রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। ফাইল চিত্র।
আগামী বছর রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে এ-ও যেন ছিল তেমনই এক নির্বাচন। যার গণনা ঘিরে সকাল থেকেই টানটান উত্তেজনা। সময় যত এগিয়েছে, ততই ছাপ্পার অভিযোগ ও ক্ষোভ উগরে দিতে শুরু করেছে বিরোধী শিবির। আর শাসক শিবিরে দেখা গিয়েছে উচ্ছ্বাস। দু’পক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে তা সামাল দেওয়ার জন্য মজুত ছিল পুলিশবাহিনী। বুধবার এমনটাই ছিল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সামনের চিত্র।
প্রায় এক মাস ধরে ভোটগ্রহণ হয়েছে রাজ্যে নতুন মেডিক্যাল কাউন্সিল গঠনের জন্য। এ দিন সকাল থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। প্রথমে সকাল ১০টা থেকে ‘জি’ ক্যাটেগরি, অর্থাৎ শিক্ষক-চিকিৎসকদের প্যানেলের ভোট গোনা শুরু হয়। ওই প্যানেলে মোট সাতটি পদ রয়েছে। ভোট গণনা শুরু হওয়ার পরে সময়যত এগিয়েছে, গণনা কেন্দ্র থেকে বাইরে আসা খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তৃণমূল শিবিরের চিকিৎসকেরা। দেখা গেল, দুপুর পৌনে ৩টে নাগাদ ওই শিবিরের অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এলেন কয়েক জন। হাত তুলে চেঁচিয়ে বললেন, ‘জয় বাংলা।’
কিছুটা দূরেই বিরোধী শিবিরের দু’টি ক্যাম্প। শাসক শিবিরের উল্লাসে সেখানে কয়েক মিনিটের নৈঃশব্দ্য। সবই যেন চিরাচরিত ভোটের ফলাফল ঘোষণার দিনের ছবি। যা দেখে বোঝা গেল, বিরোধী শিবিরকে পিছনে ফেলে শিক্ষক-চিকিৎসকের প্যানেলে এগিয়ে রয়েছে শাসক শিবির। মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচনে মোট ১৪টি পদে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে ‘জি’ ক্যাটেগরি, অর্থাৎ শিক্ষক-চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে সাতটি এবং ‘এইচ’ ক্যাটেগরি, অর্থাৎ রাজ্যের সমস্ত রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ক্ষেত্রে সাতটি পদ। শাসকপন্থী চিকিৎসকদের পাশাপাশি আরও ছ’টি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’-এর তরফেও ১৪টি পদে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। অন্য দিকে, মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার ও সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের তরফেও যৌথ ভাবে প্রার্থী দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, ‘জি’ ক্যাটেগরিতে মোট ভোটার ৩৩৪৩ জন। ভোট পড়েছে ২৬৯৬টি। সূত্রের খবর, এর মধ্যে ৮০-৮৫ শতাংশ ভোটই পেয়েছেন শাসকপন্থী চিকিৎসক প্রার্থীরা। তবে, এই ফলাফলের নেপথ্যে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে বিরোধী শিবির। তাদের দাবি, ওই ক্যাটেগরির ব্যালটের রং গাঢ় হলুদ। কিন্তু গণনার সময়ে অসংখ্য এমন ব্যালট দেখা যায়, যেগুলি হালকা হলুদ রঙের। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্সের তরফে চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন, ‘‘১৯০০-২০০০ মতো ভোট যে পড়বে, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত ছিলাম। তার মধ্যে অন্তত ৮০০ ভোট আমাদের পাওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ভোট পড়েছে প্রায় ২৭০০। অতিরিক্ত ওই ৭০০ ভোটেই কারচুপি করা হয়েছে বলে মনে করছি। নকল ব্যালট ছাপিয়ে সেই কাজ করা হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ১৯০০ বা ২০০০ ভোটের মধ্যে বিরোধীরা ৮০০-৯০০ পেয়ে গেলে খুব কম ফারাকে জিততে হত শাসক শিবিরকে। সেটা নৈতিক ভাবে তাদের পরাজয় হত। সেই কারণেই কারচুপি করা হয়েছে।
তৃণমূলপন্থী শিবিরের প্রার্থী, চিকিৎসক সুশান্ত রায়ের কথায়, ‘‘সিপিএম ও বিজেপির প্রার্থীরা যৌথ ভাবে মঞ্চ তৈরি করেছেন। সেই মঞ্চকে কোনও চিকিৎসক ভোট দেবেন কি? কোথাও কোনও কারচুপি হয়নি।’’ দুপুরে ‘জি’ ক্যাটেগরির গণনা শেষ হলেও তা সরকারি ভাবে ঘোষণা হবে ‘এইচ’ ক্যাটেগরির গণনা শেষ হওয়ার পরে। শাসক শিবিরের প্রার্থী তথা কাউন্সিলের অ্যাড-হক কমিটির সভাপতি, চিকিৎসক সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে ফলাফল বেরোক, তার পরে সব বলব। তবে এইটুকু বলতে পারি, চিকিৎসকদের স্বার্থেই সকলে কাজ করবেন।’’ এ দিন বিকেল থেকে ‘এইচ’ ক্যাটেগরির ব্যালট খাম থেকে বার করার কাজ শুরু হয়। জানা যাচ্ছে, ওই ক্যাটেগরিতে মোট ভোটার ৬০ হাজার। ভোট পড়েছে প্রায় ২০ হাজার।
সেখানেও কারচুপির অভিযোগ তুলেছে সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এইচ ক্যাটেগরিতে ব্যালট ও খামের রঙে অসঙ্গতি রয়েছে। যেখানে সমস্ত ব্যালট গাঢ় গোলাপী রঙের হওয়ার কথা, সেখানে হালকা গোলাপী রঙের দেখা যাচ্ছে। শাসক দল ছাপ্পা দেওয়ার জন্যই ওই ব্যালট ছাপিয়েছে। একাধিক খামে একই ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত সইও মিলেছে।’’ তবে সব পক্ষই জানিয়েছে, ‘এইচ’ ক্যাটেগরির ভোট গণনা শেষ হতে আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল বা সন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy