স্বাস্থ্য-সচেতনতা নিয়ে কেন্দ্রের পত্রিকার বাংলা সংস্করণ।
যক্ষ্মা রোগীদের ওষুধ দেওয়ার জন্য তৈরি ‘ডটস’ (ডিরেক্টলি অবসার্ভড ট্রিটমেন্ট-শর্ট কোর্স) সেন্টার বাংলা অনুবাদের ছোঁয়ায় হয়েছে ‘বিন্দু সেন্টার’! ‘পুওর ওরাল হাইজিন’ হল ‘দরিদ্র ওরাল স্বাস্থ্যবিধি’। নতুন টুথব্রাশ ব্যবহারের অর্থ ‘টুথব্রাশ প্রতিস্থাপন’! স্কিন বায়োপ্সি-র বাংলা ‘চাঁচুনি’, ‘মায়োপিয়া’ অর্থাৎ চোখের যে রোগে দূরের জিনিস ভাল করে দেখা যায় না, তার বাংলা হয়েছে ‘কাছের দৃষ্টি’, ‘আউট অব পকেট এক্সপেন্স’ হল ‘পকেট ব্যয়ের বাইরে’! মেঝেতে জল পড়ে থাকলে বয়স্কদের যে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, একে এক কথায় বোঝাতে লেখা হয়েছে— ‘জলপ্রপাতের ঝুঁকি’!
সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে— ‘অপর্যাপ্ত আলো বৃদ্ধকে ফল্সপ্রবণ করতে পারে!’
বই খুলে পাতায় পাতায় এমন নমুনা দেখে ভিরমি খাওয়ার দশা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের!
সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য-সচেতন করতে নতুন পত্রিকা বার করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যুরো। রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আমজনতাকে এই বই নিখরচায় দিতে হবে। তার আগে একটু চোখ বুলিয়ে নিতে গিয়ে রাজ্যের কর্তারা চেয়ার থেকেই পড়ে যান আর কী!
দিল্লি থেকে আসা এই ‘সুস্থ ভারত উদ্যোগ’ পত্রিকার ছত্রে-ছত্রে ভয়াবহ বাংলা অনুবাদ। অর্ধেক শব্দ এবং বাক্যের অর্থই বোঝা যাচ্ছে না। অথবা যে অর্থ হচ্ছে, তা চূড়ান্ত হাস্যকর। খোদ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, ‘‘মারাত্মক বাংলায় বিভিন্ন রোগ ও উপসর্গের এমন মানে দাঁড়িয়েছে যে, হাসব না কাঁদব ভেবে পাচ্ছি না। এই বই সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দিলে মানুষ আমাদের তুলোধোনা করবেন।’’
আরও পড়ুন: মমতার মুখে ফের ‘ম্যানমেড’ বন্যা
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যুরোর ডিরেক্টর নীরজ কুলশ্রেষ্ঠকে (বইয়ের সম্পাদক হিসেবে তাঁরই নাম) চিঠি লিখেছেন বিশ্বরঞ্জনবাবু। তাঁরা ভুল স্বীকার করে আপাতত বইটি বিতরণ করতে বারণ বলেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডিরেক্টর জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস জগদীশ প্রসাদের কথায়, ‘‘মানুষের সুবিধের কথা ভেবে ১৫টি ভাষায় বইটি অনূদিত হয়েছিল। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অনুবাদ হয়েছে। কিন্তু তারা যে বাংলার এই অবস্থা করবে, ভাবা যায়নি। অবিলম্বে ভুল শোধরানো হবে। নতুন করে অনুবাদের পরে ‘সফ্ট কপি’ পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যকর্তাদের পড়িয়ে নিয়ে তার পরে ছাপতে দেওয়া হবে।’’
সম্প্রতি বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে নিম্নমানের বাংলা অনুবাদ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের বইয়েরও একই দশা দেখে অনেকেই অবাক। যেমন ধরা যাক, ‘কিডনি কী?’ এই প্রশ্নের উত্তরে ওই পত্রিকায় লেখা হয়েছে— ‘কিডনি দুই শিম আকৃতির প্রত্যঙ্গ প্রতিটি পাশ দিয়ে এক, একটি পাঁজর অধীনে ফিরে দিকে অবস্থিত, শরীর প্রস্রাব মাধ্যমে এবং বাড়তি তরল, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম নাদা করতে সাহায্য করছে!’ এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘পাগলের প্রলাপকেও এ হার মানাবে!’’
কেমোথেরাপি কাকে বলে? জবাব হল— ‘একটি প্রমিত প্রশাসনের অংশস্বরূপ এক বা একাধিক বিরোধী ক্যানসার ওষুধের সঙ্গে চিকিৎসা আছে। অধিকাংশ ক্যান্সার কোষের একটি সমালোচনামূলক সম্পত্তি বাঁধন ডিভাইড প্রাণনাশ দ্বারা কাজ!’’
বসন্তকালে ফ্লুয়ের আক্রমণ থেকে কী ভাবে বাঁচা যায়? বইয়ের পরামর্শ— ‘একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য বজায় রাখার ও তরল প্রচুর মদ্যপান ভাল জলয়োজন নিশ্চিত করার, এই ধরনের সমস্যার নিবারক!’
পোকামাকড়ের মাধ্যমে কী ভাবে রোগ ছড়ায়? বিবরণ রীতিমতো ভীতিপ্রদ— ‘ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে পড়ে ও তেলাপোকা, অসুস্থতা ছড়িয়ে খাদ্য ও পাত্রের উপর হাঁটে।’
বৃদ্ধরা যাতে পড়ে না যান, তার জন্য ঘরের ভেতরটা কেমন হওয়া উচিত? উত্তর হল— ‘সিঁড়ি হাত পাগল মত হোমস বয়স্ক বন্ধুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ ব্যবহার!’
এমন উদাহরণ রাশি রাশি। যা শুনে ভাষাবিদ পবিত্র সরকারের আক্ষেপ, ‘‘ভাষাকে কার্যত ধর্ষণ করা হয়েছে। এটা হাস্যকর, কষ্টকর, কুৎসিত, বীভৎস! সরকারি অর্থের এই অপচয় ভাবা যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy