অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার সিজিও কমপ্লেক্সে। —নিজস্ব চিত্র।
সিজিও কমপ্লেক্সে যখন ইডির প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছিলেন অভিষেক তখন দিল্লিতে তাঁর আসনটিকে ফাঁকা রেখে প্রথম বৈঠক করে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটি। অভিষেককে বিজেপি ওই বৈঠকে যোগ দিতে দেয়নি বলেও অভিযোগ করেন কমিটির সদস্য শিবসেনা (ইউবিটি) মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত। একই সঙ্গে তিনি জানান, ‘ইন্ডিয়া’ পাশে রয়েছে অভিষেকের। সিজিও থেকে বেরিয়েই অভিষেক বলেন, ‘ইন্ডিয়া’কে তিনি ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। তবে একই সঙ্গে কেন্দ্রে জোট বদ্ধ কংগ্রেস এবং সিপিএমের তাঁর বিরুদ্ধে মন্তব্য নিয়ে অভিষেক বলেন, ওঁদের উচিত একসঙ্গে ঠিক করা আমাকে নিয়ে কী বলবেন।
অভিষেক বললেন, ‘‘শুভেন্দুকে টিভি ক্যামেরার সামনে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। অথচ কোনও বিচারপতি বলেননি, ওঁকে ডেকে পাঠাও। আমি বলব, যাঁরা নারদায় অভিযুক্ত তাঁদের সবাইকে গ্রেফতার করুন। শুরুটা হোক শুভেন্দুকে দিয়ে। আমি বলে দিচ্ছি, এর পর এনডিএ সরকার গিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতায় আসবে। তখন গ্রেফতার হবেন শুভেন্দু।’’
ইডির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিষেক বললেন, নারদা কেলেঙ্কারিতে এফআইআরে অভিযুক্ত শুভেন্দুকে গ্রেফতার করা হয়নি। উল্টে বিজেপি তাঁকে দলে নিয়েছে। সাড়ে ন’বছরে নারদার তদন্ত এগোয়নি। আর এই মামলায় ঠিক ভোটের সময় বা আমার কোনও রাজনৈতিক কাজ থাকলে তখনই ডাকা হয়। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে ওরা আগেও বহুবার প্রশ্ন করেছে। দু’বছর আগেও আমার কাছে এই একই প্রশ্ন এসেছিল। তখন কয়লা এবং গরু কেলেঙ্কারিতে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এখন এই মামলায় জানতে চাওয়া হচ্ছে। সব দুর্নীতির টাকা লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসে ঢুকেছে? একটি সন্তানকে কতজন মা গর্ভে ধারণ করবে? আসলে আমি যেহেতু সিইও তাই ইডির দায়িত্ব এটা প্রমাণ করা যে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র আমার বার্তা নিয়ে যেত।’’
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শুভেন্দু বলেছেন, তাঁর ভাইকে জেরা করার নামে হেনস্তা করা হচ্ছে। অভিষেকের জেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এখন দেখ কেমন লাগে! শুনে অভিষেক বললেন, ‘‘আমিও ধূপগুড়ির রেজাল্ট নিয়ে বলছি দেখ কেমন লাগে? কিন্তু তফাতটা হল আমি ইডির মতো কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে এ কথা বলছি না। আমি রাজনৈতিক ভাবে জিতে এ কথা বলছি।’’
অভিষেক বললেন, ‘‘জটায়ু তাঁর বন্ধু ফেলুদাকে প্রশ্ন করেছিল, একই জিনিস আমরা এক ভাবে দেখছি , আর আপনি অন্য ভাবে দেখছেন, সেটা কী করে হয়? জবাবে ফেলুদা বলেছিলেন, আপনার আর আমার মধ্যে তফাত শুধু দৃষ্টিভঙ্গির। আপনারা আগে অপরাধী ঠিক করে নেন। পরে অপরাধ খোঁজেন। কিন্তু আমি আগে অপরাধ খুঁজি তার পর অপরাধীকে চিহ্নিত করি। ইডিও এখানে জটায়ুর মতোই আগে অপরাধী ঠিক করে নিচ্ছে। আগে অপরাধ খুঁজছে না। হয়তো তাই তারা অপরাধের গভীরে পৌঁছতে পারছে না।’’
অভিষেক বললেন, প্রায় ১৪ মাস হল পার্থ গ্রেফতার হয়েছেন। তার পর কী হয়েছে বলুন।
অভিষেক বললেন, ‘‘আমাকে টানা ৪ দিন জেরা করলেও মেরুদণ্ড বিক্রি হবে না। কারণ আমরা বশ্যতা স্বীকার করতে জানি না। তবে ইডিকে আমি দোষ দিই না। ওঁরা কর্মী মাত্র। নির্দেশ পালন করাই ওঁদের কাজ।’’
বিজেপি তাদের ধূপগুড়ির হারের জ্বালা মেটাতেই তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জন্যই অন্য কোনও দিন তাঁকে ডেকে না পাঠিয়ে বেছে বেছে বুধবার বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকের দিনই ডেকে পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। অভিষেক বললেন, ‘‘কিন্তু এ ভাবে আমাকে ইডি দিয়ে ডেকে পাঠিয়ে ধূপগুড়ি পুনরুদ্ধার হবে না।’’
ঠিক ৯ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর ইডির দফতর থেকে বেরোলেন অভিষেক। রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে বেরিয়ে বললেন, ‘‘এর আগে নিট ফল ছিল জ়িরো। এখন আরও দু’নম্বর কমল। মাইনাস টু। নিট ফল মাইনাস টু।’’
গত ২০ মে সিবিআই যে দিন অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল, সে দিন প্রায় ৯ ঘণ্টা ৪০ মিনিট জেরা করা হয়েছিল তৃণমূল সাংসদকে। নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার সূত্রে বুধবার ইডির দফতরে হাজিরা দেওয়ার পর ৯ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের ভিতরেই রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
ইডির সমন পাওয়ায় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি কমিটির সদস্য অভিষেক। বুধবারই ছিল কমিটির প্রথম বৈঠক। দিল্লিতে কমিটির সদস্যরা অভিষেকের জন্য একটি চেয়ার ফাঁকা রেখে বৈঠক করেন। সঙ্গে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির সদস্য শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘‘অভিষেক আজ বৈঠকে থাকতে পারলেন না, কারণ ইডি আর বিজেপি তেমনটা চায়নি।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান ‘ইন্ডিয়া’র অন্য সদস্য দলগুলি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পাশে রয়েছে।
ইডি দফতরে ঢুকেছিলেন সেই সকাল ১১টা ৩৪ মিনিটে। তার পর থেকে ৯ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে।তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক রাত সাড়ে ৮টার পরও সিজিও কমপ্লেক্সের বাইরে আসেননি।
বুধবার সকাল ১১টা ১২ মিনিটে বাড়ি থেকে বার হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ১১টা ৩৪ মিনিটে পৌঁছন সিজিও কমপ্লেক্সে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ইডির দফতরে পৌঁছন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তাঁর জন্য সিজিও কমপ্লেক্স চত্বরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল ভোর থেকেই। অভিষেকের পৌঁছনোর অনেক আগেই নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে সল্টলেকের সিজিও চত্বরকে। ট্রাফিক গার্ডের বিশেষ দল থেকে শুরু করে নিকটবর্তী থানার পুলিশ, মহিলা পুলিশ, কলকাতা পুলিশের বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে সল্টলেকের সিজিও চত্বর পরিণত হয় প্রায় মাছি না-গলা দুর্গে!
প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রেই অভিষেককে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইডি। মঙ্গলবার মামলায় রক্ষাকবচ চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছিলেন অভিষেক। এ ব্যাপারে আদালতে তাঁর যে মামলাটি চলছে, সেটির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যাতে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না করা হয়, সে ব্যাপারেই রক্ষাকবচ চেয়েছিলেন তিনি।
আদালত অভিষেককে জানিয়ে দেয়, তাঁর কাছে ইডির প্রতিশ্রুতির ‘মৌখিক রক্ষাকবচ’ আছে। এবং ইডি এ যাবৎ সেই প্রতিশ্রুতি পালনও করেছে। তাই নতুন করে রক্ষাকবচের কোনও প্রশ্ন নেই। ইডির আইনজীবীও জানান, সমন পাঠানো মানেই গ্রেফতার করা হবে, তা নয়। তা ছাড়া ওঁকে সাক্ষী হিসাবে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
ইডি যে তাঁকে আবার তলব করেছে তা নিজেই জানিয়েছিলেন অভিষেক। তিনিই নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে রবিবার জানান, “ইন্ডিয়ার সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠক ১৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে, যে কমিটির আমিও এক জন সদস্য। কিন্তু ইডি ওই দিনই আমাকে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছে! এই মাত্র সেই নোটিস পেলাম। ৫৬ ইঞ্চি ছাতির কাপুরুষতা ও অন্তঃসারশূন্যতা দেখে বিস্মিত না হয়ে পারছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy