Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Kamarhati Beating Incident

তাঁর প্রশ্রয়েই কামারহাটিতে জয়ন্তের সিংহবিক্রম? মদন মিত্র নিশানা ঘুরিয়ে দিলেন পুলিশ আর সৌগতের দিকে

মদনের অভিযোগ, পুলিশ চাইলেই জয়ন্তদের ধরতে পারে। তা না করে পুলিশ বার বার তাঁকে বলেছে, বিষয়টি সৌগতকে জানাতে। কিন্তু সৌগতকে বিষয়টি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে দাবি মদনের।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ ১৯:২৮
Share: Save:

কামারহাটির আড়িয়াদহের ক্লাবে এক জনকে ঝুলিয়ে মারধরের ঘটনায় যাঁর দিকে আঙুল উঠেছে, সেই জয়ন্ত সিংহ তাঁর ‘লোক’ নন। মঙ্গলবার এ কথা জানালেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। উল্টে তিনি আঙুল তুললেন পুলিশ এবং দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের দিকে। মদনের দাবি, জয়ন্তেরা ‘গুন্ডা’। তাঁর আরও অভিযোগ, পুলিশ চাইলেই জয়ন্তদের ধরতে পারে। তা না করে পুলিশ বার বার তাঁকে বলেছে, বিষয়টি সৌগতকে জানাতে। কিন্তু সৌগতকে বিষয়টি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে দাবি মদনের। নিজের প্রাণহানির আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি। অন্য দিকে, সৌগত এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে সম্মত হননি।

আড়িয়াদহের ক্লাবে এক জনকে চ্যাংদোলা করে ঝুলিয়ে রেখে মারধরের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। (ভাইরাল ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) । অভিযোগ, যাঁরা মারধর করছেন, তাঁরা সকলেই জয়ন্তের লোক। কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদনের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় জয়ন্তের পরিচিতি। মদন যদিও তা অস্বীকার করে দাবি করেন, ওরা ‘গুন্ডা’। তিনি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গও তুলেছেন। বিধায়ক জানিয়েছেন, একটা দলের নেতা জয়ন্ত। একটা দলের নেতা রিন্টু। বেআইনি ভাবে পুকুর বুজিয়ে প্রোমোটিং নিয়ে তাঁদের সংঘর্ষ বাধে বলেও দাবি করেন মদন। তিনি এ-ও জানান, পুলিশকে যখনই বলেছেন, পুলিশ সৌগতকে জানাতে বলেছে। তাঁর কথায়, ‘‘যখনই পুলিশকে ফোন করি, পুলিশ বলে সৌগত রায়কে বলুন। আমায় মানতে হবে, কারণ আমার উপরে তিনি। আমার কথা শোনে না। আমার হিসাবে কোনও নিয়োগ, গ্রেফতারি হয় না। সৌগত বার বার বলেছেন, আমি দেখছি।’’

পুলিশকেও তোপ দেগেছেন মদন। নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তিনি দাবি করেছেন, পুলিশ পারে না, এমন কিছু নেই। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ পারে না, এমন কোনও কাজ নেই। পুলিশ মারতে পারে, পুলিশ রাখতে পারে। পুলিশ খুন রুখতে পারে, খুন করাতে পারে। অথচ সাধারণ মানুষ গণধোলাই খাচ্ছে।’’

মদনের এই সব মন্তব্য প্রসঙ্গে সৌগত আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘ও যা বলছে, প্রতিক্রিয়া দেব না। যা বলছে, বলুক।’’

তৃণমূল দাবি করেছে, প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়োটি তিন বছরের পুরনো। মদন জানিয়েছেন, সে সময় তিনি কামারহাটির বিধায়ক ছিলেন না। তার পরেই তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘পুলিশ সব পারে, অথচ সুবোধ সিংহ, অর্জুন সিংহ, জয়ন্ত সিংহ কেন ছাড় পাচ্ছে?’’ তিনি এই তিন জনকে ‘তালিবান’ বলেও দাবি করেছেন।

অর্জুনও পুলিশের দিকে আঙুল তুলে দায়ী করেছেন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে। মদন যে রিন্টু এবং জয়ন্তের সংঘর্ষের কথা বলেছেন, অর্জুনও সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন। পাশাপাশি, রিন্টুর পরিচয় সম্পর্কে পৃথক একটি দাবি করেছেন অর্জুন। তিনি বলেন, ‘‘রিন্টু কে? ও আসলে মলয় ঘটক (রাজ্যের আইনমন্ত্রী)-এর ভাগ্নে। আসলে এটা তৃণমূলের লড়াই। পুলিশ মদত দিচ্ছে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারেট আজ টুইট করছে। এই কমিশনার (অলোক রাজোরিয়া, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার)-এর আমলেই এ সব ঘটনা হয়েছে।’’

রিন্টুর সঙ্গে জয়ন্তের সংঘর্ষ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মদনও। তিনি বলেন, ‘‘ভয় লাগছে, আমার উপরেই না গুলি চালায়!’’

সৌগত বা পুলিশের দিকে আঙুল তুললেও মদন সাফ জানিয়েছেন, এই বিষয়ে তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু করা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘তিনি একা কী করবেন! এত পদযাত্রা, প্রচার করতে হচ্ছে। এত জন বিধায়ক। তাঁদের কথা শুনতে গেলে সাত দিন কেটে যাবে।’’

কামারহাটিতে মারধরের ভিডিয়োটি সোমবার রাতে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপি ওই ভিডিয়ো পোস্ট করে লেখে, ‘‘কামারহাটির তালতলা ক্লাবে মদন-ঘনিষ্ঠ জয়ন্ত সিংহ কী ভাবে নিরস্ত্র মহিলাকে মারছেন, দেখা যাচ্ছে। যে রাজ্যের সরকার নারীদের সুরক্ষা নিয়ে গর্ব করে, সেখানেই এই বর্বরতা মানবতার কলঙ্ক। এর দ্রুত তদন্ত এবং বিচার চাই।’’

ভিডিয়ো প্রসঙ্গে বিজেপির পাল্টা পোস্ট করে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র ঋজু দত্ত এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘এটি ২০২১ সালের মার্চ মাসের ভিডিয়ো। অভিযুক্তেরা জয়ন্ত সিংহ এবং তাঁর অনুগামী। ভিডিয়োতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে অন্তত দু’জন এখন জেলে।’’ এই প্রসঙ্গেই মদন জানান, জয়ন্ত তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ নন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE