মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর নির্বাচন ঘিরে দুই দলীয় বিধায়কের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল শাসক তৃণমূলকে। দলীয় সূত্রে খবর, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবারই দুই বিধায়ককে কলকাতায় ডেকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজ হল তাতেই! মমতার হস্তক্ষেপের পর বৃহস্পতিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে একে একে নাম প্রত্যাহার করলেন গোঁজ প্রার্থীরা।
ডিরেক্টর নির্বাচন ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে তরজায় জড়িয়েছিল তৃণমূলের দুই যুযুধান শিবির। এক দিকে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি আর অন্য দিকে পটাশপুরের বিধায়ক তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক। মঙ্গলবারই জেলায় দুই গোষ্ঠীর লোকেদের মধ্যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছিল। উত্তমের অনুগামীরা বিধায়ক অখিলকে দেখে ‘চোর-চোর’ স্লোগান দিয়েছিলেন। পাল্টা অখিল তাঁদের বোমা মেরে ‘পাঁচ মিনিটে খতম’ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। বিবাদ চরমে ওঠায় হস্তক্ষেপ করেন মমতা। দলীয় সূত্রে খবর, দুই বিধায়ককে সর্তক করে দলনেত্রী জানিয়েছিলেন, যদি তাঁরা দলের কথা শুনে এবং মেনে না চলতে পারেন, তা হলে তিনি কড়া ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন। পাশাপাশি, মমতা তাঁদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর নির্বাচনে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ডিরেক্টর পদে যে প্যানেল ঠিক করে দেবেন, তা-ই মেনে নিতে হবে সকলকে। কেউ গোঁজ প্রার্থী দাঁড় করালে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সংশ্লিষ্ট নেতার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন।
মমতার ওই নির্দেশের পরেই বৃহস্পতিবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন কাঁথি ১ আসন থেকে তৃণমূল প্যানেলে জয়ী সুকোমল মাইতি, হেড়িয়া থেকে জয়ী জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানবকুমার পড়ুয়া। তাঁরা দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তবে ডিরেক্টর নির্বাচন থেকে নাম প্রত্যাহারের পর সুকোমলের দাবি, ‘‘আমি কোনও গোষ্ঠীর সঙ্গে ছিলাম না। তবে দলনেত্রী নাম প্রত্যাহার করতে বলায় আমি ডিরেক্টর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।’’
জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তর বারিকের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তৃণমূলের দাপুটে নেতা মানবও বলেন, “আমি সংবাদমাধ্যম ও সমাজমাধ্যম থেকে জানতে পারি, দলনেত্রীকে এই সমবায়ের বোর্ড গঠনের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত। তাই দলের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে আমি ডিরেক্টর নির্বাচন থেকে আমার নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’’ বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে যে কোন্দল তৈরি হয়েছিল, তা জেলা নেতৃত্বদের ব্যর্থতা বলেই দাবি করেছেন মানব।
গত ১৫ ডিসেম্বর কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির নির্বাচন হয়েছিল। বিজেপির দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে নজিরবিহীন ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে সমবায় ভোট হয়েছিল। ভোটে মোট ১০৮টি আসনের মধ্যে ১০১টি আসনে জেতে তৃণমূল। বাকি সাতটি আসনে জেতে বিজেপি ও নির্দল প্রার্থীরা। এ বার সমবায় পরিচালনার জন্য ১৫ জন ডিরেক্টরের নির্বাচন রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারী। এই ডিরেক্টররাই সমবায়ের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান বেছে নেবেন। কিন্তু কার হাতে ক্ষমতার রাশ থাকবে, তা নিয়েই টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে।
১৫টি ডিরেক্টর পদের মধ্যে তিনটি সংরক্ষিত ও ১২টি অসংরক্ষিত। একমাত্র পটাশপুর অসংরক্ষিত আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পথে মৃণালকান্তি দাস। বাকি ১১টি আসনে মুখোমুখি লড়াই। মঙ্গলবার ১৫টি আসনে মোট ২৬টি মনোনয়ন জমা পড়ে। এই নিয়ে গত দু’দিনে উত্তম ও অখিল গোষ্ঠীর বিবাদ প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। এর পরেই বিষয়টি হস্তক্ষেপ করে সমাধান বাতলে দেন মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy