বিপুল জয়ের পর তৃণমূল সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।
টেবিল ফাঁকা। অফিসও ফাঁকা- ফাঁকা। ক’দিন ছুটিতে চলে যাচ্ছেন এ রাজ্যে ভোটের অন্যতম নেপথ্য নায়ক ‘আইপ্যাক’ প্রধান প্রতীক জৈনও (পিজে)। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে ‘রিভার্স স্যুইং’ ফলের কৃতিত্ব নিজের ‘টিম’কে দিয়ে বুধবার পিজে বললেন, “নিষ্ঠা আর শৃঙ্খলার সঙ্গে এগোলে লক্ষ্যপূরণ হয়। কখনও তা প্রত্যাশাও ছাপিয়ে যায়!”
শেষ পর্যন্ত উল্টে গেলেও বুথ-ফেরত সমীক্ষা নিয়ে গণনার আগের দু’দিন ঝড় উঠেছিল গোটা তৃণমূলে। সেই সমীক্ষার পরে দলের পরামর্শদাতা সংস্থা ‘আইপ্যাক’ও কি কেঁপে গিয়েছিল? একেবারে উড়িয়ে দিলেন না প্রতীক। বিপুল জয়ের পরেও সেই অস্বস্তি স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বুথ-ফেরত সমীক্ষা করিনি। তবে ভোট-প্রক্রিয়ায় একটি পেশাদার সংস্থা যে ভাবে থাকতে পারে, সেই কাজের সূত্রে জানতাম, পরিস্থিতি এই রকম নয়।” তাঁর সংযোজন, “তৃণমূল সর্বাধিক কত আসন পাবে, তা দেখার চেষ্টা না করে আমরা ২০১৯ সালের তুলনায় এগোনোর চেষ্টা করেছি। এবং তা নিয়ে খুব বেশি সংশয় ছিল না।”
এ রাজ্যে বিজেপির পক্ষে যে হাওয়া ছিল, তা মেনে নিয়েছে ‘আইপ্যাক’। পিজে-র কথায়, “রামমন্দির উদ্বোধনের পরে এই হাওয়া আরও তীব্র হয়েছিল। তখন আমরা একটি সমীক্ষা করেছিলাম। তাতে তৃণমূলের পক্ষে ছিল ১৫-১৬টি আসন।” সেই সমীক্ষায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে রাজ্যে প্রায় ৬০-৬৫% ভোটারও পেয়েছেন তাঁরা। সেই রিপোর্ট নিয়ে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সবিস্তার আলোচনা করে ব্রিগেড সমাবেশ, প্রার্থী বাছাই এবং প্রচার পরিকল্পনার কাজ শুরু করে দেয় তৃণমূল ও ‘আইপ্যাক’। প্রতি ধাপেই তাঁরা মমতার সম্মতি নিয়েছেন। পিজে-র কথায়, “তৃণমূলের সামনে দু’টি বাধা স্পষ্ট ছিল। তফসিলি মানুষের বিজেপিমুখী মনোভাব এবং তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ।” সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ ও মহিলা ভোট বেশি করে সংহত করার ভাবনাও পাশাপাশি চালিয়েছেন তাঁরা।
গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কাজের সূত্রে ‘আইপ্যাক’-এর ধারণায় ছিল, মুখকেন্দ্রিক প্রচার এবং দলগত ভাবে জাতীয়তাবাদকে মোদী বাড়তি উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন। সেই আভাস বাংলার মাটিতে স্পষ্ট হওয়ার আগেই দেশের সঙ্গে রাজ্যের স্বার্থকে এক সারিতে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা। ‘আইপ্যাক’ প্রধানের কথায়, “রাজ্যে মমতা দুর্বল হলে মানুষের (ভোটারের) স্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে, এই প্রচার মানুষ বিশ্বাস করেছেন। তাতে সাহায্য করেছে ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাস প্রকল্প বন্ধ রাখার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। সে ক্ষেত্রে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নিয়েও মানুষের সংশয় তৈরি হয়েছে।” মমতা ও অভিষেক প্রচারে ও সংগঠনে বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে সফল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। হাওয়া ঘোরাতে এটাই ‘রিভার্স স্যুইং’-এর মতো কাজ করেছে, দাবি তাঁর।
দু’বছরের মাথায় রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে এই ভোট ছিল তৃণমূলের সামনে কঠিনতম পরিস্থিতি। পিজে-র কথায়, “এই রকম দলে গোষ্ঠী থাকে। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কিছু আসনে তৃণমূল হেরেছিল এই কারণে। এ বার তাতে কড়া নজর ছিল আমাদের। নিয়মিত সেই রিপোর্ট অভিষেকের অফিসে গিয়েছে। এবং তিনিই কঠোর হাতে সেই ফাঁক পূরণ করেছেন।” প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির সম্ভাবনা নিয়েও ভোটের আগে সমীক্ষা করেছে ‘আইপ্যাক’। সংস্থার প্রধান বলেন, “অন্তত ১০টি কেন্দ্রে তারা অনুপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করেছে। আর সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপির প্রচার রাজ্যের সেই ৩০% মানুষই বিশ্বাস করেছেন, যাঁরা এই ঘটনা ছাড়াও বিজেপিকে ভোট দিতেন।” ক্রিকেটের ভাষায় তিনি বলেন, “এই রকম অন্তত ছ’টি ফুলটস দিয়েছে বিজেপি। আমরা দেখে ছয় মেরেছি!”
ভোট চলাকালীন ‘আইপ্যাকে’র বিরুদ্ধে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একাধিক অনৈতিক কাজের অভিযোগ করেছিলেন। সেই সম্পর্কে পিজের মন্তব্য, “ভয় দেখাতে রাজনীতিতে এ সব বলা হয়। আমলা, পুলিশ সম্পর্কেও বলা হয়েছে। এ সব পেশাগত ঝক্কি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy