Advertisement
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Flood Situation in Bengal

ডিভিসি-র বোর্ড এবং কমিটি থেকে ইস্তফা দিলেন রাজ্যের দুই আধিকারিক, ‘জলযুদ্ধে’ জমি ছাড়তে নারাজ মমতা!

ডিভিসি-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে মোদীকে দ্বিতীয় চিঠি দিয়েছেন মমতা। সেখানেই জানিয়েছেন, জল ছাড়ার বিষয়ে কেন্দ্র সব সত্য বলছে না। অনেক ক্ষেত্রেই রাজ্যের সম্মতি ছাড়া জল ছেড়ে দেয় ডিভিসি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১
Share: Save:

মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া নিয়ন্ত্রণে ডিভিসি-র ভূমিকায় ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবারই তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এ বিষয়ে দ্বিতীয় চিঠিটি লিখেছেন। জানিয়েছেন, তিনি কেন্দ্রের আচরণের প্রতিবাদে দামোদর ভ্যালি জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটি (ডিভিআরআরসি) থেকে রাজ্যের প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এ বার সেই আবহেই ডিভিসি-র বোর্ড এবং ডিভিআরআরসি থেকে ইস্তফা দিলেন রাজ্যের দুই শীর্ষ আধিকারিক। ডিভিসি বোর্ড থেকে সরে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ দফতরের সচিব শান্তনু বসু। ডিভিআরআরসি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাজ্যের প্রতিনিধি তথা সেচ দফতরের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার। ডিভিসি ছাড়াও জল কমিশন, পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে এই কমিটি গঠিত।

ডিভিসি-র চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে বিদ্যুৎ দফতরের সচিব বলেছেন, ‘‘দুই জলাধার থেকে ডিভিসি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে যে জল ছেড়েছে, তার ফলে রাজ্যের বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ কষ্টভোগ করছেন। এই পদক্ষেপ অভূতপূর্ব। এর প্রতিবাদে আমি ডিভিসি-র বোর্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গের সদস্য হিসাবে ইস্তফা দিচ্ছি।’’ ঘটনাচক্রে, বিদ্যুৎ দফতরের সচিব হওয়ার পাশাপাশি শান্তনু তথ্য-সংস্কৃতি দফতরেরও সচিব। যে দফতরের মন্ত্রী মমতা নিজে।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের কারণে পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হয়েছিল। তার ফলে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধারে জল বেড়ে যায়। ডিভিসি জল ছাড়ার পরেই পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান এবং পশ্চিম বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। গত বুধবার সেই বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন মমতা নিজে। রাতে মেদিনীপুরে থেকেওছিলেন তিনি। গোটা পরিস্থিতির জন্য তিনি প্রথম থেকেই ডিভিসিকে দায়ী করে এসেছেন। ঝাড়খণ্ডকে বাঁচাতে বাঁধের জল ছেড়ে বাংলায় বন্যা তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। একে ‘ম্যান মেড বন্যা’ বলে অভিহিত করে মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তিনি ডিভিসি-র সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। তার পরেই মোদীকে বন্যা পরিস্থিতি জানিয়ে চিঠি দেন তিনি।

মোদীকে দেওয়া মমতার চিঠির জবাব দিয়েছিলেন কেন্দ্রের জল শক্তিমন্ত্রী সিআর পাতিল। তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে ডিভিআরআরসি জল ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। বাংলায় বন্যা আটকানোর চেষ্টাও করেছিল ওই কমিটি, জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কিন্তু শনিবার মন্ত্রীর সেই চিঠির জবাবে মোদীকে দ্বিতীয় চিঠিটি লেখেন মমতা।

মমতা জানান, কেন্দ্রের বক্তব্য ঠিক নয়। অনেক সময়েই রাজ্যের সম্মতি ছাড়া জল ছাড়া হয়। কেন্দ্রীয় জল কমিশন এবং জল শক্তি মন্ত্রকই এ ক্ষেত্রে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে থাকে। রাজ্যের অনুরোধও শোনা হয় না।

চিঠিতে মমতা আরও জানিয়েছেন, ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ডিভিসি-র চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। তিনি জল না ছাড়ার অনুরোধ করেছিলেন। সেই অনুরোধ শোনা হয়নি। রাজ্য সরকার আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া অনুমোদনই করেনি। রাজ্যের তরফে জলের পরিমাণ কমিয়ে প্রথমে ২.৩ লক্ষ কিউসেক এবং পরে দু’লক্ষ কিউসেক করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই অনুরোধ শোনা হয়নি। ডিভিসি উত্তর দিতে দেরিও করেছিল। যার ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। মমতা বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়েছে, আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার প্রয়োজন ছিল না। তা না হলে দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি এত ভয়াবহ আকার ধারণ করত না। তাই আমার মনে হয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যে বলেছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সব রকম চেষ্টা করা হয়েছিল, তা পুরোপুরি ঠিক নয়। জলাধার নিয়ন্ত্রণকারীরা ঠিক মতো কাজ করতে পারেননি। তা ছাড়া, মাইথন এবং পাঞ্চেতে সংস্কারের কাজ চলছে বলে আমি শুনেছি। সেগুলিও শেষ হয়নি। আমি ডিভিসি-র কমিটি থেকে আমার প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’’

এ ছাড়া, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নদীতে উপযুক্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প প্রয়োগ করা প্রয়োজন, মনে করেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, অবিলম্বে সে সব প্রকল্পের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তার সব খরচ রাজ্য সরকারের উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। ইতিমধ্যে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান (১২৩৮.৯৫ কোটি টাকা) এবং উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার (৪৯৬.৭০ কোটি টাকা) জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদে ভূমিধস নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অর্থ বরাদ্দ এখনও বাকি আছে, মোদীকে চিঠিতে মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। বিষয়গুলি বিবেচনা করতে প্রধানমন্ত্রীকে তিনি অনুরোধ করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE