গত বছর শেষ পর্যন্ত পুজো হলেও তেমন ধূমধাম হয়নি। — ফাইল চিত্র।
প্রথম বারের পরে দ্বিতীয় বার দুর্গাপুজো নিয়েই অনিশ্চয়তা ছিল। শেষমেশ সে বার হলেও তৃতীয় বারে ফের অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। অনেক আলোচনার পরে ঠিক হয়, হিন্দু রীতি মেনে তৃতীয় বারের পুজোতেই ‘উদ্যাপন’ হয়ে যাক। সে ভাবেই গত বছরের পুজো দিয়েই শেষ হওয়ার কথা ছিল রাজ্য বিজেপির দুর্গোৎসব। কিন্তু শেষ হয়েও হইল না শেষ। গত তিন বছরের মতো এ বারও পুজো হবে বিধাননগরের ‘পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র’ (ইজ়েডসিসি)-তে। তবে সেটা বিজেপির নামে নয়। দলের উদ্যোগে না-হলেও দলীয় কর্মীদের আয়োজনে সেই পুজোর পরিচালকেরা নিজেদের সংগঠনের পরিচয় দিচ্ছেন ‘ভারতীয় সংস্কৃতি মঞ্চ’ নামে।
পুজোর জায়গা এক থাকলেও এ পুজো যে বিজেপির নয়, তা স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। গত ২৭ সেপ্টেম্বরে পুজোর খুঁটি পুজোয় আমন্ত্রিত থাকলেও যাননি সুকান্ত। খুবই চুপচাপ সেই পুজো হয়। সুকান্ত বলেন, ‘‘দলের পুজো নয়। তবে দলের কয়েক জন কার্যকর্তার উদ্যোগেই হচ্ছে। এর বেশি কিছু নয়।’’ তবে সেই পুজোয় তিনি যাবেন কি না তা নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করেননি সুকান্ত। বলেন, ‘‘পুজোর সময় কোথায় থাকব, কী কর্মসূচি হবে, সেটা এখনও ঠিক হয়নি।’’
২০২০ সালে বিজেপির পুজোর শুরুটা হয়েছিল তৃণমূল থেকে আসা এবং তৃণমূলে ফিরে যাওয়া নেতাদের হাত ধরে। প্রধান উদ্যোগী ছিলেন তখন বিজেপিতে থাকা সব্যসাচী দত্ত এবং মুকুল রায়। দু’জনেই বিধানসভা ভোটের পর পরই তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। ওই দুই নেতাকে পুজো করার ছাড়পত্র দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির তৎকালীন পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনিও আর বাংলার দায়িত্বে নেই। বিধানসভা নির্বাচনের আগে পুজো ঘিরে বিজেপির উত্তেজনা ছিল চরমে। সে বার ভার্চুয়াল মাধ্যমে পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে স্বপ্নপূরণ না হওয়া নমোর দল বিজেপি ২০২১ সালে নমো-নমো করে পুজো সারে। সেটুকু হওয়া নিয়েও একটা সময় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। অনেক বিতর্কও হয়। সব শেষে বিতর্ক চাপা দিতেই পুজো হয়। প্রথম বারের মতো সঙ্কল্প হয় রাজ্য নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে। দিলীপ ঘোষ প্রথম থেকেই দলীয় পুজোর বিরোধী ছিলেন। রাজ্য সভাপতি থাকার সময়ে তাঁর মত ছিল, পুজো করা রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। দিলীপ বিধাননগরের পুজোয় সে ভাবে যোগও দেননি।
একই রকম মত বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্তেরও। ২০২২ সালেও পুজো হবে কি হবে না প্রশ্ন তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন ওঠে হিন্দু রীতি নিয়ে। হিন্দু লোকাচারে এমন রীতি রয়েছে যে, কোনও ব্রত বা পুজো এক বার পালন করলে পর পর তিন বার করতেই হয়। এটাকে ‘উদ্যাপন’ বলা হয়। হিন্দুত্বের রাজনীতি করা বিজেপি শিবির সেই রীতি ভাঙতে চায় না বলেই উৎসবের বদলে উদ্যাপনের রীতি পালনের তাগিদে পুজো হয় গত বছর। আকর্ষণ বাড়াতে পুজোর অন্যতম পুরহিত ছিলেন এক মহিলা। সুকান্তের জেলার মহিলা পুরোহিত সুলতা মণ্ডল ছিলেন পুজোয়। তবে ২০২২ সালের দশমীতেই দলীয় পুজোর স্থায়ী ‘বিসর্জন’ ঠিক হয়ে যায়।
এই বছর বিজেপির পক্ষে ঠিক করা হয়েছে, দলের পুজোর বদলে দলের নেতা, বিধায়ক, সাংসদরা নিজের নিজের এলাকায় পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকুন। জনসংযোগে থাকুন পুজোর সময়ে। তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের প্রায় সকলেরই পুজো রয়েছে। সেখানে বিজেপি নেতার পুজো বলতে কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে সজল ঘোষের পুজো। তাই রাজ্যে কমপক্ষে ১০০টি পুজোর সঙ্গে দলীয় নেতারা যাতে যুক্ত থাকতে পারেন, সে উদ্যোগও নিয়েছে বিজেপি।
সে সবের মধ্যেও কলকাতায় দলের আলাদা করে পুজোর উদ্যোগ নিতে চাইলে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়ে দেয়, অন্য নামে সে পুজো করতে হবে। সেই মতোই ‘ভারতীয় সংস্কৃতি মঞ্চ’-র নামে হচ্ছে পুজো। যাতে যুক্ত রয়েছেন দলের সাংস্কৃতিক শাখার নেতারা। এই শাখার প্রধান অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, ‘‘এ বারের পুজো দল বা দলের সাংস্কৃতিক শাখা করছে না। বিজেপির সাধারণ কিছু কর্মী নিজেদের ব্যাক্তিগত উদ্যোগে করছেন। তবে সাংস্কৃতিক শাখার কয়েকজন কর্মীও যুক্ত রয়েছেন।’’
বিজেপির সাংস্কৃতিক শাখার সদস্য রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা খুবই ছোট আয়োজনে পুজো করছি। তবে তার মধ্যেও একটা থিম রয়েছে। নারী ক্ষমতায়নের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। সেই মতো মণ্ডপ সাজানো হবে। সেই সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক শাখারই সদস্য শিল্পী শীর্ষ আচার্য মূর্তি তৈরি করছেন।’’ গত তিন বছর বিজেপির উদ্যোগে যে পুজো হয়েছে, তাতে সাবেক দুর্গা প্রতিমা ছিল। এ বার তা নয়। কেমন হবে সেই প্রতিমা, তা আপাতত গোপন রাখতে চাইছেন উদ্যোক্তরা। সব মিলিয়ে পুজো হচ্ছে। উমা আসছেন অন্য রূপে, অন্য নামে। তবে ঠিকানা একই থাকছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy