শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।
শুভেন্দু অধিকারী বুধবার তৃণমূলের বিধায়ক পদ ছাড়ার পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘‘শুভেন্দুবাবু আমাদের দলে আসবেন বলে শুনছিলাম। হয়তো সে দিকেই গতিপ্রকৃতি যাচ্ছে। তিনি আমাদের দলে এলে স্বাগত জানাব।’’ আর বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়ের বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর বলেছিলাম, ও দল ছেড়ে দিলে আমি আরও খুশি হব। আজ ওর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। শুভেন্দু গণ আন্দোলনের ফসল। ও বিজেপিতে এলে দল শক্তিশালী হবে।’’ তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, বেশ কিছু দিন ধরেই দলের একাংশ যে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল, তা এ দিন শুভেন্দুর ইস্তফার পরে প্রকট হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের লোকসভার সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল।’’
শুভেন্দু কবে বিজেপি-তে যোগ দেবেন, তা অবশ্য জানাতে পারেননি দিলীপবাবু এবং মুকুলবাবু। আগামী পরশু, শনিবার মেদিনীপুরে জনসভা করার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, সেখানে শাহের মঞ্চে ওই দলে যোগদান করতে পারেন শুভেন্দু। তবে বিজেপির অন্য সূত্রের দাবি, শনিবারের আগেই শুভেন্দু দিল্লি গিয়ে দল বদল করে রাজ্যে ফিরে আসতে পারেন। শাহের মেদিনীপুরের সভামঞ্চে তাঁকে দেখা যেতে পারে। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দিলীপবাবু এ দিন বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবু বিজেপিতে কবে আসবেন, তিনিই ঠিক করবেন। আমরা নিতে প্রস্তুত আছি।’’ শনিবার শাহের সভামঞ্চে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেবেন কি না, তা জানেন না বলে দাবি করেছেন দিলীপবাবু এবং মুকুলবাবু। মুকুলবাবুর আরও দাবি, তাঁর সঙ্গে এখনও শুভেন্দুর কথা হয়নি।
বিধায়ক পদ থেকে শুভেন্দুর ইস্তফাপত্র গৃহীত হবে কি না, তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সে প্রসঙ্গে দিলীপবাবুর মন্তব্য, ‘‘বিধানসভার স্পিকারের অধিকার আছে এটা ঠিক করার। কিন্তু কেউ পদত্যাগপত্র দিলে তা গ্রহণ করব না বলা যায় কি না, জানি না। আর শুভেন্দুবাবু তো বলেই দিয়েছেন, তৃণমূলের বিধায়ক উনি আর থাকছেন না!’’ মুকুলবাবু বলেন, ‘‘স্পিকার বিধানসভায় না থাকলে বিধানসভার সচিব বিধায়কের পদত্যাগপত্র নিতে পারেন। তিনি কারও চাপে ইস্তফা দিচ্ছেন কি না, তা সচিব তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আর শুনেছি শুভেন্দু পদত্যাগপত্র ই-মেলও করেছে।’’ এ দিনই বিধানসভায় যান দিলীপবাবুও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিধায়ক থাকাকালীন যে টাকা পেতাম, তার কিছু এখনও পাওনা আছে। সেই সংক্রান্ত কাজে বিধানসভায় গিয়েছিলাম।’’
আরও পড়ুন: স্পিকার ডাকলে আবার এসে তাঁর হাতেই ইস্তফা দিয়ে যাবেন ‘মুক্ত’ শুভেন্দু
শুধু শুভেন্দু নন, তৃণমূলের মধ্যে ‘বেসুরো’ নেতা-জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বাড়ছে। ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদারের ‘বেসুর’ এ দিন প্রকাশ্যে এসেছে। দিলীপবাবু এবং মুকুলবাবুর বক্তব্য, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে যাঁরা ওই দলে আছেন, যাঁদের অবদানে দল ক্ষমতায় এসেছে, তাঁদের সেখানে দমবন্ধ হয়ে এসেছে। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘যে দলকে মন্ত্রীরা বিশ্বাস করতে পারেন না, সেই দলকে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবেন কী ভাবে?’’ এই প্রেক্ষিতেই দিলীপবাবুর তির্যক মন্তব্য, ‘‘করোনা ভাইরাস কবে যাবে, কেউ বলতে পারবে না। কিন্তু তৃণমূল ভাইরাস মে মাসে চলে যাবে, নিশ্চিত।’’ মুকুলবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল ছেড়ে ২৫, ৫০, এমনকি ১০০ জন বিধায়কও আসতে পারেন।’’
আরও পড়ুন: দিদি-ফোনের পরেও সুনীলের বাড়িতে শুভেন্দুর সঙ্গে জিতেন্দ্রর বৈঠক
তৃণমূল ভাঙার জন্য বিজেপিকে দোষারোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তার জবাবে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমরা আমাদের কাজ করছি, লড়াই করছি। আমাদের কাজে প্রভাবিত হয়ে মানুষ যদি বিজেপিতে আসেন, দোষ নেই। উনি বলছেন, আমার বাড়ি ভেঙে দিচ্ছে। যিনি অন্যের বাড়ি ভেঙে নিজের বাড়ি গড়েছিলেন, তাঁর বাড়ি তো এখন এই ভাবে ভাঙবেই।’’
একই সুরে বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও মমতাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমরা বহু দিন ধরেই বলছি, অন্যের ঘর ভাঙার যে খেলা তৃণমূল শুরু করেছিল, তাতেই এক দিন তৃণমূলের ঘরও ভাঙবে।’’ শুভেন্দুর এ দিনের পদত্যাগের পর মান্নান বলেন, ‘‘স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ওঁর লড়াই সফল হবে আশা করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy