কুণালের টুইট, শমীকের জবাব। — ফাইল চিত্র।
বামফ্রন্ট জমানায় জয়নগর মজিলপুর পুরসভায় একগুচ্ছ নিয়োগ হয়েছিল। সেই নিয়োগ কি আইনসম্মত ভাবে হয়েছিল? সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কি সব কর্মপ্রার্থী সুযোগ পেয়েছিলেন? বৃহস্পতিবার এমনই সব প্রশ্ন তুলে টুইট করেছেন তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। কিন্তু জবাবে সেই অভিযোগের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সিপিএম। তাদের বক্তব্য, যে সময়কালের উল্লেখ করে কুণাল জয়নগর মজিলপুর পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন, সেই সময় বামফ্রন্ট ওই পুরসভার ক্ষমতায় ছিল না। বস্তুত, তাদের বক্তব্য, তথ্য বলছে শুধু সেই সময় কেন, বামফ্রন্ট জমানার বেশির ভাগ সময়েই ওই পুরসভার ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। যে সময়ের কথা কুণাল বলেছেন, তখনও কংগ্রেসই ওই পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল।
এই বিষয়ে কুণালের বক্তব্য, ‘‘সেই সময় পুরসভায় যিনিই থাকুন না কেন, রাজ্যে সরকার তো বামফ্রন্টের ছিল। সরকারি অনুমোদন নিয়েই তো যাবতীয় দুর্নীতি হত সেই সময়ে। আমি সেই কথাই বলেছি। আর চিঠির তলায় তো রাজ্য সরকারের জয়েন্ট সেক্রেটারির স্বাক্ষর রয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার সকালে টুইটে অভিযোগের সুরে কুণাল লেখেন, ‘‘২০০০ সাল। জয়নগর মজিলপুর পুরসভায় এক নির্দেশেই গুচ্ছ নিয়োগ।’’ টুইটের পরের অংশে তৃণমূল মুখপাত্র লেখেন, ‘‘কমরেড, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে যোগ্যতমদের নিয়োগ হয়েছিল কি? পরীক্ষা, ইন্টারভিউতে সাধারণ সব কর্মপ্রার্থী সুযোগ পেয়েছিলেন অংশ নেওয়ার? তেইশ বছর আগের ঘটনা। তাই চিৎকার করে পার পেয়ে যান আপনারা। তদন্তের নথি পাওয়া যায় না।’’ টুইটের শেষাংশে কুণালের দাবি, ‘‘তবু, মানুষ দেখুন। তদন্ত দরকার তো বটেই।’’
তৃণমূল সাধারণ সম্পাদকের আক্রমণের জবাব প্রতি আক্রমণ দিয়েই দিয়েছে সিপিএম। দলের প্রাক্তন সাংসদ তথা সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী বলেছেন, ‘‘আপাদমস্তক দুর্নীতিপরায়ণ একজন জেলখাটা মানুষ কী অভিযোগ করল, তাতে আমাদের কেন, সাধারণ মানুষেরও কিছু এসে-যায় না! তবে যিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর জানা উচিত, বামফ্রন্ট জমানায় জয়নগর মজিলপুর পুরসভা ছিল কংগ্রেসের দখলে।’’ শমীক আরও বলেন, ‘‘অভিযোগ করা হয়েছে, জয়নগর মজিলপুর পুরসভায় এক নির্দেশেই একগুচ্ছ নিয়োগ হয়েছে। সেই সময় তো আমরা ওই পুরসভার দায়িত্বে ছিলাম না। তাই নিয়োগ কী ভাবে হয়েছে, সেটা যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরাই বলতে পারবেন। অভিযোগ করার আগে তো জানতে হবে অভিযোগের কোনও যৌক্তিকতা আছে কি না!’’
তথ্য বলছে, বামফ্রন্ট জমানায় এই পুরসভার দায়িত্ব ছিল কংগ্রেসের। বেশির ভাগ সময়েই পুরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন কংগ্রেস নেতা প্রশান্ত সরখেল। ২০১৫ সালে জয়নগর মজিলপুর পুরসভার চেয়ারম্যান হন প্রশান্তর ভাইপো সুজিত সরখেল। কুণালের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর জবাব, ‘‘যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সেই সময় আমি কাউন্সিলরও হইনি। পরে কাউন্সিলর হয়ে চেয়ারম্যান হই। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, কংগ্রেস পুরসভার ক্ষমতায় থাকাকালীন কোনও নিয়োগ দুর্নীতি হয়নি। কারণ, যে নিয়োগই হয়েছে, তা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের ঠিক করে দেওয়া নিয়মেই হয়েছিল। তার প্রমাণও নিশ্চয়ই পুরসভার নথিতে থাকবে।’’ সুজিতের আরও বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ড যদি দুর্নীতি করেই থাকত, তা হলে সেই সময় বামফ্রন্ট সরকার বা ২০১১ সালের পরে তৃণমূল সরকার ঠিকই তদন্ত করে দুর্নীতি খুঁজে পেত। যে হেতু আমাদের জমানায় দুর্নীতি হয়নি, তাই কোনও সরকারই আমাদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে পারেনি।’’
প্রসঙ্গত, কুণাল নিজের টুইটের সঙ্গে ২০০০ সালে চাকরি পাওয়া ৩০ জনের নামের তালিকাও প্রকাশ করেছেন। সেই তালিকা প্রসঙ্গে সিপিএমের বক্তব্য, যে নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তার নীচে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুগ্মসচিব পর্যায়ের এক আধিকারিকের স্বাক্ষর রয়েছে। কংগ্রেসের হাতে থাকা পুরসভার নিয়োগ নিয়ে যেমন বামফ্রন্ট বা সিপিএমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করা যায় না, তেমনই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে কী ভাবে নিয়োগ হয়েছিল, তা-ও জেনে নেওয়া দরকার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy