Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

‘মানুষের জোট’ ফিরল শুভেন্দুর জেলায়

শুভেন্দুর ব্যাখ্যায়, যেখানে বিজেপির শক্তি কম, সেখানে তাঁদের সমর্থকেরা ভোট দেবেন মানুষের জোটকে। তার পরিপূরক হিসাবে তিনি জুড়ে দিয়েছেন ‘নো ভোট টু মমতা’ স্লোগানটিও।

Suvendu Adhikari

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩ ০৬:৫২
Share: Save:

সাত বছর পরে আবার ভোট ময়দানে ফিরল ‘মানুষের জোট’।

২০১৬ সালে এই শব্দবন্ধটাই ফিরত বাম নেতাদের মুখে মুখে। সে বারে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে রাজ্যের ভোটে প্রথম বারের জন্য নেমেছিল বামেরা। আর এ বারে পঞ্চায়েত ভোটে সেই একই স্লোগান ফিরে এল বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর মুখে। তাঁর ব্যাখ্যায়, যেখানে বিজেপির শক্তি কম, সেখানে তাঁদের সমর্থকেরা ভোট দেবেন মানুষের জোটকে। তার পরিপূরক হিসাবে তিনি জুড়ে দিয়েছেন ‘নো ভোট টু মমতা’ স্লোগানটিও।

এ দিন প্রচারের শেষ লগ্নেও শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘যেখানে পদ্মফুল চিহ্ন নেই, সেখানে মানুষ ‘নো ভোট টু মমতা’ মাথায় রেখে ভোট দিন।’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা বলেছেন, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি মিলে জোট গড়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মানুষের সমর্থন ওঁদের সঙ্গে নেই, সংগঠন নেই।’’

শুভেন্দুর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে কিন্তু অনেক জায়গাতেই রাম-বাম-নির্দল-কংগ্রেস একত্র হয়েছে। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের চারটি পঞ্চায়েত নন্দীগ্রাম, সামসবাদ, কেন্দেমারি এবং দাউদপুরে এই ‘মানুষের জোটে’র সঙ্গেই লড়তে হচ্ছে তৃণমূলকে। পরিসংখ্যান বলছে, নন্দীগ্রামের ৬৬টি আসনে আর গোটা জেলায় সব মিলিয়ে ৫৬৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে পদ্ম-প্রার্থী নেই। সেখানেই শুভেন্দুর বার্তা, ‘‘ওখানে মানুষের জোট হয়েছে। কোনও ভাবেই তৃণমূলকে জিততে দেব না।’’

বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের ঘোষিত অবস্থান কিন্তু এর বিপরীত। সম্প্রতি জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে বিশেষ সাংগঠনিক সভায় রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল-সহ শীর্ষ নেতাদের সামনেই দলের পঞ্চায়েত বিষয়ক প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক দেবশ্রী চৌধুরী স্পষ্ট করেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্থানীয় ভাবেও তৃণমূল-বিরোধী দলগুলির মধ্যে ‘সমঝোতা’ হবে না। বিজেপি একাই লড়বে। যদি কেউ তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের বিরুদ্ধে এক লড়াই চান, তাঁকেও বিজেপির প্রতীক নিয়েই লড়াই করতে হবে। সেই সভায় অবশ্য শুভেন্দু ও দিলীপ ঘোষ ছিলেন না।

‘উপরতলা’র এই বার্তা নিচুতলায় কতটা পৌঁছেছে? নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশের পরে রাজ্য বিজেপির তরফে পিডিএফ আকারে যে নির্দেশিকা জেলায় গিয়েছে, তাতেও কিন্তু ‘যেখানে বিজেপি প্রার্থী নেই’ সেখানে নির্দল বা তৃণমূলকে হারাতে যারা সক্ষম, তাদের সমর্থনের ইঙ্গিত রয়েছে। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও বলছেন, “সব সময় মূল গ্রামীণ সমীকরণ মূল রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত হয় না।”

পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে গত নভেম্বরে বাম-বিজেপি জোট করে বহরমপুর সমবায় জেতে। তখনই চর্চায় আসে ‘নন্দকুমার মডেল’। পঞ্চায়েতেও এই জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে এমন সমঝোতা দেখা যাচ্ছে। যেমন, তমলুক ব্লকের নীলকুন্ঠা গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে সিপিএমের প্রার্থীর সঙ্গে মিলিত ভাবে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের বিজেপি প্রার্থীর দেওয়াল লিখন হয়েছে। তমলুক, ময়না, শহিদ মাতঙ্গিনী, নন্দকুমার ও চণ্ডীপুর ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে রাম-বাম জোট বেঁধে নির্দল প্রার্থী দিয়েছে।

তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্রের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলকে হারাতে জেলার কিছু জায়গায় বিজেপি ও সিপিএম আঁতাঁত হয়েছে। তবে মানুষ ওদের ঘোঁটকে প্রত্যাখান করবে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি মানছেন, ‘‘তৃণমূলকে হারাতে কিছু ক্ষেত্রে গ্রামীণ ভাবে বিজেপি ও বামফ্রন্টের সমঝোতা হয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সম্পাদক মেঘনাদ পালেরও স্বীকারোক্তি, ‘‘কিছু জায়গায় মানুষের জোটকে সমর্থন করছি আমরা।’’

সহ-প্রতিবেদন: বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়, আনন্দ মণ্ডল, সৌমেন মণ্ডল

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE