Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
পথে অবরোধ, মঞ্চে একজোট নেতারা

‘নবান্ন চলো’য় শক্তি দেখাল অধীর-বাহিনী

লক্ষ্য ছিল, বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনকে চাঙ্গা করা। ‘নবান্ন চলো’ অভিযানকে সামনে রেখে শেষ পর্যন্ত কলকাতার রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করল কংগ্রেস। বামেদের নবান্ন অভিযানের মতো এ বার আর পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কোনও সংঘাত বাধেনি ঠিকই।

প্রতিরোধ। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা কংগ্রেস সমর্থকদের। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি

প্রতিরোধ। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা কংগ্রেস সমর্থকদের। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

লক্ষ্য ছিল, বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনকে চাঙ্গা করা। ‘নবান্ন চলো’ অভিযানকে সামনে রেখে শেষ পর্যন্ত কলকাতার রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করল কংগ্রেস। বামেদের নবান্ন অভিযানের মতো এ বার আর পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কোনও সংঘাত বাধেনি ঠিকই। কিন্তু রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের আচরণের প্রতিবাদেই মঙ্গলবার দিনের ব্যস্ত সময়ে অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং ঘণ্টাদেড়েক অবরোধ করে রাখল কংগ্রেস।

প্রদেশ সভাপতি অধীর সাম্প্রতিক কালে বারেবারেই বলেছেন, তাঁদের দল শুধু উত্তরবঙ্গে আছে, এই প্রচার থেকে সংগঠনকে তাঁরা বার করে আনতে চান। সবংয়ে ছাত্র-হত্যার প্রতিবাদে সেই লক্ষ্যেই সীমিত শক্তি নিয়েও বাংলা বন্‌ধ ডেকেছিলেন অধীর। এ বার নবান্ন অভিযানেও তাঁদের লক্ষ্য ছিল অভিন্ন। কলকাতা এবং হাওড়ায় এ দিনের কর্মসূচিতে কংগ্রেসের শক্তি অনুপাতে ভিড় হয়েছিল ভালই। অধীরের জেলা মুর্শিদাবাদ থেকে প্রত্যাশিত ভাবেই এসেছিলেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যার কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। আর এর সঙ্গেই তাঁদের বাড়তি পাওনা, অধীরের পাশে দাঁড়িয়েই এ দিন মানস ভুঁইয়া, সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতো প্রবীণ নেতারা দলকে চাঙ্গা করার বার্তাই দিয়ে গিয়েছেন। হাজির ছিলেন সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী, মৌসম বেনজির নূর, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়রাও। বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর সময়ে এমন ‘ঐক্যের ছবি’ দেখানোর দিনে অনুপস্থিত বলতে ছিলেন আব্দুল মান্নান ও দীপা দাশমুন্সি। যদিও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই অধীর এই ‘ব্যতিক্রম’কে গুরুত্ব দিতে চাননি।


প্রতিবাদ। মহিলা পুলিশ নেই, তাই ক্ষুব্ধ মহিলা আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

সবং-কাণ্ড, কেতুগ্রামে ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন-সহ সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে এ দিন নবান্নে গিয়ে রাজ্য পুলিশের ডি়জি-র কাছে দাবিপত্র দিতে চেয়েছিল কংগ্রেস। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, হাওড়া এবং সাঁতরাগাছি থেকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি ছিল। কিন্তু ডিজি জিএমপি রেড্ডি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘জরুরি কাজে’ তিনি বাইরে থাকবেন। এই ঘোষণায় পাছে কংগ্রেস কর্মীরা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন, এই আশঙ্কায় এ দিন তিন জায়গাতেই পুলিশি বন্দোবস্ত ছিল ব্যাপক। রানি রাসমণি থেকে কংগ্রেস কর্মীরা অবশ্য ব্যারিকেড ভাঙার দিকে না গিয়ে সম্পূর্ণ উল্টো দিকে এস এন ব্যানার্জি রোড ও জওহরলাল নেহরু রোডের সংযোগস্থলে বসে পড়েন। আটকে যায় যান চলাচল।

ডিজি থাকবেন না বলে জানানোর পরে অধীরদের দাবি ছিল, অন্য কোনও পুলিশ আধিকারিককে দাবিপত্র নিতে হবে। কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে পুলিশের কেউ না আসায় অধীর এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের স্মারকলিপি নিতে দিদি আপনার এত ভয় কীসের? আপনার কাছে কোনও উত্তর নেই বলেই স্মারকলিপি নিলেন না! এতে আমাদের নৈতিক জয় হল।’’ এর পরেই তাঁর ঘোষণা, ‘‘নবান্নে যাওয়ার অধিকার আমাদের নেই। কিন্তু আমরা নবান্নকে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে চাই! আপনারা লাঠি, কাঁদানে গ্যাস খেতে রাজি? তা হলে চলুন পথ অবরোধ করি!’’ অধীরের নেতৃত্বে ডোরিনা ক্রসিংয়ের দিকে দৌড়নোর সময় কংগ্রেস কর্মীদের ধাক্কায় লুটিয়ে পড়ে পুলিশের কয়েকটি গার্ড রেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানার প্রতীক হিসাবে নিয়ে-আসা রাবণের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। গোটা কর্মসূচিতে উত্তেজনা বলতে ওইটুকুই। হাওড়ার ফোরশোর রোডের কোল ডিপো এবং সাঁতরাগাছিতে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের হ্যাংস্যাং মোড়েও সভা হওয়ার পরে পুলিশ কংগ্রেস কর্মীদের গ্রেফতার করে। ঘটনাস্থলেই তাঁদের নিঃশর্ত জামিনে মুক্তিও দেওয়া হয়। আগের দিনের অভিযান থেকে শিক্ষা নিয়ে মাথায় হেলমেট-সহ পুলিশ রণসজ্জায় থাকলেও কোথাওই কোনও অশান্তি হয়নি।

বস্তুত, কোনও বিশৃঙ্খলা ছাড়াই রাস্তায় বসে থেকে পুলিশকে দাবিপত্র নিতে বাধ্য করিয়ে তাদের ‘নৈতিক জয়’ হয়েছে বলেই মনে করছে কংগ্রেস শিবির। দেড় ঘণ্টা অবস্থানের পরে বিকাল চারটে নাগাদ কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আর শিবকুমার ঘটনাস্থল থেকে দাবিপত্র নিলে অবরোধ উঠে যায়। তত ক্ষণে অবশ্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। এই আন্দোলন থেকে উৎসাহিত হয়েই হয়ে কিছু দিনের মধ্যে ‘মেদিনীপুর ও বর্ধমান চলো’র কর্মসূচি নিয়েছেন অধীর। কোচবিহার থেকে দীঘা পর্যন্ত পদযাত্রারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে সনিয়া-রাহুল গাঁধীকে নিয়ে ব্রিগেডে সমাবেশের পরিকল্পনাও আছে অধীরের।

কংগ্রেস এ ভাবে গা-ঝাড়া দেওয়ায় স্বভাবতই তাদের কটাক্ষ করেছে শাসক দল। নবান্নে বসেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘সিপিএম এবং কংগ্রেসের এক দল নেতা আর তাঁদের কতিপয় সমর্থক অবরোধের নাটক করছেন! ওদের এই সব আন্দোলনে বাংলার মানুষের হয়রানি হচ্ছে।’’ বিরোধী কংগ্রেস-সিপিএম ধ্বংসাত্মক পথে বাংলাকে নিয়ে যেতে চাইছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেন পার্থবাবু।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE