Advertisement
E-Paper

সন্দেশখালি: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্বস্তি

অনেক ভুক্তভোগীই বলেছেন, সিবিআই-তদন্তে ‘প্রকৃত সত্য’ উদ্ঘাটিত হবে। কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, এই রায় রাজ্য সরকারের কাছে জোর ধাক্কা। ঠিক যেমনটা বলছেন বিরোধী নেতারা।

Representative Image

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৭
Share
Save

সন্দেশখালি দ্বীপের পাড়ায় পাড়ায় সোমবার কোনও ‘বিজয় উৎসব’ হয়নি। তবে বহু জায়গাতেই স্বস্তির শ্বাস পড়েছে। অনেক ভুক্তভোগীই বলেছেন, সিবিআই-তদন্তে ‘প্রকৃত সত্য’ উদ্ঘাটিত হবে। কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, এই রায় রাজ্য সরকারের কাছে জোর ধাক্কা। ঠিক যেমনটা বলছেন বিরোধী নেতারা। তবে শাসক দলের কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত সিবিআই কি পারবে গঙ্গাধর কয়ালকে হেফাজতে নিয়ে আসল সত্যিটা খুঁজে বার করতে?

সোমবার সন্দেশখালি কাণ্ডে কলকাতা হাই কোর্টের দেওয়া সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। যে রায় জানার পরে অন্যতম আন্দোলনকারী, বেড়মজুরের বাসিন্দা অর্চনা ভুঁইয়া বলেন, ‘‘আমার মতো যাঁদের জমি দখল হয়েছে, তাঁদের জন্য এই রায় শান্তির। আমাদের জমি-জায়গা যারা লুট করেছিল, আশা করি সিবিআই তাদের শাস্তি দেবে।’’ আর এক প্রতিবাদী মুখ পিয়ালি দাস ওরফে মাম্পি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার কার্যত শীর্ষ আদালতের কাছে চড় খেল। শীর্ষ আদালত বুঝেছে, রাজ্য সরকার সন্দেশখালির বিভিন্ন মামলার তদন্তের নামে কার্যত দোষীদের আড়াল করবে। অভিযোগকারীদের মিথ্যে প্রমাণ করতে চেষ্টা করবে। তাই এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি।’’ গঙ্গাধর কয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর নিকটাত্মীয়, প্রাক্তন বিজেপি নেতা অনুকূল কয়াল বলেন, ‘‘গঙ্গাধর সেই ঘটনার (স্টিং ভিডিয়ো) পরে আর বাড়ি আসেনি। সিবিআই-তদন্ত ছাড়া সন্দেশখালির সত্যি সামনে আসবে না। আমরা এই রায়ে খুশি।’’

সন্দেশখালি ২ পঞ্চায়েত সমিতির এক মহিলা তৃণমূল সদস্য কিছু দিন আগে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করেছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির আর এক সদস্যের বিরুদ্ধে। তিনিও খুশি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে। তিনি বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের মদতে শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দাররা বহু অপরাধ করেছে। শাস্তি হওয়া দরকার।’’

চলতি বছরের গোড়া থেকে লোকসভা ভোটের প্রচার পর্ব পর্যন্ত নানা ঘটনা আবর্তিত হয়েছে সন্দেশখালিকে ঘিরে। বছরের গোড়ায় রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে শেখ শাহজাহানের বাড়ি তল্লাশি অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডি আধিকারিক ও আধাসেনা জওয়ানেরা। তার পরে একে একে সামনে আসে শাহজাহান এবং তাঁর সঙ্গী শিবু-উত্তমদের দাপটের কাহিনি। শিবু-উত্তমের বিরুদ্ধে ওঠে নারী নির্যাতনের অভিযোগও। আবার ভোটের মুখে পর পর দু’টি ‘স্টিং ভিডিয়ো’য় নারী নির্যাতনের অভিযোগ বানানো বলে দাবি করতে দেখা গিয়েছিল সন্দেশখালির বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে। আনন্দবাজার ওই ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি।

এই আবহে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে এ দিন শাসক-বিরোধী তরজা ফের তুঙ্গে উঠেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘রাজ্য সরকার সর্বোচ্চ আদালতে ফের থাপ্পড় খেল! রাজ্য যে নির্লজ্জ ভাবে শেখ শাহজাহানদের বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেটা সর্বোচ্চ আদালতেরও নজর এড়ায়নি।’’

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘নবান্নের বদান্যতায় কোটি কোটি টাকা লুট হয়েছে ওখানে, আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মহিলাদের উপরে নির্যাতন। তার পরেও সুপ্রিম কোর্টে শাহজাহানের জন্য লড়তে গিয়েছিল রাজ্য!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের মন্তব্য, ‘‘শাহজাহান বাংলার তৃণমূলের ‘পারফর্মিং অ্যাসেট’! তাই সরকার আপনার-আমার করের টাকা খরচ করে সুপ্রিম কোর্টে এদের বাঁচাতে যায়। আসলে তৃণমূলের বড় মাথাকে বাঁচাতে চাইছে সরকার।’’

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের পাল্টা দাবি, ‘‘সিবিআই বিজেপির দ্বারা পরিচালিত। সুপ্রিম কোর্ট তাদের হাতে তদন্তের ভার রাখলেও সেই তদন্তের নিরপেক্ষতা কী ভাবে নিশ্চিত করা হবে?’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘সিবিআই কি গঙ্গাধর কয়ালকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে? গঙ্গাধর বলেছেন, টাকা-পয়সা নিয়ে বেইজ্জতি করার জন্য নেতারা এ সব করিয়েছেন। তাঁর বয়ানের ভিত্তিতে সিবিআই কি তাঁদের গ্রেফতার করবে, যাঁরা এ সব করিয়েছেন?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sandeshkhali Incident Supreme Court of India

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}