Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

অমদাবাদ, বোলপুরে কব্জায় ৩ লগ্নি-কর্তা

পুরুলিয়া ও বীরভূমে আস্তানা গেড়ে ভিন্‌ রাজ্যে টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগে শনিবার দু’টি সংস্থার তিন কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।বেআইনি লগ্নি সংস্থা দু’টির নাম শাশ্বত গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সাগরিকা নেটওয়ার্ক প্রাইভেট লিমিটেড।

জালে: অমদাবাদ থেকে ধৃত সত্যরঞ্জন চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র

জালে: অমদাবাদ থেকে ধৃত সত্যরঞ্জন চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১৬
Share: Save:

সারদা, রোজ ভ্যালির মতো লগ্নি সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারির পরেও অভাবনীয় সুদের টোপে টাকা তুলে প্রতারণার ঘটনায় ভাটা পড়ছে না। পুরুলিয়া ও বীরভূমে আস্তানা গেড়ে ভিন্‌ রাজ্যে টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগে শনিবার দু’টি সংস্থার তিন কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বেআইনি লগ্নি সংস্থা দু’টির নাম শাশ্বত গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সাগরিকা নেটওয়ার্ক প্রাইভেট লিমিটেড। প্রথম সংস্থাটি মূলত পুরুলিয়ার আদ্রা ও রঘুনাথপুরে ঘাঁটি গেড়ে বিহার, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড থেকে কয়েক কোটি টাকা তুলেছে। আর বীরভূমের বোলপুর থেকে জাল বিছিয়ে প্রধানত ওডিশা থেকে টাকা তুলছিল সাগরিকা গোষ্ঠী। ডিরেক্টরেট অব ইকনমিক্যাল অফেন্স (ডিইও)-এর হাতে শাশ্বতের কর্ণধার সত্যরঞ্জন চৌধুরী ধরা পড়েছেন গুজরাতের অমদাবাদে। আর বোলপুরে হানা দেওয়া ওডিশা পুলিশ গ্রেফতার করেছে সাগরিকার অন্যতম কর্ণধার সঞ্জিত ভৌমিক এবং সংস্থার বর্ধমান শাখার কর্তা মিঠুন চট্টোপাধ্যায়কে।

ডিইও বা অর্থনৈতিক অপরাধ দমন বিভাগ সূত্রের খবর, শনিবার ভোরে অমদাবাদের আশ্রম রোডের একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করার পরে সত্যরঞ্জনকে সেখানকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলা হয়। পাঁচ দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে রবিবার তাঁকে বিমানে কলকাতায় আনা হয়েছে। শনিবার রাতে বোলপুরে স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে সাগরিকার দুই কর্তা সঞ্জিত ও মিঠুনকে পাকড়াও করে রবিবার সেখানকার আদালতে তোলে ওডিশা পুলিশ। আদালতের অনুমতি পেয়ে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় ওডিশায়।

তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিইও-র এডিজি বিদ্যাভূষণ দাসের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল মাসখানেক আগে আদ্রা ও রঘুনাথপুর এলাকায় শাশ্বত গোষ্ঠীর নার্সিংহোম এবং সিমেন্ট ও ছাই কারখানায় অভিযান চালিয়েছিল। আদ্রায় ওই সংস্থার নার্সিংহোম এবং রঘুনাথপুরের নন্দুকায় সংস্থার দু’টি কারখানা সিল করে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। গ্রেফতার হন সংস্থার দুই ডিরেক্টর মানস দাঁ ও প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু গা-ঢাকা দেন সংস্থার কর্ণধার সত্যরঞ্জন। ধৃত দুই ডিরেক্টরকে জেরা করে সত্যরঞ্জনের কয়েকটি আস্তানার হদিস মেলে। অগস্টে কয়েকটি রাজ্য ঘুরে সত্যরঞ্জন অমদাবাদের বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে থাকতে শুরু করেন। ‘‘অমদাবাদের কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন সত্যরঞ্জন। ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কারা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে,’’ বললেন তদন্তকারী সংস্থার ডিআইজি তন্ময় রায়চৌধুরী।

তদন্তকারীরা জানান, শাশ্বত গোষ্ঠী বিহার, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড থেকে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছে। ভুয়ো কারখানার নামে করে বিভিন্ন রাজ্য থেকে টাকা তুলত তারা। গত বছর এপ্রিলে কলকাতার লেক এলাকার এক বাসিন্দা তথা ওই সংস্থার আমানতকারী থানায় ওই লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি লগ্নির টাকা ফেরত পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। শুধু লেক থানা নয়, পুরুলিয়ার বহু এলাকা এবং ভিন্‌ রাজ্য থেকেও অভিযোগ আসতে থাকে। তার পরেই শুরু হয় তদন্ত।

একই ভাবে বোলপুরে অফিস খুলে পড়শি রাজ্য ওডিশায় জাল বিছিয়েছিল সাগরিকা। অভিযোগ, চড়া সুদের টোপ দিয়ে কটক শহর থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা তুলেছিল তারা। টাকা ফেরত না-পাওয়া লগ্নিকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে ওডিশা পুলিশের অর্থনৈতিক দুর্নীতি দমন শাখা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE