প্রতিবাদী: বাড়িতে শান্তি চক্রবর্তী। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ময়দান তাঁকে চেনে ‘মোহনবাগানের দিদিমা’ বলে। সবুজ-মেরুন মহিলা সমর্থকদের দল ‘লেডি মেরিনার্স’-এর মুখও তিনি।
সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী মিছিলেও অন্যতম মুখ ছিলেন ৭৭ পেরোনো সেই বৃদ্ধা শান্তি চক্রবর্তী। অশক্ত শরীরে গোটা রাস্তা হেঁটেছেন। ‘জয় মোহনবাগান’ বলতে অভ্যস্ত গলায় স্লোগান তুলেছেন ‘জয় বাংলা’।
মোহনবাগানের পাড়া বলে পরিচিত বৌবাজারের ঠাকুরদাস পালিত লেনের শরিকি বাড়ির দোতলায় মেয়ে, নাতনি ও ছেলেকে নিয়ে থাকেন শান্তিদেবী। স্বামী মারা গিয়েছেন। তিনি ছিলেন রেলের কর্মী। মূলত স্বামীর পেনশনের টাকাতেই সংসার চলে। আদ্যন্ত মোহনবাগানি ও কংগ্রেসি পরিবারে বেড়ে ওঠা শান্তিদেবী ২০১৬ সাল পর্যন্তও ঘর-গেরস্থালি নিয়ে থাকতেন। ওই বছর ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহনবাগান। শান্তিদেবী জানান, সে বছরই নাতনি (মেয়ের মেয়ে) অ্যাঞ্জেলা গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে প্রথম মোহনবাগান মাঠে যান তিনি। কারণ ছিল, নাতনির দিকে নজর রাখা। এখন অবশ্য তিনিই নাতনিকে মাঠে যাওয়ার জন্য জোর করেন।
মিছিলে কবে থেকে?
একটু ভেবে বৃদ্ধা জানালেন, পাড়ার তৃণমূল নেতাদের অনুরোধে এর আগে বেশ কয়েক বার মিছিলে গেলেও সোমবারের মিছিলে যাওয়া পুরোটাই ‘বিবেকের ডাকে’। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ঘটি। মোহনবাগানি। বড় ম্যাচে মোহনবাগান জিতলে বাড়িতে চিংড়ি রান্না হয়। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে লড়াইটা মাঠেই শেষ। এনআরসি-বিরোধী মিছিলে হেঁটেছি আপামর বাঙালির বাঁচার লড়াইয়ে সঙ্গী হব বলে।’’ একই সঙ্গে শান্তিদেবীর প্রশ্ন, এত দিন যাঁরা ভারতকে নিজের দেশ বলে জেনে এসেছেন, প্রয়োজনীয় নথি না থাকলে তাঁরা দেশহীন হয়ে যাবেন? এটা কী ধরনের আইন? বৃদ্ধা বলছেন, ‘‘এখন যদি বিধানচন্দ্র রায় বেঁচে থাকতেন, নথি দেখাতে না পারলে তাঁকেও দেশ ছাড়তে হত? একই পরিণতি কি হত রবীন্দ্রনাথেরও?’’
আরও পড়ুন: মিছিলের জেরে জট, গাড়ি ঘুরিয়ে সামাল দিল পুলিশ
শান্তিদেবীর ছেলে শুভেন্দু চক্রবর্তী ও মেয়ে শর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করলেও তাঁদের মা কখনও সক্রিয় রাজনীতি করেননি। তাই সোমবার মিছিলে যাওয়ার কথা বাড়িতে বলার পরে তাঁরা প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করছিলেন। তা ছাড়া, মিছিলে প্রচুর ভিড় হবে। শান্তিদেবীর শরীরও ভাল নয়। তবে বৃদ্ধার জেদের কাছে হার মানেন ছেলে-মেয়েরা। শর্মিলা বলছিলেন, ‘‘মায়ের উৎসাহ দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়ে যাই। মা আমার অনুপ্রেরণা। তাই মাকে বলেছি, যখন মাঠে বা মিছিলে যাবে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডটা সঙ্গে রেখো।’’
আরও পড়ুন: বিক্ষোভের জেরে রোগী কমল ছ’হাজার!
আধো-অন্ধকার ঘরে ঢোকার মুখে কাঠের দরজায় জ্বলজ্বল করছে পালতোলা নৌকার লোগো। অগোছালো তক্তপোশে গুছিয়ে রাখা ‘নো সিএবি, নো এনআরসি’-র লম্বা ব্যানার। কথার মাঝেই সেটা খুলে গলায় পরে দরজার সামনে গিয়ে শান্তিদেবী বলে উঠলেন, ‘‘মাঠ আমায় জীবনকে নতুন করে চিনিয়েছে। তাই যত দিন হাঁটতে পারব, মাঠে যাব।’’
একটু থেমে বৃদ্ধা জুড়লেন, ‘‘এটা যে আমার দেশ, সেটা প্রমাণের প্রয়োজন পড়বে কেন? আমরা যাঁরা এই বাংলায়, এই ভারতে থাকি, দেশ তো সকলের। তাই সকলের নিরাপত্তার জন্যই মিছিলে হেঁটেছি। আবার হাঁটব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy