— প্রতীকী চিত্র।
বাজেট তথ্যই বলছে—রাজ্যের যত্র আয়, তত্র ব্যয়। তার উপর রয়েছে সামাজিক অনুদান প্রকল্পগুলির বিপুল চাপ। সে সব সামলে আবাস প্রকল্পের পুরো আর্থিক ভার সামলানো রাজ্যের পক্ষে যে কঠিন, তা নিয়ে তেমন দ্বিমত নেই প্রশাসনের অন্দরে। আধিকারিকদের একাংশের কৌতূহল, ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই কি এই ‘ঝুঁকি’ নিতে চাইল নবান্ন!
অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করেন, মানুষের হাতে নগদ পৌঁছে দিতে পারলে তা আখেরে অর্থনীতির পক্ষে লাভবান হয়। কারণ, সেই অর্থ চাহিদার জন্ম দেয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে চাকা ঘোরে অর্থনীতির। কিন্তু মূলধনী খরচ বা সম্পদ তৈরি (প্রধানত পরিকাঠামো তৈরি), শিল্পায়ন, নিজস্ব আয় বৃদ্ধি, প্রকৃত গুণমানের কর্মসংস্থানের সুযোগ ছাড়া শুধুমাত্র আর্থিক অনুদান দিলে তা অর্থনীতির উপর ইতিবাচক প্রভাব যে ফেলে না, তা-ও মনে করেন আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে। সংশ্লিষ্টদের অনেকেই জানাচ্ছেন, এ রাজ্যে নিজস্ব আয়ের উৎস ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। বড় মাপের উল্লেখযোগ্য শিল্প বিনিয়োগও এখনও অধরা। তাই এখনকার পথ ভবিষ্যতের জন্য কতটা যথাযথ, সেই চর্চাও প্রশাসনের অন্দরে অব্যহত। যদিও প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তার দাবি, ‘‘আবাস, একশো দিনের প্রকল্প ইত্যাদিতে সব ধরনের সুপারিশ কার্যকর করার পরেও কেন্দ্রই তো বরাদ্দ বন্ধ রেখেছে। অথচ মানুষের মাথায় ছাদ এবং কাজ দরকার। ফলে রাজ্যের কাছে আর তো কোনও উপায় ছিল না।’’
লোকসভা হোক বা বিধানসভা—প্রায় প্রতিটা ভোটের আগেই উপভোক্তাদের আর্থিক সুবিধাদানে কিছু না কিছু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। যেমন লোকসভা ভোটের কিছু সময় আগেই লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপভোক্তাদের আর্থিক অনুদান বেড়েছে। এ ভাবেই কৃষকবন্ধু, পড়ুয়া ঋণ কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী ইত্যাদি অনেক প্রকল্পই ঘোষিত বা তার পরিধি বৃদ্ধি হয়েছিল নির্বাচনকে সামনে রেখে। ২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, সেই ভোট মাথায় রেখে রাজ্যের প্রায় ১১ লক্ষ (প্রধানত গ্রামীণ) পরিবারের বাড়ি তৈরির আর্থিক ভার নিয়েছে রাজ্য।
রাজ্যসভার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘সম্পদ-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নিজস্ব আয় বৃদ্ধির দিকে নজর দিলে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। এ রাজ্যে তা ঠিক উল্টো। শুধু ব্যয়, আয়ের সংস্থান নেই। তবু ২০২৬ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ঘোষণা করছে রাজ্য সরকার। তা অনেকটা সেফটি ভালভের মতো।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘প্রতিটা ভোটের আগে এই রাজ্য সরকার তথা শাসক দল একটা করে প্রকল্প নেয়। এতে মানুষের মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। উপভোক্তা একটা শ্রেণি তৈরি করা হচ্ছে। নাগরিকের অধিকারের জায়গাকে অনুগৃহীতের পর্যায়ে নামিয়ে আনা হচ্ছে। সামাজিক উন্নয়নের ভাবনার সঙ্গে এটা মেলে না।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তীর মতে, ‘‘এতে কিছু মানুষের কাছে আর্থিক সুবিধা পৌঁছচ্ছে হয়তো। কিন্তু দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না, আবার মানুষের জন্য আয়ের রাস্তাওখুলছে না।’’
যদিও পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের কথায়, “বাজেট তো মানুষের জন্যই। সারা বছরই কিছু না কিছু করা হচ্ছে। নির্বাচন তো থাকবেই। তাতে অসুবিধা কোথায়? কেন্দ্র তো সব সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে, আমরা তা তো করছি না!” তাঁর প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীই তো বলেছিলেন, প্রত্যেকের মাথায় ছাদ হবে। তার কী হল?’’
চলতি বছরের বাজেটে যে তথ্য সরকার তুলে ধরেছিল, তাতে রাজ্যের মোট আয় হওয়ার সম্ভাবনা ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। খরচ ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। ওই তথ্য বলছে, রাজ্যের রাজস্ব ঘাটতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ। লক্ষ্মীর ভান্ডার, কৃষকবন্ধু, কন্যাশ্রী এবং রূপশ্রী প্রকল্পগুলির সম্মিলিত খরচের বহর রাজ্যের নিজস্ব আয়ের একটা বড় অংশ দখল করেছে। তার সঙ্গে রয়েছে বেতন, পেনশন, পুরনো ঋণের সুদ, অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যয়ের চাপ। এই অবস্থায় খরচের বহর সরকার কী ভাবে সামলাবে? যদিও প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তার দাবি, ‘‘রাজ্যের আর্থিক ব্যবস্থা রয়েছে ঠিক পথেই। সব দিক খতিয়ে দেখেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy