার আবার ঘাটালে বন্যাকবলিত এলাকায় ঘুরে দেখেন তিনি। ঘাটালের ২ নম্বর চাতাল থেকে নৌকায় করে প্লাবিত এলাকাগুলি পরিদর্শনে যান তিনি। ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে। কিন্তু ফি বছর বন্যা হলেও ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়ন কেন হয় না, সে নিয়ে প্রতি বর্ষাতেই আলোচনা হয়। দেব অবশ্য বলেন, ‘‘মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশ করে যে মান সিংহ কমিটি, তা যদি বাস্তবায়িত হয়, তা হলে ঘাটালের অর্ধেক নদী হয়ে যাবে। অনেকগুলি জায়গাকে নদীতে পরিণত করতে হবে। সেটা তো সম্ভব নয়। তাই নতুন প্ল্যান অনুযায়ী চার কিলোমিটার জমিকে বাঁধে পরিণত করে দু’টি নদীকে মেলাতে হবে। সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। জমি অধিগ্রহণ চলছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘জুন থেকে ধরলে তিন মাসে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান হয় না। রাজ্য সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে কাজটা দ্রুত গতিতে শুরু করার। জমি অধিগ্রহণ এবং জমি পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। বেশ কিছু জমিতে দোকান তৈরি হয়ে গিয়েছে। রাস্তা দিয়ে বড় মেশিন ঢুকতে পারবে না। তাঁদের সঙ্গে কথা চলছে। প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের তরফেও বিলি করা হচ্ছে ত্রাণসামগ্রী। সোমবার ডেবরা ব্লকের জন্য ত্রাণ নিয়ে ঘণ্টা দু’য়েক পর্যালোচনা বৈঠক হয়। এসডিও, বিডিও, ওসিদের আলোচনা হয়। সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, দাসপুর-১, দাসপুর-২, চন্দ্রকোনা, ডেবরা, কেশপুর-সহ বহু এলাকা এখনও জলমগ্ন। ঘাটাল শহরেরই ১৩টি ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকা জলের তলায়। সোমবার মানুষজন তা-ও খানিক স্বস্তি পেয়েছেন ঘাটাল বাজার খোলা দেখে। সেখান থেকে জল নেমে যাওয়ায় দোকানবাজার খোলে সোমবার। সামনে পুজো। তাই তৎপরতার সঙ্গে ওই এলাকা থেকে জল নামানো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে। ঘাটালের ভাসাপুলের রাস্তা দিয়ে শুরু হয়েছে যাতায়াত। ঘাটালের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে আশাকর্মীরা যাচ্ছেন প্রসূতিদের খবর নিতে। ঘাটাল, পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কে গাড়ি চলাচলও শুরু হয়েছে।
অন্য দিকে, হাওড়ার আমতার এক বাসিন্দা বানের জলে ভেসে গিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। জানা যাচ্ছে, নিখোঁজ ওই যুবকের নাম সুমিত মাইতি। ২৮ বছরের সুমিত আমতা-২ বিধানসভার মহাকালপুর গ্রামের বাসিন্দা। আত্মীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি উদ্ধারের জন্য। বাধ্য হয়ে নিজেরাই নৌকা নিয়ে যুবকের খোঁজে নেমেছেন। কলকাতায় একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন সুমিত। শনিবারই বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। পরিবারের দাবি, দুপুর ১টা নাগাদ আমতার নকুবারের বাঁধের কাছে এসে জলের তোড়ে ভেসে যান তিনি। প্রশাসনের উচ্চপদস্থ এক আধিকারিক জানান, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে জলের স্রোত অনেক বেশি। তাই সমস্যা হচ্ছে। সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দল পাঠানো হয়েছে।
তবে উদয়নারায়ণপুরের বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। গত বুধবার থেকে দামোদরের জল ঢুকে যে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করেছিল, আস্তে আস্তে তার অনেকটাই উন্নতি হচ্ছে। কিছু এলাকার মানুষ এখনও ত্রাণশিবিরে রয়েছেন। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা।
বাঁকুড়ার বন্যাবিধ্বস্ত এলাকাগুলি এখন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। রবিবার হুগলির বন্যা পরিস্থিতি দেখতে আরামবাগে যান রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন তাঁরা। পুরশুড়া, হরিণখোলা, কিশোরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জায়গার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। অস্থায়ী যে শিবিরগুলো রয়েছে, সেখানে ত্রাণসামগ্রী এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বইপত্র তুলে দেন আধিকারিকেরা। বন্যায় বেশ কয়েকটি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। ওই পরিবারগুলির হাতে এক লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy