গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বঙ্গে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের মধ্যে সোমবার রাজ্যের অন্যতম কোভিড হাসপাতাল— কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ আচমকা বদল! মঞ্জুশ্রী রায়কে সরিয়ে সেই পদে আনা হল এসএসকেএমের প্রাক্তন অধিকর্তা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কোভিড চিকিৎসায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (এমসিএইচ) যে ভূমিকার কথা স্বাস্থ্য দফতর ভেবেছিল, তার বাস্তব রূপায়ণ না হওয়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, এ দিন নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হল ২১১২ জন। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। সুস্থতার হার ৬৫.৬২ শতাংশ। তবে এই পরিসংখ্যানের চেয়েও রাতে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে অধ্যক্ষ বদলের ঘটনা।
এ দিনের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, মঞ্জুশ্রীদেবী আরজিকর হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগে প্রফেসর পদে কাজ করার পাশাপাশি অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি হিসাবে কাজ করবেন। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, অধ্যক্ষকে সরিয়ে মেডিক্যাল কলেজের সকল স্তরেই বার্তা পাঠাল দফতর। তাঁদের বক্তব্য, এনআরএস–কাণ্ডের সময় রাজ্য জুড়ে জুনিয়ার ডাক্তারদের আন্দোলনের সময়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের প্রধান হিসাবে মঞ্জুদেবীর ‘কড়া ভূমিকা’ নজর কেড়েছিল। এ ছাড়া, এসএসকে এমে ‘দক্ষ প্রশাসক’ হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। তাঁর অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই অবসর থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হল।
আরও পড়ুন: রাজ্যে কোভিড নমুনা পরীক্ষার সংজ্ঞা-সংখ্যায় বদল আনবে ‘কোবাস ৮৮০০’
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
মাত্র ১৮ দিন আগে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ মঞ্জুশ্রী রায়-সহ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে নবান্নের সভাঘরে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ রাজ্যে কোভিড চিকিৎসায় মেডিক্যাল কলেজের কী ভূমিকা তিনি প্রত্যাশা করেন, তা স্পষ্ট করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে নাম্বার ওয়ান। আমরা অন্য হাসপাতাল বাছতে পারতাম। ইচ্ছা করে মেডিক্যাল কলেজের নাম কোভিড তালিকায় ঢুকিয়েছি। কারণ, মেডিক্যাল কলেজে গেলেই মানুষ ভাবেন সুস্থ হয়ে যাবেন।’’ কোভিড চিকিৎসায় রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার মুখ হওয়ার জন্য মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ যা চাইবেন, তা-ই পাবেন বলে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরিবর্তে কোভিড রোগীরা যাতে মেডিক্যালের পরিষেবায় সন্তুষ্ট হন, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। ওই বৈঠকেই মঞ্জুশ্রী আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের পঠনপাঠন নিয়ে বলতে শুরু করলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে থামিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আপনারা কী ভাবছেন? সরকার এ সব চিন্তা করেনি? সরকার যখন বলছে অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারের ক্ষতি হবে না, তা হবে না।’’
বাস্তবে একের পর এক ঘটনায় রোগীর পরিজনেরা মেডিক্যালের পরিষেবা নিয়ে নালিশ করেছেন। কখনও জরুরি বিভাগের সামনে রোগীদের অনন্ত অপেক্ষার অভিযোগ উঠেছে তো কখনও ওয়ার্ডের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, খাবারের গুণমান নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পরিজন। আরবাজ আলি নামে ৫৬ বছরের এক প্রৌঢ় এ দিনও হয়রানির অভিযোগ করেন। হাওড়ার পিলখানার বাসিন্দা কলেজ স্ট্রিটে বাস থেকে নেমে রাস্তায় পা পিছলে পড়ে যান। ডান হাতের কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত অংশে আঘাত লাগে। রক্তাক্ত হাত নিয়ে মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে গেলে তাঁকে সার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাঁকে এনআরএসে যেতে বলা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ওই অবস্থায় মেডিক্যাল চত্বরেই বসে থাকেন প্রৌঢ়। শেষ পর্যন্ত রোগীর পরিজন চাঁদা তুলে প্রৌঢ়কে অ্যাম্বুল্যান্সে এনআরএসে পাঠাতে সক্রিয় হন। জানার পরে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির কর্মীরা প্রৌঢ়কে অ্যাম্বুল্যান্সে এনআরএস পাঠান।
সম্প্রতি বেসরকারি চিকিৎসকদের ‘প্রোটোকল মনিটরিং টিমের’ সঙ্গে যুক্ত করতে একটি বৈঠক করেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, এমন উদ্যোগের অন্যতম কারণ, মেডিক্যাল-সহ সরকারি কোভিড হাসপাতালগুলিতে প্রশাসনিক শিথিলতা কাটিয়ে রোগীদের ভর্তি এবং ছুটির প্রক্রিয়া যাতে তরান্বিত হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত এক কর্তার কথায়, ‘‘সিসিইউ, এইচডিইউয়ের শয্যা বৃদ্ধি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা-সহ দফতরের নির্দেশ রূপায়ণে অনেক ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছিল। সমন্বয়ের অভাব দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছিল। এই নির্দেশের সেটিও একটি কারণ হতে পারে।’’ তবে মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকদের এক অংশ সেই জল্পনা মানতে চাননি। তাঁদের ব্যাখ্যা, প্রতি দিন গড়ে ৬০০ কোভিড রোগীকে পরিষেবা দেওয়া মুখের কথা নয়। ফলে সমন্বয়ের ঘাটতির অভিযোগ ঠিক নয়। ঘটনাচক্রে, অধ্যক্ষ বদলের দিনই মেডিক্যাল কলেজে দফায় দফায় বৈঠক হয়। বৈঠকে খাবারের গুণমান, ওয়ার্ডের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা-সহ কোভিড রোগীদের পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে—পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড় পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy