—ফাইল চিত্র।
শাহজাহানের বাড়ির রাস্তাটা মূল রাস্তা থেকে একটা মোড় নিয়ে ঢোকে। সেই মোড়ের মাথাতেই বাজার। লোকে বলে ‘শাহজাহানের বাজার’। সরবেড়িয়া গ্রামের এই বাজারে ঢুকতে হয় বিশাল মার্বেলের গেট পেরিয়ে। গেটের মাথায় কালো মার্বেলে ঝলমলে অক্ষরে লেখা ‘সেখ সাহজাহান মার্কেট’। ভিতরে নজর দিলে চোখে পড়বে সান বাঁধানো উঠোন। পাশেই দোতলা বাজার। নীচে সার সার দোকানপাট বসার ব্যবস্থা। বেশ বোঝা যায়, এই বাজারই সরবেড়িয়া গ্রামের প্রাণকেন্দ্র। সকাল থেকে গমগম করে গোটা চত্বর। কিন্তু বুধবার দেখা গেল ‘শাহজাহানের বাজার’ ধুধু ফাঁকা। পর পর দোকানের শাটার নামানো। দোকান খোলেনি কেন? প্রশ্ন করাতে উত্তরই দিতে চাইলেন না এক সব্জি বিক্রেতা! প্রশ্ন শুনে মুখটা স্রেফ ঘুরিয়ে নিলেন।
সন্দেশখালির সরবেড়িয়া গ্রামে বুধবার সকালে এসেছিলেন ইডি অফিসারেরা। তার আগে সকাল থেকেই এলাকায় ছিল পুলিশি প্রহরা। সাধারণত আলো ফোটার পরই বাজার খোলে। হয়তো কিছু দোকান খুলেছিলও। কিন্তু ভোর বেলা আচমকাই এলাকায় পুলিশ বাহিনীকে এসে দাঁড়াতে দেখে আর কেউ বাজারমুখো হননি। যারা ছিলেন, তাঁরাও চলে যান। সাতটা নাগাদ ইডি অফিসারেরা ঢোকেন শাহজাহানের বাড়িতে। তত ক্ষনে বাজার ফাঁকা। একটা চায়ের দোকানও খোলা নেই আশপাশে।
শাহজাহানের এই বাজারে শুধু যে কাঁচা বাজার বিক্রি হয়, তা নয়। এই বাজারেই পাওয়া যায় জুতো-জামা-কাপড়ও। কাপড়ের গাঁঠরি নিয়ে বাজারের ভিতরে অপেক্ষা করছিলেন আমিরুল। সকাল গড়িয়ে তত ক্ষণে বেলা নেমেছে সরবেড়িয়ায়। শাহজাহানের বাড়িতে পুরোদমে চলছে তল্লাশি অভিযান। এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাহারা দিচ্ছেন সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান, পুলিশকর্মীরা। আমিরুলকে দোকান খোলার কথা জিজ্ঞাসা করায় তিনি কিছুটা অনিশ্চিত ভাবেই জবাব দিলেন, ‘‘ভাবছি খুলবো কি না। সকালেই খুলেছিলাম। ইডি আসবে শুনে আতঙ্কে পালিয়েছি।’’ ফলে এখনও গাঁঠরি বাঁধাই পড়ে রয়েছে।
বাজারে কীসের আতঙ্ক? তা অবশ্য আমিরুল বলেননি। যেমন মুখ খোলেননি বাজারের একমাত্র সব্জি বিক্রেতাও। বাজারের এক প্রান্তে কাঁচা বাজার সাজিয়ে বসেছিলেন তিনি। ‘বাজার ফাঁকা কেন?’ প্রশ্ন করায় তিনি কোনও জবাব দিলেন না। উল্টে মুখটা এক পাশে ঘুরিয়ে নিলেন। তবে তিনি কেন দোকান দিয়েছেন, সে প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল। তার জন্য গুনে গুনে তিনটি শব্দ খরচ করলেন বাজার বিক্রেতা। বললেন, ‘‘আমার সব্জির দোকান’’। ব্যাস ওইটুকুই।
কিন্তু কীসের ভয়? কেনই বা ‘শাহজাহানের বাজারের’ দোকানিদের মুখে কুলুপ?
এই বাজারেরই দোতলায় শাহজাহানের অফিস। কোর্টের নির্দেশে কিছুদিন আগে সেখানে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। তার আগেই তালা পড়েছিল অফিসে। তাতে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়ে থাকতে পারে। তবে তার চেয়েও ভয়ের সম্ভবত ১৯ দিন আগের ঘটনা। যেদিন এই গ্রামেই শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে এসে শাহজাহান অনুগামী এবং গ্রামবাসীদের ছোড়া ইট-পাথর-লাঠির আঘাত খেয়ে ঘায়েল হয়েছিল ইডি। চরম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল গ্রাম জুড়ে। ভাঙচূর করা হয়েছিল ইডির গাড়িতে। তার পর থেকেই ইডি নামটার সঙ্গে আতঙ্ক জড়িয়ে গিয়েছে শাহজাহানের গ্রামে। বুধবার হয়তো সেজন্যই যখন শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। তখন ওই নামের আতঙ্ক ছায়া ফেলেছিল ‘শাহজাহানের বাজারে’ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy