দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে অখুশি বিজেপির পিঙ্কি বর্মণ। — ফাইল চিত্র।
যাদবপুরকাণ্ডে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করতে ‘হিজড়া’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন দিলীপ ঘোষ। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির এমন মন্তব্যে আঘাত পেয়েছেন বিজেপিরই কর্মী পিঙ্কি বর্মণ। রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ায় একটি দলীয় সভা থেকে মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘কাশ্মীর ঠান্ডা করে দেওয়া হয়েছে! আর যাদবপুর ইউনিভার্সিটি তো কোন ছার! বুটের লাথি মেরে জেএনইউ ঠান্ডা করে দেওয়া হয়েছে।’’ এর পর তৃণমূলকে নিশানা করে দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘এই হিজড়া সরকারের দম নাই। এরা মা-বোনের ইজ্জত, ছেলেমেয়ের প্রাণ নিয়ে টানাটানি করে।’’
রাজ্য সরকারকে ‘ভিতু’ এবং ‘নিষ্কর্মা’ বোঝাতেই দিলীপ এমন মন্তব্য করে থাকবেন বলে মনে করছে রাজ্য বিজেপির একটি অংশ। কিন্তু পিঙ্কির সেখানেই আপত্তি! সোমবার তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘হিজড়া মানেই ভিতু, কোনও কাজের নয়— এমন একটা ধারণা সমাজের রয়েছে। তাই আমাদের নিয়ে উপমা দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা একেবারেই ঠিক নয়। আমরা হিজড়া সমাজের মানুষেরা অবশ্য সেগুলো গায়ে মাখি না। মানে গুরুত্ব দিই না। তবে এমন ধারণা থাকাও ঠিক নয়।’’
তিনি যে দল করেন, তার নেতাই তো রবিবার রাজ্য সরকারকে ‘হিজড়া’ বলে আখ্যা দিয়েছেন?
পিঙ্কি বলেন, ‘‘দিলীপদা ওই রকম সহজ কথা বলেন। তিনি কী ভেবে কী বলেছেন আমি জানি না। তবে এটা ঠিক যে, প্রচলিত ধারণা থেকে এমন ভাবে আমাদের হেয় করা ঠিক নয়। আমি তো বিজেপিই করি। এখানে কি ভয় থাকলে সেটা করা যায়? অনেকে ব্যঙ্গ করে ‘হাতে চুড়ি পরে থাকা’ বলেন। আমি তো হাতে চুড়িও পরি আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে রাজনীতিও করি।’’
পিঙ্কির ওই বক্তব্যের পরে দিলীপকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি তো কাউকে বা কোনও সমাজকে আক্রমণ করতে বা হেয় করতে কথাটা বলিনি। আমি প্রচলিত কথাটাই বলেছি। আমি বোঝাতে চেয়েছি, এই সরকার ছাত্রদের সুরক্ষা দিতেও পারে না।’’ একই সঙ্গে দিলীপের দাবি, তাঁর মন্তব্যকে এত ‘গুরুত্ব’ দেওয়া ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ কী শব্দ ব্যবহার করেছে, তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে দেখা উচিত যাদবপুরে কেন এমন অঘটন ঘটল। কেন সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি আনতে পারে না। দেশের আর কোথাও তো এ সব হয় না। দিলীপ ঘোষের শব্দ ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করা মানে এই সরকারকেই সমর্থন দেওয়া।’’
দলে খুব পুরনো না হলেও গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোচবিহার জেলা পরিষদে প্রার্থী হয়েছিলেন পিঙ্কি। ভোটে জিততে পারেননি। তবে এখন থেকেই লোকসভা নির্বাচনের জন্য দলের সাংগঠনিক কাজ শুরু করে দিয়েছেন মাথাভাঙার এই বাসিন্দা। যিনি বৃহন্নলার পেশা বজায় রেখেই নানা সামাজিক কাজকর্ম করেন। সেই সূত্রেই বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ।
তবে পিঙ্কি রাজনীতির পাশাপাশি আরও অনেক কাজ করেন। বাড়ি বাড়ি ‘ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে’ খোঁজ নিতে যাওয়াই পিঙ্কির প্রধান কাজ হলেও ‘মনসার গান’-এর গায়িকা হিসাবে এলাকায় সুনাম রয়েছে তাঁর। সেই সব থেকে আয়ের টাকায় প্রথমে অনাথ বৃহন্নলাদের জন্য একটি আশ্রম তৈরি করেছেন। নাম দিয়েছেন, ‘জীবন গাড়ি ফেরিওয়ালা’। বৈরাগীর হাট এলাকায় ওই আশ্রমের মধ্যেই এখন আবার একটা আলাদা অংশ জুড়েছেন। সেখানে সাধারণ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য একটি আশ্রম বানিয়েছেন পিঙ্কি। নাম দিয়েছেন ‘মা-বাবাদের আশ্রম।’ পাশেই তৈরি করছেন বিষ্ণু মন্দির।
সেই পিঙ্কিকে দিলীপের মন্তব্যে কিছুটা হলেও অভিমানী শোনাচ্ছে। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে সমাজের মিলমিশ কম। তাই আমাদের খবর কেউ রাখেন না। জানেনই না আমরা কত কত কাজ করি। সমাজে তৃতীয় পরিচয় নিয়ে জীবনধারণ করতেও কত সাহস লাগে সেটাও অজানা। তাই ভিতু বোঝাতে ‘হিজড়া’ বলে সবাই। আর আমি ‘হিজড়া’ শুনলে গর্ববোধ করি। কারণ, আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy