যাদবপুরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সামনে বিক্ষোভ ঘিরে অশান্তির ঘটনায় ‘আক্রান্ত’ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের পড়ুয়া তথা এসএফআই নেতা অভিনব বসু। ছেলের ওই কাণ্ডে ক্ষুব্ধ বাবা তথা হাওড়ার সাঁকরাইলের তৃণমূল নেতা অমৃত বসু। রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি দাবি করলেন, ছেলের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কই নেই! বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে যে ভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তার নিন্দাও করেছেন অমৃত।
শনিবার ওয়েবকুপার বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে পড়েন ব্রাত্য। তাঁকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও দেন এসএফআই, আইসা, ডিএসএফের সদস্যেরা। তা থেকেই অশান্তির সূত্রপাত। দফায় দফায় উত্তেজনা তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরে। অভিযোগ, ব্রাত্যের গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেন বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা। শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির পাশাপাশি তাঁর পাইলট কারে ভাঙচুর চালানোরও অভিযোগ ওঠে। ব্রাত্য আহতও হন। বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের পাল্টা অভিযোগ, মন্ত্রীর গাড়ি এক ছাত্রকে চাপা দিয়েছে। ওই আহত ছাত্র যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও, তাঁর বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সহপাঠীদের। সেই অশান্তির মধ্যেই জখম হন অভিনব। তাঁর পায়ের উপর দিয়ে তৃণমূল সমর্থিত অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রের গাড়ির চাকা চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
এই ঘটনা নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিনবের বাবা অমৃত। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমেই বলে রাখি, গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। ছেলের সঙ্গে মতাদর্শগত মিল নেই আমার। ও তো বাড়িতেও আসে না। করোনাকালে যাদবপুরে ভর্তি হয়। সেখানে মেসে থেকে পড়াশোনা করে। বাড়ি থেকে টাকাপয়সাও নেয় না। স্কলারশিপের টাকায় ও নিজের খরচ চালায়। ছেলের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্কই নেই।’’
অমৃতের সংযোজন, ‘‘যাদবপুরের ভর্তি হওয়ার পরেই অভিনব রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। যাদবপুরের ঘটনায় দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত। আমার ছেলে জড়িত থাকলে শাস্তি হওয়া উচিত।’’
যাদবপুরে শিক্ষামন্ত্রী আক্রান্ত হওয়ার পরেই আসরে নামে তৃণমূল। শনিবার সন্ধ্যায় সুকান্ত সেতু থেকে মিছিল করে তারা। ঘটনার পরেই সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, দলের সাংসদ সায়নী ঘোষ। তৃণমূল চড়া সুরে জবাব দেওয়ার ডাক উঠে দিয়েছে। কুণাল ঘোষ বলেন, “যাদবপুরে যা হয়েছে তা বাঁদরামি। শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল সমর্থক অধ্যাপকেরা সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। তৃণমূলের সৌজন্য মানে দুর্বলতা নয়। সীমা পার করলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া উচিত।” অরূপ বিশ্বাস বলেন, “আমরা চাইলেই যাদবপুর দখল করতে পারি! কিন্তু গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংযম দেখাচ্ছি।”
তৃণমূলের পাশাপাশি শনিবারের ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছিল বামপন্থী ছাত্র সংগঠনও। পথ অবরোধ করেছিল এসএফআই। সোমবারও তারা রাজ্যের সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
শনিবার বিকেলে ধুন্ধুমার পরিস্থিতির পর রাতেও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল ক্যাম্পাসে। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতর তৃণমূল সমর্থিত কর্মী সংগঠন ‘শিক্ষাবন্ধু’র অফিসে হঠাৎ করেই আগুন লাগে। রাতে আহত পড়ুয়াদের দেখতে কেপিসি হাসপাতালে গিয়ে আক্রান্ত হন উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তও। অভিযোগ, সেখানেই তাঁকে কয়েক জন হেনস্থা করেন। তাঁর পাঞ্জাবিও টানাটানিতে ছেঁড়া হয়েছে।
যাদবপুরে অশান্তির ঘটনায় পাঁচটি এফআইআর দায়ের হয়েছে যাদবপুর থানায়। তার মধ্যে তিনটিই ওয়েবকুপার তরফে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এমন নানা অভিযোগে এফআইআর দায়ের করে ওয়েবকুপা। অন্য দিকে, ক্যাম্পাসে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে পড়ুয়াদের তরফেও এফআইআর দায়ের হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত এক জনকেই আটক করা হয়েছে।