কেষ্টপুরের মাছের মেলায় বিশালাকার তেলিয়া ভোলা। —নিজস্ব চিত্র।
প্রমাণ সাইজের কাতলা কিনবেন কি না ভাবছেন, তার মাঝেই পাশের দোকানদার ২ কেজি ওজনের ইলিশ কম দামে বিক্রির হাঁক পাড়ছেন। চোখ যাচ্ছে পাশের ৪৫ কেজি ওজনের তেলিয়া ভোলার দিকেও। মাছের মেলা দেখে কার্যত দিশাহারা ক্রেতারা। প্রতি বছরের মতো এ বারও জমে উঠেছে হুগলির ব্যান্ডেলের কেষ্টপুর এলাকার মাছের মেলা। এ বার সেই মেলা পা দিল ৫১৮তম বছরে।
রাঘব বোয়াল থেকে চুনো পুঁটি। রুই-কাতলা থেকে ইলিশ-ভেটকি, ভোলা-শঙ্কর মাছ হয়ে কাঁকড়া। ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরে কেষ্টপুরের মাছের মেলায় পাবেন না হেন মাছ নেই। মঙ্গলবার থেকে সেই মেলায় ভিড় হচ্ছে বিস্তর। হুগলি ছাড়াও অন্যান্য জেলা থেকে অনেক মানুষ এসেছিলেন মাছের মেলায়।
কথিত আছে, চৈতন্যদেবের শিষ্য ছিলেন রঘুনাথ দাস গোস্বামী। বর্ধিষ্ণু পরিবারের সন্তান রঘুনাথের প্রত্যাবর্তনের পর শুরু হয় এই মাছের মেলা। মলয় মুখোপাধ্যায় নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘কেষ্টপুর এলাকায় জমিদার ছিলেন গোবর্ধন গোস্বামী। তাঁর ছেলে রঘুনাথ সংসার ত্যাগ করেন সন্ন্যাস নেওয়ার জন্য। চৈতন্যদেবের পারিষদ নিত্যানন্দের কাছে দীক্ষা নেবেন বলে পানিহাটি গিয়েছিলেন। কিন্তু রঘুনাথের বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর। তাই তাঁকে দীক্ষা দেননি নিত্যানন্দ। প্রায় ন’মাস পর বাড়ি ফিরেছিলেন কিশোর রঘুনাথ। সেই আনন্দে এই মেলার আয়োজন করে গোস্বামী পরিবার।’’ কিন্তু মাছের মেলা কেন?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছেলের বাড়ি ফেরার আনন্দে জমিদার গোবর্ধন সারা গ্রামকে ভরপুর খাওয়ানোর আয়োজন করতে চান। জমিদারের কাছে গ্রামবাসীরা কাঁচা আমের ঝোল আর ইলিশ মাছ খাওয়ার আবদার করেন। তখন রঘুনাথ নাকি তাঁদের উদ্দেশে বলেন, বাড়ির পাশে আমগাছ থেকে জোড়া আম পেড়ে আনতে এবং পাশের জলাশয়ে জাল ফেলতে। সেই কথা মতো জাল ফেলা হয় জলাশয়ে। জলাশয়ে জোড়া ইলিশ উঠে আসায় অবাক হয়ে যায় পুরো গ্রাম। সেই থেকে এই মেলার প্রচলন। প্রতি বছর স্থানীয় রাধাগোবিন্দ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি মাছের মেলার আয়োজন হয়। মাঘ মাসের পয়লা তারিখ থেকে শুরু হয় মেলা। তাতে এলাকা তো বটেই বাইরের অনেক মাছ ব্যবসায়ীও মাছের পসরা নিয়ে হাজির হন কেষ্টপুরে। হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া থেকেও মানুষ এই মেলায় আসেন। ৫০০ টাকা থেকে দেড়-দু’হাজার টাকা কেজি দরে মাছ বিক্রি হয়। শুধু মাছ কেনাই নয়, এই মেলার আর একটি বৈশিষ্ট্য হল কেনাকাটার পরে বেশির ভাগ লোকজন পাশের আমবাগানে পিকনিকের আয়োজন করেন। শীতের রোদ্দুর গায়ে মেখে মাছের মেলায় জমিয়ে আনন্দ করেন এলাকাবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy