Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Russia Ukraine War

‘সরকার না বাঁচালে ওঁর কী হবে কে জানে!’ রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে খোঁজ মিলছে না কালিম্পঙের উর্জেনের

২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরর পরে গুজরাতে যান বছর সাতচল্লিশের উর্জেন। তার পর এক গ্যাস কারখানায় চাকরি নেন। সেখান থেকেই এজেন্ট মারফত নিরাপত্তা সংস্থার কাজে তিনি রাশিয়া যান।

Urgen Tamang

উর্জেন তামাং। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪ ০৫:৫৫
Share: Save:

মোবাইলের বার্তায় বলেছিলেন, কী হচ্ছে পরে জানাবেন। দিনটা ২৩ মার্চ। কিন্তু রাশিয়ায় আটকে পড়া স্বামী উর্জেন তামাংয়ের কাছ থেকে তার পরের ৭২ ঘণ্টায় ফোন বা বার্তা না পেয়ে ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন কালিম্পঙের বাসিন্দা অম্বিকা তামাং। মঙ্গলবার রাতে তিনি বলেন, ‘‘উনি ফোন বা মেসেজ করবেন বলেছিলেন। তিন দিনেও আর করেননি। কী হল বুঝতে পারছি না। আতঙ্কে সময় কাটছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সরকার না বাঁচালে, ওঁর কী হবে কে জানে!’’

ঘটনা জানাজানি হতেই দার্জিলিঙের বিদায়ী বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা বিদেশ মন্ত্রক, রাশিয়ার দূতাবাসে কথা বলে উর্জেনকে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে দাবি৷ প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও এ দিন বলেন, “মস্কোর কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তামাংয়ের যোগাযোগের নম্বর ইত্যাদির জন্য অপেক্ষা করছি। আমাদের মিশন ওঁকে ফেরানোর জন্য যা করার, করবে।” তবে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র
রণধীর জায়সওয়াল বিষয়টি নিয়ে এ দিন নতুন কিছু বলতে চাননি। শুধু জানিয়েছেন, সরকারের ইউরেশিয়া বিভাগ এই সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখাশোনা করছে।

২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন বছর সাতচল্লিশের উর্জেন। তার পরে করোনা-কালের আগে গুজরাতের এক গ্যাস কারখানায় চাকরি নেন। সেখান থেকেই এজেন্ট মারফত নিরাপত্তা সংস্থার কাজে তিনি রাশিয়া যাবেন বলে গত জানুয়ারিতে পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় বলে জানান অম্বিকা। কালিম্পঙের বারো এবং আট বছরের দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন তিনি। জানান, মেয়েরা স্কুলে পড়ছে। উর্জেন নিয়মিত বাড়ির খোঁজ নিতেন। এলাকায় পরিবারটির কোনও আত্মীয় নেই। মহিলা বলেন, ‘‘বিদেশে আয় করে সংসার ভাল চলবে ভেবেছিলাম। এখন দুশ্চিন্তায় থাকতে পারছি না। উনি আগে বিদেশে যাননি।’’

গত ২২ মার্চ এজেন্টের জন্য রাশিয়ায় আটকে পড়েছেন বলে উর্জেন নিজের ভিডিয়ো (সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান অম্বিকাকে। দাবি করেন, তাঁকে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে লড়তে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। উর্জেনকে বার বার বলতে শোনা যায়, ‘‘ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি, অনুগ্রহ করে আমাকে বাঁচান।’’ অম্বিকা কালিম্পঙের পুরপ্রধান রবি প্রধানকে তা জানানোর পরে, প্রশাসনিক স্তরের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমেও ভিডিয়োটি ছড়িয়ে পড়ে। ২৩ মার্চ বিকেলে মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে স্ত্রীকে উর্জেন জানান, প্রায় পাঁচ ঘণ্টার যাত্রা করিয়ে নতুন একটি জায়গায় তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েক জন আছেন। পরে কী হচ্ছে জানাবেন বলেছিলেন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, এর আগেও চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনায় ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ এসেছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জায়সওয়ালও বলেছেন, তাঁরা বিষয়টি জানেন। সমস্ত ভারতীয়কে এ ব্যাপারে সতর্ক এবং সংঘাত থেকে দূরে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। ওয়াকিবহাল শিবিরের মতে, বিষয়টি নিয়ে সরাসরি রাশিয়ার উপরে চাপ তৈরি করার চেষ্টা করবে না ভারত। কাউকে ‘ভুল বুঝিয়ে’ রাশিয়া নিয়ে গিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে— এই ‘তত্ত্বও’ তেমন যুক্তিগ্রাহ্য নয়। কেন নেওয়া হচ্ছে, তা জেনে-বুঝে, অর্থের লোভে রাশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

অম্বিকা এত কথা জানেন না। বলেন, ‘‘স্বামী মেয়েদের বড় করার জন্য লড়াই করছেন। এজেন্টদের খপ্পরে পড়ে এমন হবে, ভাবতে পারছি না!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War India Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy