(বাঁ দিকে) নদিয়ার আসাননগরে বিকাশ মণ্ডল এবং ঠাকুরনগরে শান্তিলতা বিশ্বাস (ডান দিকে)। ছবি: সাগর হালদার এবং নির্মাল্য প্রামাণিক।
বাংলায় লোকসভা ভোট শেষ হতে এখনও এক দফা বাকি। তার আগেই রাজ্যে বসবাস করা কয়েক জনকে নাগরিকত্বের শংসাপত্র দিয়ে দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বুধবার রাতেই তাঁরা ই-মেল মারফত তা পেয়ে গিয়েছেন। যদিও তাঁরা আদৌ ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে শরণার্থী কি না, সেই প্রশ্ন রয়েইছে। এত দিন পর্যন্ত তাঁদের এ দেশের আধার-ভোটার কার্ডও ছিল। ভোটও দিয়েছেন। সে সবই বা কী করে সম্ভব হয়েছে, তার সদুত্তর মেলেনি।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রথম দফায় রাজ্যের যে আট জন ‘নাগরিকত্ব’ পেলেন, তাঁদের অধিকাংশই নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। ওই আট জনের অন্যতম, নদিয়ার পায়রাডাঙার বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডল জানান, ২০১২ সালের মে মাসে এক রাতে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজর ফাঁকি দিয়ে তিনি ভারতে ঢোকেন। আশ্রয় নেন ভীমপুর থানার আসাননগর-পায়রাডাঙা এলাকায় মাসির বাড়িতে। ওই বছরই ‘লোক ধরে’ রেশন কার্ড হয়ে যায় তাঁদের। ২০১৫ সাল নাগাদ আধার, ভোটার এবং প্যান কার্ডও হয়ে যায়। সেই বছরেই পায়রাডাঙায় জমি কিনে বাড়ি তৈরি শুরু করে দেন। সাইবার কাফে খোলেন। ২০১৮ সালে ওই এলাকারই বাসিন্দা সাথী বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সাথীও একই ভাবে বাবা-মায়ের সঙ্গে পায়রাডাঙায় এসে থাকতে শুরু করেছিলেন।
বিকাশের বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার শৈল্যকুপা থানার গোপালপুর এলাকায়। তাঁর কথায়, “এখানে যা জমি-জায়গা ছিল, বেশির ভাগটাই বিক্রি করে দিয়েছি।” ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার হয়েই এ ভাবে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন? বিকাশ বলেন, “সরাসরি উৎপীড়নের শিকার হইনি। কিন্তু সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হত।”
নিয়ম অনুযায়ী, ‘ধর্মীয় শরণার্থী’ বলে ভারতে আশ্রয়প্রার্থী হলে তবেই সিএএ মারফত নাগরিকত্ব পাওয়ার কথা। তবে বিকাশ জানান, সেই নিয়ম জানা না থাকায় তিনি ‘শরণার্থী’ হিসাবে নিজের পরিচয় দেননি। গত ২৭ মে তাঁকে কৃষ্ণনগরে ডাক বিভাগে শুনানির জন্য ডাকা হয়। নথি হিসাবে তিনি তাঁর বাংলাদেশের জন্ম-শংসাপত্র, ২০১৪ সালের আগে আসার প্রমাণ হিসাবে রেশন কার্ড, হিন্দুত্বের প্রমাণস্বরূপ মায়াপুরের এক আশ্রমের ‘প্রভু’র দেওয়া শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন। দু’দিনের মধ্যে ই-মেল চলে এসেছে। এ বার বাবা-মা ও স্ত্রীর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন বলেও বিকাশ জানান। সব কার্ডই আছে। তা হলে সিএএ-তে আবেদন করলেন কেন? বিকাশ বলেন, “২০১৬ থেকে ভোট দিয়ে আসছি। কিন্তু কখনও সরাসরি কোনও দল করিনি। সব সময় মনে হত, যদি ধরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়?”
একই সঙ্গে নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটার শান্তিলতা বিশ্বাস, মধ্যমগ্রামের অনির্বাণ নন্দীরাও। গাইঘাটার ঠাকুরনগরের বাসিন্দা, বছর পঞ্চাশের শান্তিলতা ও তাঁর স্বামী তারক বিশ্বাস মাস দেড়েক আগে হৃদয়পুরের এক সাইবার কাফে থেকে অনলাইন আবেদন করেন। বারাসত মুখ্য ডাকঘরে শুনানি হয়।
বিকাশের মতোই শান্তিলতাদেরও ভোটার, আধার, রেশন— তিন কার্ডই রয়েছে। ৩৭ বছর আগে খুলনা ছেড়ে আসা তারকের দাবি, “ওখানে আমাদের বাড়িতে হামলা হয়েছিল। তার পরেই এ দেশে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিই।” যদিও কখনও ‘শরণার্থী’ হিসাবে আবেদন করেননি। শান্তিলতা শংসাপত্র পেলেও তারক এখনও তা পাননি। তবে তাঁর কথায়, “শুনানির সময়ে অফিসার বলেছেন, বাংলাদেশে জন্মের নথি জমা দিলেই নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেয়ে যাব। সেটা জমা দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বিদায়ী কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এ দিন বলেন, “উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলার অনেক উদ্বাস্তু মানুষ ইতিমধ্যে নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেয়েছেন। বাকিরাও পাবেন। প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দেন, তা পালন করেন।” নদিয়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস পাল্টা বলেন, “যাদের ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা নাগরিক ছিলেন না? নাগরিকদের আবার কী নাগরিকত্ব দিচ্ছে? বিজেপি আসলে মানুষকে প্রতারিত করতে চাইছে।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, “পাঁচ বছর অপেক্ষা করে পশ্চিমবঙ্গের শেষ দফা নির্বাচনের আগেই এটা করতে হল কেন? বিজেপি কাকে খুশি করতে চাইছে আর কাকে বোকা বানাতে চাইছে?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy