দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। কালীঘাট স্কাইওয়াক তৈরির জন্য উচ্ছেদ হওয়া রিফিউজি হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা পুনর্বাসন পেলেন চার বছর পর। কলকাতা পুরসভার প্রতিশ্রুতি ছিল, ১৮ মাসের মধ্যে নতুন মার্কেট তৈরি করে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই সময়সীমা অতিক্রম করে প্রায় চার বছর পর ব্যবসায়ীরা পেলেন তাঁদের নতুন ঠিকানা। বুধবার কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ব্যবসায়ীদের হাতে দোকানের চাবি তুলে দেওয়া হল। ২০২১ সালের শুরুতে কালীঘাট হকার্স কর্নারের ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী ভাবে যতীন দাস (হাজরা) পার্কে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। নতুন করে দোকান নির্মাণ করে সেখানে পাঠানো হয় হকারদের। ওই বছরই কালীঘাট স্কাইওয়াক নির্মাণের পাশাপাশি নতুন হকার্স মার্কেট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পুরসভার উদ্যোগে কালীঘাটে তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই বহুতল হকার্স মার্কেট। বুধবার সেই মার্কেটের ১৭৫ জন ব্যবসায়ীর হাতে চাবি তুলে দেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা রাসবিহারীর বিধায়ক দেবাশিস কুমার ও স্থানীয় ৮৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীরকুমার মুখোপাধ্যায়।
প্রায় ১৫,০০০ বর্গফুটের বেশি জায়গার উপর তৈরি এই পাঁচতলা ভবনে আধুনিক পরিকাঠামো রয়েছে। একতলা ও দোতলায় রয়েছে পুরসভার অফিস এবং কিছু হকারের দোকান। তিনতলা ও চারতলায় গড়ে উঠেছে সম্পূর্ণ হকার্স মার্কেট। ভবনের পাঁচতলায় থাকবে কলকাতা পুরসভার আলোক বিভাগের দফতর। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আধুনিক মার্কেট পেলেও ব্যবসায়ীরা কিছুটা চিন্তিত ভবিষ্যৎ নিয়ে। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই প্রশ্ন, আগের মতো বেচাকেনা হবে তো?
এক ব্যবসায়ীর কথায়, “আগে কালীঘাট মন্দির সংলগ্ন এলাকায় আমাদের দোকান ছিল। ফলে প্রচুর ক্রেতার আনাগোনা ছিল। এখন নতুন মার্কেট তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানুষ এখানে আসবে তো? ব্যবসা কি আগের মতো হবে?” ব্যবসায়ীদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, নতুন জায়গায় বাণিজ্য জমাতে কিছুটা সময় লাগবে।
তবে পুরসভার পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, হকারদের ব্যবসার উন্নতির জন্য সমস্ত রকম সহায়তা করা হবে। স্থানীয় কাউন্সিলর প্রবীর বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুরসভা মিলে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দিয়েছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্যবসা নির্ভর করে ব্যবসায়ীরা কী ভাবে ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবহার করছেন এবং কেমন মানের পণ্য বা দ্রব্য তাঁরা বিক্রি করছেন, তার উপর। সাধারণ মানুষ যদি ন্যায্য দামে ভাল জিনিস পান, তবে অবশ্যই নতুন এসি মার্কেট থেকে কেনাকাটা করবেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে মানবিক সরকার রয়েছে। বুলডোজ়ার দিয়ে সব কিছু গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে, এমন ভাবনা আমাদের নেই। যখন পুনর্বাসনের জন্য তাঁদের হাজরা পার্কে পাঠানো হয়েছিল তখনও অনেকের মনে ক্ষোভ জন্মেছিল। এ বারও তেমনটাই হচ্ছে, এক বার মার্কেট চালু হয়ে গেলে আর ব্যবসায়ীদের মনে কোনও ক্ষোভ থাকবে না বলেই আমি বিশ্বাস করি।"
এ দিকে, ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ দিনের দাবির পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছে পুরসভাও। পুরসভার এক আধিকারিকের মতে, “নতুন মার্কেটটি আধুনিক মানের এবং এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকায় ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মার্কেটও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।”