Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Bengaluru Cafe Blast

বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণ কাণ্ড: দু’জন নয়, তৃতীয় জঙ্গিও এসেছিল কলকাতায়, দাবি করলেন গোয়েন্দারা

বৃহস্পতিবার রাতে এসটিএফ এবং স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এনআইএ দিঘার একটি হোটেল থেকে ত্বহা এবং শাজিবকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার ট্রানজ়িট রিমান্ডে তাদের বেঙ্গালুরু নিয়ে যাওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার এনআইএ দিঘার একটি হোটেল থেকে ত্বহা এবং শাজিবকে গ্রেফতার করে।

বৃহস্পতিবার এনআইএ দিঘার একটি হোটেল থেকে ত্বহা এবং শাজিবকে গ্রেফতার করে। —ফাইল চিত্র ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৩
Share: Save:

দু’জন নয়, কলকাতায় এসেছিল বেঙ্গালুরু রামেশ্বরম কাফের বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন সন্দেহভাজন জঙ্গি। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, তৃতীয় জনের নাম মুজ়াম্মিল শরিফ। বিস্ফোরণের ঘটনায় তাকেই চেন্নাই থেকে প্রথম গ্রেফতার করেছিল এনআইএ। এ রাজ্যে এসে আবদুল মাথিন আহমেদ ত্বহা এবং মুসাভির হুসেন শাজিবকে আত্মগোপনের প্রয়োজনীয় টাকা দিয়ে ফিরে গিয়েছিল শরিফ। তার পরেই গ্রেফতার হয় সে। মুজ়াম্মিলের কাছ থেকেই ত্বহা এবং শাজিবের কথা জানা গিয়েছিল বলেও গোয়েন্দা সূত্রের দাবি।

গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, ত্বহা এবং শাজিব, দু’জনেই আইএস-এর ‘আল হিন্দ’ মডিউলের সদস্য। সন্দেহ করা হচ্ছে, সীমান্ত টপকে বাংলাদেশ পালানোর ছক ছিল ত্বহা এবং শাজিবের। তাই এ রাজ্যে এসেছিল। এখানে কে তাদের পালাতে সাহায্য করত সে বিষয়েও খোঁজ শুরু হয়েছে। ওই মডিউলের এখানে কোনও গোপন গোষ্ঠী কাজ করছে কি না, তাও খুঁজে দেখছেন গোয়েন্দারা।

বৃহস্পতিবার রাতে এসটিএফ এবং স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এনআইএ দিঘার একটি হোটেল থেকে ত্বহা এবং শাজিবকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার কলকাতার আদালত থেকে ট্রানজ়িট রিমান্ডে তাদের বেঙ্গালুরু নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার বেঙ্গালুরুর বিশেষ এনআইএ কোর্টে হাজির করানো হলে দু’জনকেই ১০ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এনআইএ জানিয়েছে, গত ১ মার্চের বিস্ফোরণে কাফেয় বিস্ফোরক রেখেছিল শাজিব। আর এই ঘটনার মূল চক্রী ছিল ত্বহা। তার নির্দেশেই মুজ়াম্মিল আইইডি তৈরির উপকরণ জোগাড় করেছিল। বিস্ফোরণের আগে দিন দশেক ওই কাফের চারপাশ জরিপও
করেছিল তারা।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ১০ মার্চ এ রাজ্যে এসেছিল শাজিব এবং ত্বহা। ১২ মার্চ থেকে ধর্মতলার দু’টি হোটেলে পরপর দুদিন আশ্রয় নেয় তারা। মাঝের দু’দিন তারা কোথায় ছিল তা এখনও জানা যায়নি। তবে কলকাতা থেকে পুরুলিয়া এবং দার্জিলিং গিয়েছিল। ২১ মার্চ ফিরে এসে খিদিরপুর এবং একবালপুরের দুটি অতিথিশালায় ছিল। এর মাঝে ২৪ মার্চ, এক দিনের জন্য তারা বেপাত্তা ছিল।

২১ মার্চ এক অটোচালকের সূত্রে তারা খিদিরপুরের একটি হোটেলের সন্ধান পেয়েছিল। এ দিন ফোনে রূপেশ সাউ নামে ওই অটোচালক বলেন, ‘‘২১ মার্চ বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ কালীঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে খিদিরপুর যাবে বলে দু’জন অটোয় উঠেছিল। সঙ্গে দুটো
কালো ব্যাগ ছিল। আমাকে বলেছিল যে থাকার ঘর লাগবে। আমি তখন বডিগার্ড লাইনস এলাকায় একটি গেস্ট হাউসে নিয়ে যাই। ওরা যে জঙ্গি কী ভাবে বুঝব?’’ প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ঘিঞ্জি এলাকা এবং নিয়মের কড়াকড়ি নেই, এমন সস্তার হোটেল বা লজকেই বেছে নিয়েছিল ওরা। বাইরে থেকে এসে কলকাতার এমন এলাকা খুঁজে পাওয়ার পিছনে স্থানীয় কোনও মদত আছে বলেও সন্দেহ করছে এনআইএ।

এক গোয়েন্দা কর্তা জানান, ২৮ মার্চ ত্বহা এবং শাজিবকে হাওড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে দিঘাগামী বাসে উঠতে দেখা গিয়েছিল। দিঘার যে হোটেল থেকে তারা ধরা পড়ে সেখানে ১০ এপ্রিল ঢুকেছিল। সে ক্ষেত্রে ২৮ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল, দু’জনে কোথায় ছিল তা এখনও পুলিশ জানতে পারেনি। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ১২ মার্চ চাঁদনি চকে মোবাইল সারিয়ে ছিল তারা। তবে দোকানে কে এসেছিল সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি তদন্তকারীরা। ওই মোবাইলের দোকানের কর্মী আবদুল রাব জানান, সে দিন সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ওই ব্যক্তি দোকানে ছিল। মোবাইলে কোনও সিম কার্ড ছিল না। সাউন্ডের সমস্যার জন্য ফোনটি দিয়ে যায়। ১৩ মার্চ এসে নিয়ে যায়। ফোনটি সারানো যায়নি। গোয়েন্দাদের খবর, দোকানে দাঁড়িয়েই মোবাইলে সিম ভরে ছিল। সেই সূত্র ধরেই দোকানের খোঁজ মিলেছে। তবে দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ মেলেনি।

গোয়েন্দাদের সূত্রের খবর, দুই ধৃতের আধার কার্ড-সহ পরিচয়পত্রে তেলুগু ভাষা আছে। তার থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশ বা তেলঙ্গানা থেকে সেগুলি তৈরি করা হয়েছিল। তেলঙ্গানা পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখা থেকেই প্রথম ওই দু’জনের দিঘায় গতিবিধির তথ্য জানা গিয়েছিল বলেও একটি সূত্রের দাবি। তার পর একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে দিঘার হোটেলটিকে নির্দিষ্ট ভাবে জানতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। এক গোয়েন্দা-কর্তা বলেন, ‘‘ধৃতদের কাছ থেকে ৩৫টি সিম পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলি খুঁটিয়ে খতিয়ে দেখা হলেই পুরো গতিবিধি জানা যাবে। মাঝেমধ্যে উধাও হয়ে গিয়ে তারা কোথায় ছিল তা-ও জানা যাবে।’’

এনআইএ সূত্রের খবর, কর্নাটকের মালাড় অঞ্চলের একটি শহর তিরথাহাল্লি নানা সময়ে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল। সেই সূত্রে ২০১৮-১৯ সালে এই শহরে পৌঁছয় এনআইএ। ২০১৯ নাগাদ ত্বহার নাম উঠে আসে রাজ্য পুলিশের সন্দেহের তালিকায়। ২০২২ সালের মেঙ্গালুরু বিস্ফোরণ, শিবমোগ্গায় বিস্ফোরণে জড়িত ছিল সে। দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের একাধিক মামলায় ‘কর্নেল’ নামে এক জনের নাম উঠে এসেছে। এই কর্নেলের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল ত্বহার। ধৃত দু’জনকে নিয়ে বিস্ফোরণস্থলে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে বলেও দাবি করেছে এনআইএ সূত্র।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata NIA arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy