তাপসের ছেলের নামেও কলেজ? —ফাইল চিত্র।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলের ছেলে রাজীবের একাধিক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া গেল এ বার। মুর্শিদাবাদে নবগ্রাম থানার অন্তর্গত রাইন্ডা গ্রামের ওই কলেজগুলির মধ্যে একটি পলিটেকনিক কলেজ যেমন রয়েছে, তেমনই আছে একাধিক প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ক্যাম্পাস। অভিযোগ, জোরপূর্বক ওই কলেজগুলির মালিকানা নিয়েছেন তাপস। সমস্যা মেটানোর নাম করে কলেজগুলিতে ঢুকতেন, বেরোতেন মালিক হয়ে।
উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের বাসিন্দা তাপসের ছেলের নামেও যে এতগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, অনেকের কাছেই খবর ছিল না। স্থানীয় সূত্রে খবর, বর্তমানে তাপস-পুত্র রাজীবের মালিকানাধীন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের প্রথমে নাম ছিল শ্যামাসুন্দর প্রাইমারি টিচার ট্রেনিং কলেজ। সেই নাম পরে বদলে হয় মিনার্ভা অ্যাকাডেমি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নামবদলের সঙ্গে মালিকানা বদল হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা আশিস চৌধুরীর কথায়, ‘‘নীলমাধব ঘোষ নামে অমৃতকুন্ডু এলাকার এক ব্যক্তি ওই কলেজের কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে কলেজের সঙ্গে রাজীব যুক্ত হন।’’ কলেজ দেখাশোনার কাজে ছেলেকে দেখা যেত বলে দাবি স্থানীয়দের। এর পাশাপাশি আরও একটি শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান মৃন্ময়ী কলেজ অব এডুকেশনের কার্যত মালিক হয়ে ওঠেন রাজীব।
ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা নীলমাধব ঘোষ বলেন, ‘‘২০০৪ সালে আমার মৃত বাবার স্মৃতির উদ্দেশে শ্যামসুন্দর নামে কলেজটি চালু করেছিলাম। ২০০৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অনুমোদন সংক্রান্ত সমস্যা হওয়ায় তাপস মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি অনুমোদন সংক্রান্ত সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কলেজের অংশীদারিত্ব দাবি করেন। যদিও সবটা মৌখিক ভাবেই হয়েছিল।’’
প্রতিষ্ঠাতাকেই কলেজ থেকে কার্যত বার করে দিয়ে নিজের প্রভাব খাটিয়ে তা দখলের অভিযোগ উঠেছে তাপসের ছেলের বিরুদ্ধে। নীলমাধব বলেন, ‘‘কোনও চুক্তি না থাকলেও গাজোয়ারি করে তাপস মণ্ডল আমাকে কলেজ থেকে বার করে দেন।’’ তিনি জানান, কলেজের মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে বর্তমানে লালবাগ আদালতে একাধিক মামলা চলছে।
উল্লেখ্য, নদিয়া, মুর্শিদাবাদে বেশির ভাগ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ চলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। এই কলেজগুলির একাধিক মালিক। কোনও কলেজে মালিকদের মধ্যে বিরোধ হলেই নাকি ‘আবির্ভাব’ হত তাপসের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নদিয়ার এক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের মালিকের দাবি, ‘‘যে মালিক সর্বোচ্চ অঙ্কের টাকা দিতে রাজি হতেন, তাপস তাঁকে মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতেন। মোটা টাকার বিনিময়ে কলেজ থাকত তাপসের দখলে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘সফটঅয়্যার সলিউশন নামে মানিকের ছেলে সৌভিকের সংস্থাকেও মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হত। মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ার একাধিক কলেজে অনুমোদন এবং মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে তাপসের মধ্যস্থতায় মোটা টাকার বিনিময়ে রফা হত মানিকের।’’
নদিয়া উত্তরের বিজেপি জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাসের দাবি, ‘‘কোনও আইন কিংবা কাগজের তোয়াক্কা না করেই গায়ের জোরেই একাধিক কলেজের মালিকানা হস্তান্তর করেছেন মানিক। আর এর মধ্যস্থতা করেছেন শাসকদলের তেহট্ট এবং পলাশিপাড়া বিধানসভার স্থানীয় দুই নেতা।’’ আর কলেজের মালিক সংগঠনের এক প্রতিনিধি বলেন, ‘‘পাঁচ বছরের মধ্যে মালিকানা হস্তান্তর হওয়া কলেজগুলির নথি খতিয়ে দেখে ‘নতুন’ মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বড় দুর্নীতির রহস্য উন্মোচন হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy