থানার পুজোর আমন্ত্রণপত্রে পদাধিকারী তৃণমূল নেতারা। — নিজস্ব চিত্র
পুলিশের আবাসিক কালীপুজো কমিটি, কিন্তু তাতে রমরমা তৃণমূল নেতাদের। তাঁরা থানার কেউ নন, পুলিশের কেউ নন, এমনকী এলাকারও কেউ নন। তবু দখল করে আছেন গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদ।
এমনটাই ঘটেছে শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানায়। দুই তৃণমূল নেতা হলেন সৌমিত্র কুণ্ডু ওরফে সদা এবং জয়ন্ত মৌলিক। প্রথম জন ‘ভক্তিনগর পুলিশ স্টেশন আবাসিক কালীপুজো কমিটি’-তে সভাপতির পদে বহাল, দ্বিতীয় জন সম্পাদক পদে।
অথচ দু’জনের কেউই পুলিশের সাতে পাঁচে নেই। এমনকী, ভক্তিনগর থানা এলাকার বাসিন্দাও নন। বরং শিলিগুড়ি থানা এলাকার লোক। তবু কেন তাঁদের রাখা হয়েছে কমিটির মাথায়? প্রশ্ন শুনে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচার বক্তব্য, ‘‘থানায় আবাসিকদের পুজো কমিটি তাঁরাই গড়েন। এর সঙ্গে থানার সরাসরি সম্পর্ক নেই। তাই এটা নিয়ে কিছু বলার নেই। তবে কোনও অভিযোগ উঠলে নিশ্চয়ই খোঁজ নেব।’’
আবাসিকদের সামনে রেখে থানা লাগোয়া চত্বর কিংবা মন্দিরে পুলিশের কালীপুজোয় মেতে ওঠাটা এ রাজ্যে নতুন কিছু নয়। বাম আমলেও ঘটা করে থানায় পুজো হয়েছে। তৃণমূল জমানাতেও কমবেশি সব থানায় পুলিশকর্মীদের পরিবারের লোকজনেরা ওই পুজোর আয়োজন করে থাকেন। বকলমে যা থানার পুজো নামেই পুলিশমহলে পরিচিত। সে জন্য রসিদ বই নিয়ে যে সর্বত্র চাঁদা তোলা হয়, তা অবশ্য নয়। তবে তৃণমূলের নেতাদের এ ভাবে সেই পুজোয় যুক্ত থাকাটা যে বিরল, তা মেনে নিচ্ছেন অনেকেই।
শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য যেমন জানালেন, থানায় পুজো তাঁদের আমলেও হতো। ‘‘তবে পুলিশের পরিবারের লোকেরাই তাতে প্রধান ভূমিকায় থাকতেন।’’ মেয়রের অভিযোগ, ‘‘ভক্তিনগর থানার আমন্ত্রণপত্র থেকে স্পষ্ট ওখানে পুলিশ-তৃণমূল সব একাকার। পুলিশ না নেতা— কে থানা চালাচ্ছেন, সেটাই গুলিয়ে যাচ্ছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কেউ বিপদে পড়লে আগে থানায় যাবে, নাকি তৃণমূল নেতার কাছে, তা নিয়ে তো ধন্দে পড়ে যাবে।’’ এই প্রসঙ্গে তিনি ভক্তিনগর থানা এলাকা থেকে আড়াই মাস ধরে নিখোঁজ তরুণী সঙ্গীতা কুণ্ডুর প্রসঙ্গও তোলেন। বলেন, ‘‘ওই নিখোঁজ তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখন পুজোর কমিটি নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছে। যথাস্থানে সবই জানিয়ে হস্তক্ষেপ চাইব।’’
সৌমিত্র কুণ্ডু।
শিলিগুড়ির ভক্তিনগর এলাকার একাধিক বড় মাপের ব্যবসায়ী একান্ত আলোচনা জানিয়েছেন, তাঁরা থানার পুজোর জন্য স্বেচ্ছায় চাঁদা দেন। কিন্তু, এ বার থানার পুজো কমিটিতে দুই তৃণমূল নেতার নাম থাকায় ওই ব্যবসায়ীদের অনেকেই চমকে গিয়েছেন। তাঁরা কয়েক জন একান্তে জানান, শাসকদলের নেতা আর পুলিশ একযোগে কোনও পুজো কমিটিতে থাকলে যা হতে পারে, তা-ই হয়েছে।
তবে তৃণমূলের অন্দরে একদা মন্ত্রী গৌতম দেবের ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিত সৌমিত্রবাবু কিন্তু দাবি করেছেন, তিনি ওই থানা এলাকায় নিয়মিত সমাজসেবামূলক কাজকর্ম করে থাকেন বলেই হয়তো তাঁকে কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা নিয়ে বিতর্ক হওয়াটা দুঃখজনক। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। তেমন হলে আগামী দিনে এমন কমিটিতে থাকব না।’’ ওই কমিটির সম্পাদক জয়ন্তবাবু দীর্ঘদিন সিপিএম কাউন্সিলর ছিলেন। তখন তিনি অশোক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। কয়েক বছর আগে গৌতম দেবের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন।
জয়ন্তবাবুর দাবি, ‘‘আমি তো ওই এলাকায় থাকিই না। এক জন পুলিশ অফিসার অত্যুৎসাহী হয়ে সম্পাদক হিসেবে আমার নাম ছেপে দিয়েছেন। এর বেশি কিছুই জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy