মানুষের মত জানার পরই পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাই করবে তৃণমূল। এটিই ‘তৃণমূলের নবজোয়ার’ বলে দাবি করেন অভিষেক। ছবি: সংগৃহীত।
ভোটের আগে ‘ভোট’ চালু করেছে তৃণমূল। এমন পদ্ধতির ‘অভিষেক’ হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। সোমবার থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক টানা ৬০ দিনের কর্মসূচি শুরু করেছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘জনসংযোগ যাত্রা’ নামের ওই কর্মসূচি শুরু হয়েছে কোচবিহার থেকে। কর্মসূচির শুরুতে অভিষেক জানিয়েছেন, তিনি ‘ভাল মানুষের খোঁজে’ পথে নামছেন। সন্ত্রাসবিহীন ভোট করতে হলে চাই ‘ভাল প্রার্থী’। মানুষকেই নেতা বেছে নেওয়ার ভার দিচ্ছে দল। মানুষের মত জানার পরই পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাই করবে তৃণমূল। এটিই ‘তৃণমূলের নবজোয়ার’ বলে দাবি করেন অভিষেক।
দলের কর্মী-সমর্থকেরা কী ভাবে পছন্দের প্রার্থীর নাম বলতে পারবেন, তা-ও জানিয়েছেন অভিষেক। প্রথম সভাতেই তিনি বলে দেন, বক্তব্যের শেষে মঞ্চের কাছে রাখা ব্যালট বক্সে ‘ভোট’ দেওয়া যাবে। নামধাম গোপন রেখে পছন্দের প্রার্থীর নাম জানানোর আহ্বান জানান অভিষেক। সেই সঙ্গে জানান, কেউ চাইলে সরাসরি ৭৮৮৭৭-৭৮৮৭৭ নম্বরে ফোন করেও কোন পঞ্চায়েত জানিয়ে সংশ্লিষ্ট ভোটারের পছন্দের প্রার্থীর নাম জানানো যাবে। দল সেই নাম অবশ্যই বিবেচনা করবে।
কী পদ্ধতিতে ফোনে পছন্দের প্রার্থীর নাম জানানো যেতে পারে, তা জানতে অভিষেকের দেওয়া নম্বরে ফোন করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তাতে দেখা যায়, ব্যাপারটা ‘ফোন করলাম আর পছন্দের প্রার্থীর নাম বলে দিলাম’ নয়। তার আগে যিনি ফোন করেছেন তাঁর নাম, ধাম, বয়স, পেশা-সহ অনেক কিছু জানাতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে পছন্দের প্রার্থীর নাম জানাতে মিনিট ছয়েক সময় হাতে রাখা চাই।
নির্দিষ্ট নম্বরে বার তিনেক ‘রিং’ হতেই পেশাদারি মহিলাকণ্ঠ স্বাগত জানাল। রেকর্ডিং করা কণ্ঠ বলল, ‘‘এক ডাকে অভিষেকে যোগাযোগ করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার কলের উত্তর শীঘ্রই দেওয়া হবে।’’ কয়েক সেকেন্ড বাজনা বাজার পরে আবার এক নারীকণ্ঠ। বললেন, ‘‘নমস্কার। এক ডাকে অভিষেকে ফোন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি কে কথা বলছেন? আপনার নামটা বলে সহযোগিতা করবেন।’’
নাম ও পদবির ইংরেজি বানানও ঠিকঠাক জেনে নেওয়া হল। এর পরের বক্তব্য, ‘‘স্যর, আপনার কাছে আমরা অনুরোধ করব, আপনার সমস্যা জানার আগে আপনার সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে চাইব। আপনি কি দয়া করে সাহায্য করবেন?’’ ইতিবাচক উত্তর পাওয়ার পরে ধন্যবাদ জানিয়ে একের পরে এক প্রশ্নে জানতে চাওয়া হল বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পেশা। এর পরে ঠিকানা জানার পদ্ধতি দীর্ঘ এবং বিস্তারিত। প্রথমে জেলার নাম। তার পরে বিধানসভা এলাকার নাম। পরের প্রশ্ন, ‘‘আপনি কি গ্রামে থাকেন না শহরে থাকেন?’’ উত্তরে ‘গ্রাম’ শুনে জানতে চাওয়া হল, ব্লকের নাম, পঞ্চায়েতের নাম। ভুল হলে ‘অপশন’ও দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে থেকে বেছে নিয়ে সঠিকটি জানাতে হবে। এর পরে গ্রামের নাম এবং পিনকোড। বলতে না পারলে পোস্ট অফিসের নাম। তার পরে থানার নাম। সেখানেই জানানোর পালা শেষ।
সব যাচাই করার পরে প্রশ্ন, ‘‘এই নম্বর আপনি কী ভাবে জানতে পেরেছেন?’’ জবাবে ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য থেকে’ জানালে বলা হল, ‘‘তার মানে আপনি টিভির খবর থেকে জেনেছেন কি?’’ সেটাও জানানোর পরে মূল প্রশ্ন, ‘‘এ বারে বলুন, আমরা আপনাকে কী ভাবে সাহায্য করতে পারি?’’ পছন্দের প্রার্থীর নাম বলতেই ও পারের নারীকণ্ঠে পাল্টা প্রশ্ন— ‘‘আপনি কি পঞ্চায়েত সদস্য হতে চান?’’ উত্তরে ‘হ্যাঁ’ শুনে নারীকণ্ঠ বলল, ‘‘ঠিক আছে স্যর। আমরা আপনার অনুরোধটি নিয়ে নিয়েছি। এটা আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেব। তাঁরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবেন এবং আমাদের তরফ থেকে আপনি একটি মেসেজ পাবেন, যাতে ভবিষ্যতের রেফারেন্সের জন্য একটি আইডি থাকবে।’’ এখানেই শেষ নয়, অন্য যে কোনও পরিষেবার কল সেন্টারের মতো ভাষায় ধন্যবাদ জ্ঞাপনও আছে, ‘‘ধন্যবাদ স্যর। আপনার মূল্যবান সময় আমাদের দেওয়ার জন্য এবং এক ডাকে অভিষেকে কল করার জন্য।’’
প্রসঙ্গত, অভিষেক মনে করেন বিজেপির সঙ্গে লড়তে গেলে দলকে সুসংহত এবং ‘কর্পোরেট’ পথে নিয়ে যেতে হবে। সেই কারণেই তৃণমূলে এই ধরনের কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। ‘এক ডাকে অভিষেক’ চালু হয়েছিল প্রথমে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের জন্য। অভিষেক সেই কেন্দ্রের সাংসদ। নিজের লোকসভা এলাকার সাধারণ মানুষের সুযোগ-সুবিধা দেখভালের জন্যই অভিষেকের দফতর ওই নম্বরটি ব্যবহার করে। সেই নম্বরটিই পঞ্চায়েতে পছন্দের প্রার্থীর নাম জানানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই নম্বরে ফোন করে কত জন তাঁদের পছন্দের প্রার্থীর নাম জানিয়েছেন, তা বুধবার পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তবে ফোন করলে যে সাড়া মিলছে এবং তথ্য নথিভুক্ত করা হচ্ছে, তা সংশ্লিষ্ট নম্বরে ফোন করে জেনেছে আনন্দবাজার অনলাইন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy