Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

একজোট হয়েই পাহাড়ে ফের আন্দোলনের দাবি

মনিতেই এনআরসি-তে অসমে গোর্খাদের অনেকের নাম বাদ যাওয়ায় পাহাড়ে বিপাকেই পড়েছেন বিজেপি নেতারা। ফের দার্জিলিঙে স্লোগান উঠেছে সাংসদকে পাহাড়ে উঠতে দেওয়া হবে না।

অসুস্থ বিনয় তামাংকে আনা হচ্ছে শিলিগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র

অসুস্থ বিনয় তামাংকে আনা হচ্ছে শিলিগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র

শুভঙ্কর চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১৫
Share: Save:

কলকাতার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মালিকপক্ষ ২০ শতাংশ বোনাসের দাবি মেনে নেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ে রাজনীতির অঙ্ক কষা শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই সাফল্যকে হাতিয়ার করে এ বার বিনয় তামাংপন্থী মোর্চা এবং সাত চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ কমিটি এক সঙ্গে রাজনীতির ময়দানেও জমি অধিকার করতে নামবে। সাত চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ কমিটি তথা সিপিএমের নেতা সমন পাঠক বলেই দেন, ‘‘আমাদের সাফল্য শ্রমিক আন্দোলনের জয়। এ ভাবেই পাহাড়ে আগামীতে যৌথ আন্দোলন হবে।’’ সমনের কথায় পাহাড়ে বিজেপি বিরোধী জোট তৈরির ইঙ্গিত রয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। এ দিনই সকালে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় সাংসদ রাজু বিস্তার কুশপুতুল পুড়িয়েছেন বিনয়পন্থীরা। তবে বিজেপি এবং বিমল গুরুংপন্থীরা যে সহজে মাঠ ছেড়ে দেবেন না, সে কথাও এ দিনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। বিমলপন্থী মোর্চার মুখপাত্র বিপি বজগাই বলেছেন, ‘‘এক বারেই ২০ শতাংশ বোনাস দেওয়ার কথা ছিল। তা দেওয়া হল না। এটা অন্যায়।’’

তবে এমনিতেই এনআরসি-তে অসমে গোর্খাদের অনেকের নাম বাদ যাওয়ায় পাহাড়ে বিপাকেই পড়েছেন বিজেপি নেতারা। ফের দার্জিলিঙে স্লোগান উঠেছে সাংসদকে পাহাড়ে উঠতে দেওয়া হবে না। এর আগেও বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে পাহাড়ে উঠতে না দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন মোর্চা। তার আগে সুবাস ঘিসিংয়ের আমলেও পাহাড়ে উঠতে বাধা পেতে হয়েছিল অশোক ভট্টাচার্যদের। যদিও শ্রমিকদের ২০ শতাংশ বোনাস
পাইয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিস্তা। এ দিন বিবৃতি দিয়ে আন্দোলনের সাফল্যকে শ্রমিকদের জয় বলেছেন তিনি। পাশাপাশি বিনয়ের অনশন নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘রাজ্যের সরকারি দলের সঙ্গী বিনয় তামাংরা ইচ্ছে করলে আগে সহজেই সমস্যা মেটাতে পারতেন। তবে তা করেননি। আমি দার্জিলিং চায়ের উন্নয়নের জন্য শ্রমিক, মালিক সংগঠন, টি বোর্ড সকলকে নিয়েই কাজ করতে চাই।’’ তবে কটাক্ষের সুরে পাহাড় তৃণমূলের সভাপতি লাল বাহাদুর রাই বলেন, ‘‘সাংসদ কোনও কাজ করেন না।
এখন বিপাকে পরে রাজ্য সরকারের গুণগান করছেন।’’

এ দিন পাহাড়ে সব থেকে খুশি বিনয়পন্থী মোর্চার নেতারা। ৬ অক্টোবর অনশনে বসেছিলেন বিনয়। টানা ৬ দিন অনশনের পর দাবি পূরণকে তাঁদের জয় হিসেবে ইতিমধ্যেই পাহাড়ে প্রচার শুরু করেছেন বিনয় অনুগামীরা। বোনাস আন্দোলন বিজেপি বাদে পাহাড়ের প্রায় সব ক’টি দলকেও একজোট করতে পেরেছিলেন তাঁরা। পৃথক রাজ্যের আন্দোলনের বাইরে চা শ্রমিকদের বোনাস নিয়ে পাহাড়ের সব দলের একত্রিত হয়ে আন্দোলন এই প্রথম।

শুধু তাই নয়, আন্দোলনের পদ্ধতি নিয়েও দলে সাফল্য দাবি করা হয়েছে। বন্‌ধ, ভাঙচুর, অবরোধ, আগুন নিয়ে যে আন্দোলন সেই সুবাস ঘিসিংয়ের আমল থেকে পাহাড়ে চলছে, তার উল্টো দিকে গিয়ে শান্তিপূর্ণ, অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমেও যে দাবি আদায় সম্ভব, বিনয় ও শ্রমিক সংগঠনগুলির আন্দোলন তা প্রমাণ করে দৃষ্টান্ত
স্থাপন করল বলেই মনে করছেন পাহাড়ের অনেকে। বিনয়পন্থী মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অনীত থাপা
বলেন, ‘‘ভরা পর্যটন মরসুমে পর্যটন ব্যবসার ক্ষতি না করে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় পাহাড়ের ইতিহাসে লেখা থাকবে। আমরা পাহাড়ের শান্তি এবং উন্নয়ন দু’টোই চাই। তার জন্য কী ভাবে আন্দোলন পরিচালিত করতে হয় তা জানি।’’ আন্দোলনের সাফল্যকে ভোটের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করতে চাইছেন অনীত। তিনি বলেন, ‘‘ভোট নিয়ে পালিয়ে যাওয়া বিজেপি তাদের দুঃখের দিনে পাশে দাঁড়ায়নি, সে কথা প্রতিটি চা বাগানে সভা করে প্রচার করব আমরা। আর ভোট না পেয়েও আমরা পাট্টা দেওয়া, চাকরি দেওয়া, বোনাস আদায়-সহ লাগাতার মানুষের নানা কাজ করে যাচ্ছি সে কথাও জানাব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Tea Workers Darjeeling Bonus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE