প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির ইডির মামলায় রাজসাক্ষী হতে ইচ্ছুক অভিযুক্ত কল্যাণময় ভট্টাচার্যের গোপন জবানবন্দি আগামী সপ্তাহে নথিভুক্ত হতে পারে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামাই কল্যাণময়। রাজসাক্ষী হতে চেয়ে পার্থর জামাইয়ের আবেদন বিচার ভবনের সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক গ্রহণ করেছেন বলে আদালত সূত্রের খবর।
১৮ মার্চ ওই মামলার শুনানি রয়েছে বলে আদালত সূত্রে খবর। পার্থর আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী শনিবার বলেন, “কল্যাণময় একজন অধ্যাপক। শিক্ষিত ব্যক্তি হয়েও কী ভাবে তিনি এত বড় দুর্নীতিতে জড়ালেন, তা তো স্পষ্ট করেননি। অভিযুক্ত হওয়ার পরে তিনি এখন সব দোষ শ্বশুর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপরে চাপিয়ে গোপন জবানবন্দি দিতে চাইছেন এবং রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছেন। কিন্তু অতীতে ইডির জিজ্ঞাসাবাদের সময় লিখিত বয়ানে ওই ব্যক্তি গুরুতর তথ্য গোপন করেছিলেন। তা তো আরও বড় অপরাধ। ১৮ মার্চের শুনানিতে সব আদালতের সামনে পেশ করা হবে।”
কল্যাণময়ের রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন গ্রহণ করলেও বিচারকের নির্দেশ, নতুন তথ্য পেশ করতে না পারলে ওই আবেদন খারিজ করে তাঁকে অভিযুক্তই ধরা হবে। বিচারক কলকাতা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কল্যাণময়ের গোপন জবানবন্দি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রে খবর।
কল্যাণময়কে অভিযুক্ত দায়ের করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। তিনি পার্থের স্ত্রী বাবলি চট্টোপাধ্যায়ের নামে ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য। বাবলি মারা যাওয়ার পরে ওই 'বাবলি চ্যাটার্জি ফাউন্ডেশন মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ খোলা হয়। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, বাবলির নামে ট্রাস্ট এবং কল্যাণময়ের অধীনে কয়েকটি সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করা হয়েছিল। কল্যাণময়ের একাধিক সংস্থার বিরুদ্ধেও চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। ইডির মামলায় জামিন পেলেও পার্থ সিবিআইয়ের মামলায় জেল হেফাজতে। ওই মামলার বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, ইডির জিজ্ঞাসাবাদে কল্যাণময় লিখিতভাবে জানান, কলকাতার পাটুলি থানা এলাকায় কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে ওই ট্রাস্টের হয়ে জমি কেনা হয়েছিল। জমি কেনার কয়েক কোটি নগদ টাকা তাঁর শ্বশুর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর নাকতলার বাড়ি থেকে কল্যাণময় নেন বলেও দাবি। ওই ট্রাস্টের মাধ্যমে একটি স্কুল তৈরি করা হয়, যার অন্যতম ডিরেক্টর কল্যাণময় ছিলেন বলেও ইডির দাবি। ‘শ্বশুরের নির্দেশ অনুযায়ী’, তিনি সব কাজ করেছিলেন বলেই তদন্তকারী সংস্থার কাছে কল্যাণময়ের লিখিত বয়ান রয়েছে। আইনজীবীদের একাংশের মতে, কেউ রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করতেই পারেন। কিন্তু অপরাধের সঙ্গে তিনি স্বেচ্ছায় না পাকেচক্রে জড়িয়েছেন, আদালত খুঁটিয়ে দেখবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)