বাঁ দিক থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, নিরঞ্জন জ্যোতি, শুভেন্দু অধিকারী। — ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’ অভিযোগের পাল্টা জবাব দিতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতির পর ময়দানে নামতে চলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার জ্যোতির পাশে বসেই তিনি জানিয়ে দিলেন, রাজ্যের বহু মানুষ কেন্দ্রীয় সুবিধা পাওয়ার ‘যোগ্য’ হলেও পাননি। পুজোর পর এ রকমই প্রায় এক লক্ষ মানুষকে কলকাতায় নিয়ে আসবেন তিনি। তাঁরা জানাবেন নিজেদের ক্ষোভ। শুভেন্দু এ-ও জানিয়েছেন, তিনি চান, ওই মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সম্মতি দিয়েছেন জ্যোতি।
শুভেন্দুর অভিযোগ, রাজ্যে এক লক্ষ ভুয়ো জব কার্ড হোল্ডার রয়েছে। সেই জব কার্ড দেখিয়ে ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রের বরাদ্দের টাকা নয়ছয় হয়েছে। এ নিয়ে দিল্লিতে জ্যোতির দফতরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন শুভেন্দু। এ বার কলকাতায় সেই জ্যোতির পাশে বসে আবারও একই অভিযোগ তুললেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন, তখন সেক্টর ফাইভে বিজেপির দফতরে বসে শুভেন্দু জানালেন, বহু মানুষ কেন্দ্রীয় সুবিধা পাওয়ার অধিকার থাকলেও তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন। পরিবর্তে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, চাকরিপ্রাপ্তদের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায় বাড়ি পাইয়ে দিয়েছে তৃণমূল। যাঁরা ‘বঞ্চিত’ হয়েছেন, পুজোর পর তাঁদের কলকাতায় এনে জমায়েত করতে চান।
এ বিষয়ে যে দলের সঙ্গে শুভেন্দু আলোচনা করেননি, তা-ও তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট। শনিবার জ্যোতির এক পাশে ছিলেন শুভেন্দু। অন্য পাশে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। নিজের এই পরিকল্পনার কথা জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি তাঁকে (সুকান্ত) বলব এটা নিয়ে ভাবতে।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘আমি চাইব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।’’ জ্যোতি তাতে সম্মতি দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি ঝাঁসির রানির দেশের মেয়ে। আমি পালিয়ে যাওয়ার পাত্রী নই।’’
বিজেপি ক্রমেই বুঝতে পারছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র বিষয়টি ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে। তৃণমূল যে ভাবে প্রচারে নেমেছে এই নিয়ে, তার প্রভাব ভোটব্যাঙ্কেও পড়তে পারে। এখন এটা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য, দুই সরকারের মধ্যে আলোচনার বিষয় হিসাবে সীমাবদ্ধ নয়। বরং কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসকদলের রাজনৈতিক যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এই রাজনৈতিক যুদ্ধের জবাব দিতেই কলকাতায় এসেছেন জ্যোতি। দিল্লিতে তিনি তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ অস্বীকার করে শনিবার তিনি এ-ও জানান, কলকাতায় যেখানে খুশি তিনি বসে তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সব তথ্য নিয়ে এসেছি। কলকাতার যেখানে খুশি বসে তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলতে পারি। দরকারে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরেও বৈঠক হতে পারে। কিন্তু তৃণমূল বসবে না। ওরা কথা বলতে চায় না। ওরা নাটক চালিয়ে যেতে চায়।’’ সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দাবি করেন, গত মঙ্গলবার কৃষি ভবন থেকে তিনি পালিয়ে যাননি। তৃণমূলের জন্য আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূল কথাই বলতে চায়নি। বদলে নাটক করেছে।
জ্যোতি যে দাবিই করুন না কেন, রাজ্য বিজেপি বুঝেছে, এই রাজনৈতিক যুদ্ধ জিইয়ে রাখলেই তৃণমূলের ‘লাভ’। আর সেটাই তারা করে চলেছে। দিল্লিতে ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’ নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর পর কলকাতায় রাজভবনের বাইরে ধর্না শুরু করেছেন অভিষেক। দাবি, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি রাজ্যপালকে রাজ্যের মানুষের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি জমা না-দেওয়া পর্যন্ত চলবে ধর্না। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলকে পাল্টা জবাব দিতেই পুজোর পর মাঠে নামতে চান শুভেন্দু। এ ক্ষেত্রে রাজ্যের ‘বঞ্চনা’কেই হাতিয়ার করতে চান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy