সনৎ বাগ এবং ভীষ্মদেব নস্কর
ছ’বছরের ক্ষত জুড়োচ্ছে না কিছুতেই।
২০১৬ সালের সেই নোটবন্দির ঘোষণার পর নতুন টাকার জন্য ব্যাঙ্কের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিলেন হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বাসুদেবপুরের বছর পঞ্চান্নর সনৎ বাগ। একই ভাবে মারা গিয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির বছর ছিয়াত্তরের ভীষ্মদেব নস্করও। তাই ৮ তারিখটা যেন অভিশাপ হয়ে আছে এই দুই পরিবারের জীবনে।
পাঁচ মেয়ে আর দুই মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে সংসার ছিল উলুবেড়িয়ার সনৎ বাগের। ছোট মেয়ের বিয়ের জন্য নোটবন্দির সময় বারবার ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা পাননি তিনি। ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা শেষ হয় সনৎবাবুর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যর মৃত্যু কার্যত পথে বসিয়েছে তাঁর পরিবারকে।
স্বামীর মৃত্যুর পর ধারদেনা করে কোনওক্রমে ছোট মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন কল্পনাদেবী। তবে দুই ছেলের চিকিৎসা আর সংসার টানতে ভিক্ষাই তাঁর অবলম্বন। সনৎবাবুর মৃত্যুর পর মৃতদেহ ও কল্পনাদেবীকে নিয়ে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে ধর্না দিয়েছিল তৃণমূল। মিলেছিল পাশে থাকার অনেক প্রতিশ্রুতি। রাজ্য সরকার থেকে দু’লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে ঘর করে দেওয়া হয়েছিল। কল্পনাদেবীর ক্ষোভ, ‘‘শুরুতে সকলেই পাশে থাকার কথা বলে। এখন দুই ছেলে নিয়ে কী ভাবে দিন কাটে, কেউ জানতে চায় না। ছেলেদের প্রতিবন্ধী ভাতা মেলে না। বার্ধক্য ভাতার ওই হাজার টাকায় সংসার চলে? তাই ভিক্ষে করে কোনওক্রমে সংসার চালাই।’’
একই ভাবে অকূল পাথারে পড়েছিল রায়দিঘির প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক ভীষ্মদেববাবুর পরিবারও। ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর দীর্ঘ সময় ব্যাঙ্কের লাইনে রোদে দাঁড়িয়ে থাকার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তাঁর পেনশনের উপর নির্ভরশীল ছিল পরিবার। ভীষ্মদেববাবুর ছেলে পঙ্কজ বলেন, ‘‘আমি তেমন কিছু করতাম না। বাবার মৃত্যুর পর সংসার টানতে জমি বন্ধক দিয়েছিলাম। এখন একটা ছোট দোকানে কাজ করে সংসার টানি। সন্তানদের পড়াশোনা চালাতে হিমসিম খাই।’’ নোটবন্দির সময়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, কোনও উপার্জনকারী ব্যক্তি ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে মারা গেলে তাঁর পরিবারের সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। বহুবার প্রতিশ্রুতি মিললেও এখনও কোনও চাকরি পাননি পঙ্কজ।
কাঠের উনুনে ভাত আর শাক করতে করতে কল্পনাদেবীর প্রশ্ন, ‘‘নোটবন্দির কী সুবিধা আমাদের হল? উল্টে আমার সংসারটা ভেসে গেল!’’ পঙ্কজেরও প্রশ্ন, ‘‘কাগজে পড়ি, বড় বড় ব্যবসায়ীরা দেশের টাকা নিয়ে বিদেশে লুকিয়ে বসে আছে। তাদের তো কই ধরা যায় না! নোটবন্দির বলি আমাদের মতো চুনোপুঁটিরাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy