Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

নির্যাতিতার সম্মান রেখে ডাক্তারি পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ

প্রথম পর্যায়ে জেলা হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল, স্টেট জেনারেল হাসপাতাল মিলিয়ে ৮৪টি হাসপাতালের ৪ জন করে চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ সবে শেষ হয়েছে।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৩
Share: Save:

স্বাস্থ্যভবনে অভিযোগ আসছিল অনেক দিনই। কোনও হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা করাতে এসে দীর্ঘ অপেক্ষা বা রেফারের ধাক্কায় হেনস্থা হতে হচ্ছে ধর্ষিতাকে। কিছু হাসপাতালে চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না-করে ধর্ষণ নিশ্চিত করতে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ করছেন।

এ বার পরিস্থিতি বদলাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। বিভিন্ন ব্যাচে ভাগ করে সরকারি চিকিৎসকদের জন্য শুরু হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির। এই প্রথম সেখানে ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার শিকার ব্যক্তির মর্যাদা বজায় রেখে কী ভাবে দ্রুত পরিষেবা দেওয়া যায়, তা দেখা হচ্ছে। যথাযথ ভাবে ধর্ষণের প্রমাণ সংগ্রহ এবং ধর্ষণ প্রমাণে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’-এর অপ্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে চিকিৎসকদের সচেতন করা হচ্ছে।

প্রথম পর্যায়ে জেলা হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল, স্টেট জেনারেল হাসপাতাল মিলিয়ে ৮৪টি হাসপাতালের ৪ জন করে চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ সবে শেষ হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে ব্লক হাসপাতালে প্রশিক্ষণ শুরু হবে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ধর্ষিতার প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ধর্ষণের প্রমাণ সংগ্রহ ও রিপোর্ট লেখায় চিকিৎসকেরা ভুল করলে বা গড়িমসি দেখালেই বিষয়টি অপরাধীদের পক্ষে চলে যায়। বিচার অধরা থাকে। ত্রুটি বিচ্যুতি ও ফাঁকের খবর আসছিল বলেই এই প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

তিনি জানান, প্রতি হাসপাতাল থেকে সুপার, এক জন মহিলা মেডিক্যাল অফিসার, এক জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ (মহিলা হলে ভাল) ও এক জন জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসারকে (মহিলা হলে ভাল) প্রশিক্ষণের জন্য বাছা হয়েছে। এখন থেকে প্রত্যেক সরকারি হাসপাতালে বাধ্যতামূলক ভাবে একটি ঘর নির্দিষ্ট থাকবে নির্যাতিতাকে পরীক্ষা করা, ধর্ষণের প্রমাণ সংগ্রহ এবং রিপোর্ট লেখার জন্য। ‘সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট ফরেন্সিক এভিডেন্স কিট’ থাকবে প্রত্যেক নির্যাতিতের জন্য। সেখানে আলাদা পোশাক থেকে শুরু করে প্রমাণ সংগ্রহের যন্ত্র—সব থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্য, ‘‘প্রশিক্ষণে জানিয়ে দেওয়া হবে যে, ধর্ষণ প্রমাণে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষ্প্রয়োজন। পরীক্ষা চলাকালীন যেন নির্যাতিতা অপমানিত বা শারীরিক হেনস্থার শিকার না হন, তাতে সতর্ক থাকতে হবে। হাসপাতালে আসা থেকে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত তাঁকে স্বাচ্ছন্দ্য, সহযোগিতা দেওয়া চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রধান কাজ।’’ অন্যথায় শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

এই কর্মসূচির অন্যতম প্রশিক্ষক সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ পরাগবরণ পালের কথায়, ‘‘নির্ভয়ার পরে ধর্ষণের সংজ্ঞাটাই বদলে গিয়েছে। যোনি শিথিল কি না কিংবা অতীতে যৌন সম্পর্ক হয়েছে কি না, এই সব পরীক্ষার এখন প্রয়োজন নেই। ফলে টু ফিঙ্গার টেস্টও অপ্রয়োজনীয়। এটা চিকিৎসকদের স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হচ্ছে। কী ভাবে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে এবং রিপোর্ট লিখতে হবে, সেটা হাতেকলমে শেখানো হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Health Department Rape Rape Tests Trainning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy