Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষক বাছাইয়ে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা! সংশয় শিক্ষা শিবিরে

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলের সব পর্যায়েই শিক্ষক নেওয়া হয় রাজ্য স্তরের পরীক্ষার মাধ্যমে। কেন্দ্র এ বার স্কুলশিক্ষক নিয়োগের জন্য দেশ জুড়ে কেন্দ্রীয় ভাবে একটি পরীক্ষা চাইছে।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৭ ০৪:০২
Share: Save:

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলের সব পর্যায়েই শিক্ষক নেওয়া হয় রাজ্য স্তরের পরীক্ষার মাধ্যমে। কেন্দ্র এ বার স্কুলশিক্ষক নিয়োগের জন্য দেশ জুড়ে কেন্দ্রীয় ভাবে একটি পরীক্ষা চাইছে।

কেন্দ্রীয় স্কুলশিক্ষা সচিব অনিল স্বরূপ মঙ্গলবার কলকাতায় এক আলোচনাসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের এই ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানে ভর্তির পরীক্ষা ‘ক্যাট’-এর মতো শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ভাবে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।’’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, এই প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার জন্য কোনও রাজ্যকেই কোনও রকম জোর করা হবে না। ‘‘সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি নিজেরাই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে,’’ বলেন অনিল।

রাজ্য সরকার অবশ্য এখনও কেন্দ্রের এই প্রস্তাব পায়নি। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রস্তাব আসুক। তার পরে ভেবে দেখা হবে।’’

পার্থবাবু সবিস্তার প্রতিক্রিয়া না-জানালেও শিক্ষক নিয়োগের সর্বভারতীয় পরীক্ষার প্রস্তাব নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠছে শিক্ষা শিবিরে। যেমন, কেন্দ্রীয় ভাবে পরীক্ষা নিতে হলে সারা দেশে প্রথমেই অভিন্ন পাঠ্যক্রম চালু করা বাঞ্ছনীয়। কেন্দ্র কি সেটাই চালু করতে চায়? বহু ভাষার দেশে স্কুল স্তরে সেটা আদৌ কি সম্ভব? বিভিন্ন রাজ্য ডাক্তারিতে ভর্তির জন্য কিছু দিন আগেও আলাদা আলাদা পরীক্ষা নিত। এ বছর সর্বভারতীয় অভিন্ন প্রবেশিকা চালু হয়েছে। তাতেও ভাষা নিয়ে জটিলতা থেকেই গিয়েছে। স্কুলশিক্ষক নিয়োগে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা সেই জট থেকে মুক্ত থাকবে কী ভাবে? জবাব মিলছে না।

আরও পড়ুন: সাংবাদিক পেটানোয় শাস্তির আশ্বাস সিপি-র

নিয়োগে সর্বভারতীয় পরীক্ষার প্রস্তাব ছাড়াও কেন্দ্রীয় সচিব এ দিন স্কুলশিক্ষকদের হাজিরা থেকে কাজকর্ম, এমনকী শিক্ষক শিক্ষণ কলেজগুলির কর্মপদ্ধতির সমালোচনা করেছেন খোলাখুলি। বিশেষত স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, দেখা যাচ্ছে, দেশের ২৫ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা স্কুলেই যান না। বায়োমেট্রিক হাজিরার ইঙ্গিত দিয়ে অনিল জানান, স্কুল-কামাই বন্ধ করতে শিক্ষকদের জন্য ছত্তীসগঢ়ে বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ড্যান্স চালু হতে চলেছে। সেখানে শিক্ষকদের ‘ট্যাবলেট’ দেওয়া হয়েছে। তার মাধ্যমে শিক্ষকদের হাজিরা নথিভুক্ত হবে। ট্যাবলেটের সঙ্গে থাকবে ‘জিপিএস লিঙ্ক’। যার সাহায্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কখন কোথায় আছেন, তা জানা যাবে। রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড-সহ আরও চারটি রাজ্যের সরকার এই পদ্ধতি চালু করতে চলেছে।

দেশের বিএড কলেজগুলির কর্মপদ্ধতি খুব স্বচ্ছ নয় বলেও মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় স্কুলশিক্ষা সচিব। তিনি জানান, দেশের সব বিএড কলেজের কাছে তাদের নিজেদের সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। ৪০ শতাংশ কলেজই তথ্য জমা দেয়নি। ‘‘এর থেকে এটা পরিষ্কার যে, বহু বিএড কলেজে এমন কাজকর্ম হচ্ছে, যা তাদের করা উচিত নয়,’’ মন্তব্য অনিলের। যারা তথ্য দেয়নি, তাদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের কলেজই আছে। তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে ওই সব বিএড কলেজের কাজকর্ম খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান কেন্দ্রীয় স্কুলশিক্ষা সচিব।

কয়েক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু বিএড কলেজের বিরুদ্ধেও অনিয়মের অনেক অভিযোগ উঠেছিল। তার পরে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আলাদা বিএড বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে এই কলেজগুলিকে আরও কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE