নিহত সুবীর চাকী ফাইল চিত্র
গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়া রোডের জোড়া খুনের ঘটনায় ক্রমেই দানা বাঁধছে রহস্য। ইতিমধ্যে তদন্তকারীদের হাতে এসেছে নিহত সুবীর চাকী ও তাঁর গাড়িচালক রবীন মণ্ডলের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট। ওই রিপোর্ট থেকে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মৃত দু'জনকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করা হয়েছে। সুবীরের পা ও গলায় গভীর ক্ষতচিহ্ন। রবীনের গলা, পা ও শরীরের পিছন দিকে একাধিক ক্ষতচিহ্ন মিলেছে। এই জোড়া খুনের ঘটনা তদন্ত করছে লালবাজারের হোমিসাইড শাখা। গড়িয়াহাটের ওই বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গোয়েন্দাদের প্রাথমিক ভাবে অনুমান, লুঠের উদ্দেশ্যেই খুন করা হয়েছে ওই দু’জনকে। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, লুঠ করার জন্যই যদি খুন করা হবে, তা হলে গাড়িচালককে কেন খুন করা হল? তদন্তকারীদের একাংশের মতে, সুবীরের পরিচিত কেউই এই ঘটনায় জড়িত। চালক চিনতে পেরেছিলেন বলেই হয়তো তাঁকে খুন হতে হয়েছে। তবে এ সবের স্বপক্ষে এখনও জোরালো কোনও প্রমাণ তদন্তকারীদের হাতে আসেনি।
উচ্চবিত্তের পাশাপাশি সুবীর উচ্চশিক্ষিতও ছিলেন। খড়্গপুর আইআইটি ও জোকা আইআইএম থেকে পাশ করে তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করতেন। চাকরি সূত্রে দীর্ঘ দিন মুম্বইয়ে ছিলেন। তার পর কলকাতায় আসেন। সপরিবার এখানেই থাকতে শুরু করেন। তাঁর বিবাহিত মেয়ে থাকেন বেঙ্গালুরুতে। ছেলে লন্ডনে কর্মরত। এই জোড়া খুনের ঘটনায় কতকগুলি দিক ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। কর্পোরেট কর্তা সুবীরকে খুন করার পিছনে একাধিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। কারণ, বিশাল সম্পত্তির মালিক ছিলেন সুবীর। কলকাতার একাধিক বিলাসবহুল আবাসনে তাঁর ফ্ল্যাট ছিল। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, কাঁকুলিয়া রোডের যে বাড়িতে সুবীর খুন হয়েছেন সেটি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন তিনি। ওই ফ্ল্যাটে সুবীর থাকতেন না। স্ত্রী, মা ও শাশুড়িকে নিয়ে তিনি নিউটাউনে থাকতেন। রবিবার বাড়ি বিক্রির বিষয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে গড়িয়াহাটের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি খুন হন। ফলে প্রশ্ন উঠছে, খুনিরা কি আগে থেকেই তাঁর যাওয়ার বিষয়টি জানত? তার পর সুযোগ বুঝে খুন করেছে? যদিও এ বিষয়ে ঝেড়ে কাশতে রাজি নন লালবাজারের কর্তারা। তবে তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক বছর ধরে ওই বাড়ি বিক্রির চেষ্টা করছিলেন সুবীর। কিন্তু কোনও বারই তিনি নিজে বাড়ি দেখাতে যাননি। প্রতি বারই গাড়িচালক রবীন ক্রেতাদের নিয়ে গিয়ে বাড়ি দেখাতেন। এ বার কেন সুবীর নিজে সঙ্গে গেলেন, তা-ও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ মার্সিডিজ নিয়ে চালক-সহ কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে যান সুবীর। কয়েক ঘণ্টা পরে বাড়ি থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সেই সময় সুবীরের মোবাইল বন্ধ ছিল বলে পরিবারের দাবি। বেশ কিছু ক্ষণ কেটে যাওয়ার পর সুবীরকে ফোনে না পেয়ে থানায় অভিযোগ জানানো হয়। রাতে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ কাঁকুলিয়া রোডের ওই বাড়ির দোতলা থেকে সুবীর এবং তিনতলা থেকে তাঁর গাড়িচালক রবীনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ওই দু’জন মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে খাবার খেয়েছিলেন। তার দু’তিন ঘণ্টার মধ্যেই তাঁদের খুন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ খুন হয়েছেন সুবীর ও রবীন। এই ঘটনায় পুলিশ ৩০২ (খুন), ৩৯৪ (লুঠের জন্য খুন) ও ৩৪ (ষড়যন্ত্র) নম্বর ধারায় মামলা রুজু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy