(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষ এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে ‘দ্বন্দ্ব’ চলছে বলে পুজোর আগে থেকেই প্রচার করে আসছে বিরোধীরা। ইদানীং সেই আলোচনা তৃণমূলের মধ্যেও শুরু হয়েছে। চোখের সমস্যার কারণে বৃহস্পতিবার দলের নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বৈঠকে শারীরিক ভাবে অভিষেক উপস্থিত না থাকার পরে সেই ‘সংঘাত’ জল্পনা এবং আলোচনা আরও বেড়েছে। যদিও মমতার ওই সভায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে কিছু ক্ষণ ছিলেন অভিষেক।
সেই বিতর্কের মধ্যেই দলে দু’জনকেই সমান প্রয়োজন বলে মন্তব্য করলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। শুক্রবার তিনি স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘মমতাদি বনাম অভিষেক নয়, মমতা ও অভিষেক। দু’জনেই দলের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।’’ কুণাল এমনটাও বলেন যে, ‘‘অভিষেক ছাড়া মমতাদি অসম্পূর্ণ।’’
বৃহস্পতিবার কুণাল সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে ব্যক্তিগত কষ্টের কথা তুলে ধরেছিলেন। যেখানে ঠিক দশ বছর আগে সারদাকাণ্ডে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ শুক্রবারেও এসেছে। তবে পাশাপাশিই কুণাল দলের সাম্প্রতিক নানা কাজের সমালোচনা করেছেন। সেই প্রসঙ্গেই দলের ‘প্রবীণ’ নেতাদের দিকে আঙুল তুলেছেন। কারও নাম না করলেও কুণাল বলেন, ‘‘সরকার একের পর এক ভুল করলেও প্রবীণরা কিছুই করছেন না। তাঁদের ভুলেই দলকে হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে বারংবার।’’ কেন দল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফল করেছিল এবং ২০২১ সালে কেন জয় এল, তার থেকেই দলকে শিক্ষা নিতে হবে বলে দাবি করে কুণাল বলেন, ‘‘ভোটে আমরা জিতব। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সারা বছর বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক বিষয় (নন ইস্যু) নিয়ে দলকে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।’’
প্রসঙ্গত, পুজোর আগে প্রথমে দিল্লিতে এবং পরে রাজভবনের সামনে বিক্ষোভের পরে সে ভাবে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি অভিষেককে। এর পরে চোখের সমস্যার জন্য বৃহস্পতিবারের সভায় আসেননি। কিন্তু বুধবারই মমতা অসুস্থ অভিষেককে দেখতে গিয়েছিলেন। তবে বিষয়টা চোখে পড়ার মতো হয়ে ওঠে বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চে অভিষেকের কোনও ছবি না থাকায়। তা নিয়েও মন্তব্য করেছেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘এখন অভিষেকের ছবি ছাড়া তৃণমূলের মঞ্চ অসম্পূর্ণ। এটা হতে পারে না। এটা ঠিক হয়নি।” সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘অভিষেক না থাকলে মমতাদি একলা পারবেন না তা যেমন নয়, তেমনই তৃণমূল না করলে অভিষেকের চলবে না এমনটাও নয়।’’
তবে পাশাপাশিই কুণাল বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের নেত্রী। তিনিই দলের সম্পদ। তাঁর মুখ দেখেই মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেন। তা যেমন ঠিক, তেমনই এটাও ঠিক যে, অভিষেক অনেক পরিশ্রম করে, অনেক আত্মত্যাগ করে উঠে এসেছেন।’’ এর পরেই দুই শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে কোনও ‘দূরত্ব’ নেই বুঝিয়ে কুণাল বলেন, ‘‘ব্যাপারটা কখনওই মমতাদি বনাম অভিষেক নয়। ব্যাপারটা মমতাদি এবং অভিষেক। এক জনকে ঘিরে আবেগ রয়েছে। আর এক জন সময়ের কথা বিবেচনা করে দলের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা দেখছেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, যুবদের অনুপ্রাণিত করা, রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার কাজ করছেন।”
বৃহস্পতিবারের সভায় অভিষেকের ছবি না থাকার প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, ‘‘অভিষেকের ছবি কারা বাদ দিয়েছেন, তা আমি বলতে পারব না। তবে যাঁরাই এটা করে থাকুন, ঠিক করেননি।” তৃণমূল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারের সভা আয়োজনের মূল দায়িত্ব ছিল দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর উপরে। নামোল্লেখ না করলেও মনে করা হচ্ছে বক্সীর দিকেই কুণালের তির। যদিও বৃহস্পতিবারের সভায় অভিষেক ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির হওয়ার সময় বক্সী বলেন, ‘‘সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের উদ্যোগেই এই সভার আয়োজন।’’ বৃহস্পতিবারের সভায় মমতা দলের প্রবীণ নেতাদের গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে কুণাল দলের প্রবীণ নেতাদের প্রতিও বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সিপিএমের মতো হয়ে গেলে চলবে না। দেহত্যাগ না করা পর্যন্ত পদত্যাগ করব না— এমন মানসিকতা ঠিক নয়।’’ প্রবীণরা যাতে জনপ্রতিনিধি না হতে চেয়ে এ বার সাংগঠনিক কাজে যুক্ত হন সে বার্তাও দিয়েছেন কুণাল। তাঁর কথায়, ‘‘দলে নিজেদের ভূমিকা বদলের ব্যপারে কবে কখন কোথায় থামতে হবে সেটা প্রবীণদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’’
শুক্রবার এবিপি আনন্দকে দেওয়া কুণালের সাক্ষাৎকারে এসেছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রসঙ্গও। কুণাল শুভেন্দুকে ‘মমতাদির প্রোডাক্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে শুভেন্দু মমতাদির প্রোডাক্ট। তৃণমূলে থাকার সময়ে তাঁকে সব ক্ষমতা দিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বানিয়েছিলেন মমতাদি। আবার এখন বিজেপিতে তিনি শুভেন্দু অধিকারী হলেন কী করে? কারণ, নন্দীগ্রাম ও লোডশেডিং।’’ নন্দীগ্রামে কেন হারতে হল তা নিয়ে দলের ময়নাতদন্ত করা দরকার ছিল বলে মন্তব্য করেন কুণাল। আদালতে গিয়ে কেন বিচার চাইতে হবে সে প্রশ্নও তোলেন কুণাল। একই সঙ্গে বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বও নেই, শত্রুতাও নেই। আমার দলকে, আমার নেত্রীকে আক্রমণ করে বলে আমি শুভেন্দুকে পাল্টা আক্রমণ করি। দলবদলু শুভেন্দুকে কথা বলার বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে দিচ্ছে তৃণমূল দলই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy