তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান এবং বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
তৃণমূলের অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত জাহানের বিরুদ্ধে প্রায় ২৪ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে ইডির দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। এ বার বিজেপিরও এক অভিনেত্রী-সাংসদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দ্বারস্থ শাসক তৃণমূল। শুক্রবার সকালে হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চিটফান্ড কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে কলকাতায় সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি দফতর যান বিধাননগরের কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ তুলসী সিংহ রায়। বিজেপি অবশ্য বিষয়টির মধ্যে প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখছে। নুসরতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পর দৃষ্টি ঘোরাতে তৃণমূল এমনটা করেছে বলে দাবি করেছেন দলের নেতা শঙ্কুদেব। অন্য দিকে, সাংসদ লকেট জানিয়েছেন, তিনি যে কোনও তদন্তের জন্য তৈরি রয়েছেন।
তৃণমূল নেতা তুলসীর অভিযোগ, একটি চিটফান্ড থেকে সুবিধা ভোগ করেছেন লকেট। তাই লকেটের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত এবং তাঁর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি নেই এমন সম্পত্তি খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন তুলসী। তাঁর কথায়, ‘‘আইনজীবী এবং সমাজকর্মীদের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত করার আবেদন নিয়ে ইডি দফতরে এসেছিলাম। সাম্প্রতিক কালে ইডি বিভিন্ন তদন্তের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমরাও একটা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি নিয়ে এসেছি। বিজেপির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় রোজভ্যালি চিটফান্ডের থেকে সুবিধা পেয়েছেন। তাঁর হিসাব-বহির্ভূত সম্পত্তি নিয়ে যাতে নিরপেক্ষ তদন্ত হয়, তার জন্য ইডির কাছে এসেছি। আমদের কাছে তথ্য রয়েছে। চাইছি ইডি তদন্ত করে দেখুক। প্রয়োজন পড়লে আমরাও সাহায্য করব।’’
বিধাননগরের কাউন্সিলরের আরও প্রশ্ন, ‘‘যখন রোজভ্যালি কাণ্ড নিয়ে ইডি এত তদন্ত করছে, সেখানে লকেটের নাম তদন্তের বাইরে কেন?’ বিজেপির সাংসদ বলেই কি লকেটকে তদন্তের বাইরে রাখা হয়েছে? এই প্রশ্নও তুলেছেন তুলসী।
নুসরতের বিরুদ্ধে ইডির দ্বারস্থ হয়েছিলেন শঙ্কুদেব। এ বার লকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা নিয়ে সেই শঙ্কুদেব বলেন, ‘‘নুসরত জাহান নিয়ে কোনও উত্তর না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আগের দিন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, বিজেপির এক সাংসদকে টার্গেট করা হবে। তবে লকেটদিকে টার্গেট করে নুসরতের অপরাধকে খাটো করা যাবে না। যে কোনও অভিযোগের তদন্তই ইডি গুরুত্ব দিয়ে করছে। তৃণমূল সাধারণত উল্টোটা বলে। তবে এখন এটা জেনে ভাল লাগছে যে, তৃণমূলের ইডির প্রতি আস্থা বেড়েছে।’’
ঘটনাচক্রে, বুধবার নুসরত তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকারও করেন। এর পরেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে নুসরত প্রসঙ্গ ওঠায় বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘‘প্রমাণের আগেই দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া হচ্ছে। ডিরেক্টর তো অনেকেই থাকে, নুসরত যদি কোনও জায়গার ডিরেক্টর থেকেও থাকে, তা হলে ও রকম ডিরেক্টর তো অনেক আছে। ওদেরও (বিজেপির) তো কে এক জন সাংসদ আছেন, যাঁর বিরুদ্ধে ইডিতে কমপ্লেন আছে। যিনি বিদেশেও গিয়েছিলেন চিটফান্ডের মালিকের সঙ্গে। আমি নাম বলব না।’’
প্রসঙ্গত, গত সোমবার সন্ধ্যায় বেশ কয়েক জন প্রবীণ নাগরিককে নিয়ে ইডির যুগ্ম অধিকর্তার কাছে গিয়েছিলেন শঙ্কুদেব। অভিযোগ, নুসরতের সংস্থা বয়স্ক নাগরিকদের ফ্ল্যাট দেওয়ার নামে প্রতারণা করেছে। টাকা আত্মসাৎ করে আর ফ্ল্যাট দেয়নি। দাবি, সেই অঙ্ক ২৪ কোটি টাকা। মঙ্গলবার বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ওই টাকা দিয়েই দক্ষিণ কলকাতায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন সাংসদ, যার দাম এক কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা।
সেই প্রতারণার অভিযোগ ওঠার দেড় দিন পর বুধবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন নুসরত। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়ে বসিরহাটের সাংসদ বলেন, ‘‘যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তাদের থেকেই ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮৫ টাকার ঋণ নিয়েছিলাম। সেই টাকায় বাড়ি কিনেছি। ২০১৭ সালের ৬ মে সুদ-সহ ১ কোটি ৪০ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৯৫ টাকা ফেরত দিয়েছি কোম্পানিকে। ব্যাঙ্কের নথিও আমার কাছে আছে। ৩০০ শতাংশ চ্যালেঞ্জ করতে পারি যে, আমি দুর্নীতিতে যুক্ত নই। আমি এক পয়সা নিলেও এখানে আসতাম না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy