বিস্ফোরণের পরে। খয়রাশোলের নওয়াপাড়ায় ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।
অবৈধ কয়লার কারবার, এলাকার দখল নিয়ে দুই তৃণমূল নেতার টক্করে মাটি তেতে রয়েছে। চলছে দু’পক্ষের ‘ঘনিষ্ঠ’ দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি। এ বার দুষ্কৃতীদের মজুত করে রাখা বোমা ফেটে আস্ত একটা সরকারি বাড়িকে ধসে যেতে দেখলেন বীরভূমের লোকপুর থানা এলাকার বাসিন্দারা।
বুধবার রাতে ওই বিস্ফোরণে কংক্রিটের চাঙড় ছিটকে চোট পান এক কলেজ-ছাত্র। ‘যুযুধান’ নেতারা বা ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, শাসক দলের সঙ্গে বিস্ফোরণের কোনও যোগ নেই। তবে জেলার মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশকে বলা হয়েছে, দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে।’’
মোবাইলে ফোন এবং এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী এবং পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের অনুমান, ওখানে সকেট বোমা এবং বোমার মশলা মজুত করা ছিল। কোনও ভাবে বোমাগুলো ফেটে এই কাণ্ড।’’
বছরখানেক আগে নওপাড়া গ্রামের ডাঙালপাড়ায় প্রায় হাজার বর্গফুটের ওই বাড়িটি তৈরি হয়। তবে সেটি নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতা ছিল। খয়রাশোলের বিডিও তারকনাথ চন্দ্রের দাবি, বাড়িটি প্রকৃত পক্ষে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। তৈরিতে প্রায় সাত লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। সংশিষ্ট দফতরকে কাগজে-কলমে তা হস্তান্তরও করা হয়েছে। যদিও সুসংহত শিশুবিকাশ দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ির পাল্টা দাবি, ‘‘খয়রাশোলে আমাদের দফতরের অফিসারের কাছে ওই কেন্দ্রটির দখল নেওয়ার জন্য কোনও চিঠি এসেছে, এমনটা শুনিনি। তাই ওটা আদৌ আইসিডিএস কেন্দ্র কি না, তা স্পষ্ট নয়।’’ তবে এটুকু স্পষ্ট, বাড়িটির মালিক রাজ্য সরকার।
বৃহস্পতিবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, চার ঘরের বাড়িটির প্রায় ৯০ শতাংশ ছাদ ধসে গিয়েছে। টুকরো হয়ে গিয়েছে ঢালাই পিলার, দরজা-জানালা। লাগোয়া বাড়ির বাসিন্দা মেহেরনিকা বিবি, শেখ জয়নালরা বললেন, ‘‘রাত দেড়টা নাগাদ কান ফাটানো আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে দেখি, ধুলো উড়ছে। বাড়িটা মাটিতে মিশে গিয়েছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ জানাচ্ছেন, তৈরি হওয়ার পরে ওই বাড়িটির ধারেকাছে সরকারি লোকজনকে তাঁরা দেখেননি। তবে শাসক দলের ‘অনুগত’দের দেখেছেন।
এলাকার দুই প্রবীণের কথায়, ‘‘এই এলাকায় প্রায় সব কিছুরই মালিক হলেন নেতারা। সরকারি বাড়িও যে তাঁদের হেফাজতে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক।’’ তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, খয়রাশোলে অবৈধ খাদান থেকে তোলা কয়লার কারবার এবং পঞ্চায়েতগুলির দখলদারি নিয়ে শাসক দলের অন্দরে অনেক দিন ধরেই লড়াই চলছে। পর-পর খুন হয়েছেন তৃণমূলের দুই ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষ, অশোক মুখোপাধ্যায়। গত ছ’মাসে অপমৃত্যু হয়েছে তৃণমূলেরই পাঁচ জনের। এখন নাকড়াকোন্দা পঞ্চায়েত এলাকার দুই নেতা—অশোক ঘোষ শিবিরের লালবাবু শেখ এবং অশোক মুখোপাধ্যায় গোষ্ঠীর লতুফ শেখের ‘লড়াই’ চলছে।
তৃণমূল অন্দরের খবর, বর্তমানে পাল্লা কিছুটা ভারী লালবাবুর। তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু লোক লতুফের দলে নাম লেখানোয় নতুন করে হাওয়া গরম হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিজয় মিছিল বার করা নিয়ে হয়েছে এক চোট। সে দিন পুলিশ সামাল দিলেও কোনও শিবিরই সহজে নিরস্ত হতে চায়নি। পুলিশ সূত্রের অনুমান, সে জন্য ফাঁকা পড়ে থাকা সরকারি বাড়ির ভিতরে বোমা মজুত করে রেখেছিল এক পক্ষ। ঘটনাস্থল থেকে এ দিন সকেট-বোমার টুকরো পেয়েছে পুলিশ।
লালবাবু শেখ ও লতুফ শেখের দাবি, ঘটনায় তাঁরা জড়িত নন। একই মত তৃণমূলের খয়রাশোল ব্লক সভাপতি সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে মোবাইল বন্ধ থাকায় কিছুতেই যোগাযোগ করা যায়নি রাজ্যের মহিলা ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজার সঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy