(বাঁ দিকে) নুসরত জাহান এবং শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
ফ্ল্যাট বিক্রির নাম করে মোটা টাকা অগ্রিম নিয়েও ফ্ল্যাট না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান-সহ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে। যাঁরা এই অভিযোগ তুলেছেন, সেই সব প্রবীণ সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে শুক্রবার দেখা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। ‘প্রতারিত’দের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিরোধী দলনেতা জানালেন, ‘প্রতারিত’দের আইনি লড়াইয়ে বিজেপি সব রকম ভাবে সাহায্য করবে। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত যা যা পদক্ষেপ করেছেন, সবই আমার নজরে রয়েছে। যোগাযোগও রাখছি। শাসকদলের হাতে যাঁরা অত্যাচারিত, তাঁদের পাশে বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী দল হিসাবে দাঁড়াবে বিজেপি।’’
গত সোমবার থেকে নুসরতকে নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত। বিজেপির নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা অভিযোগ করেছিলেন, ২০১৪-’১৫ সালে ৪০০-র বেশি প্রবীণ নাগরিক ‘সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ নামে একটি সংস্থায় অর্থ জমা দেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। বদলে তাঁদের এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সাল নাগাদ তাঁদের জানানো হয়, ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করা যাচ্ছে না। তাঁদের টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। অভিযোগকারীদের বক্তব্য, তাঁদের অনেকেই পুরো টাকা ফেরত পাননি। অনেকে কোনও টাকাই পাননি। অনেকে অল্প কিছু টাকা পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হন। যান ক্রেতাসুরক্ষা দফতরের কাছেও। আদালত কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনারকে (অপরাধ) তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে সেই তদন্ত রিপোর্টে ‘অনিয়ম’ পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। গত জানুয়ারি মাসে নুসরতকে আদালতে হাজিরা দিতেও বলা হয়েছিল। কিন্তু নুসরত আদালতে যাননি।
বিজেপির দাবি, অভিযোগকারীরা প্রথমে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে গিয়েছিলেন। শুভেন্দু মঙ্গলবারেই সে কথা জানিয়ে বলেছিলেন, তিনিই শঙ্কুকে বলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে ইডির দ্বারস্থ হতে। সেই মতো শঙ্কু ওই প্রবীণদের মধ্যে কয়েকজনকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে নিয়ে যান। তার পরেই বিষয়টি আবার প্রকাশ্যে এসে পড়ে। এর পর শুক্রবার ‘প্রতারিত’দের সঙ্গে দেখা করে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘প্রবীণ প্রতারিতেরা প্রথম থেকে শঙ্কুদেব পণ্ডার মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। ওঁরা যা পদক্ষেপ করেছেন, সবই আমার নোটিসে আছে। ৪১৫ জন প্রতারিত হয়েছেন। মোট ২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শাসকদলের সাংসদ-সহ অন্যান্যরা রয়েছেন। ৩৩০ জনের একটা মঞ্চ তৈরি হয়েছে। আমি ওঁদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেছি। তাতে দুটো বক্তব্য উঠে এসেছে। এক নম্বর, যাঁরা প্রতারণা করেছেন, তাঁদের শাস্তি। ওঁরা সবাই শাসক ঘনিষ্ঠ। দ্বিতীয় হচ্ছে— ওঁদের গচ্ছিত অর্থ যাতে ওঁরা ন্যূনতম সুদে ফেরত পান। এদের একটা আইনি লড়াই চলছে। আমিও দেখছি। শঙ্কুরা সমন্বয় করবে। আমাদের কোনও রাজনৈতিক শর্ত নেই। শাসকদলের দ্বারা অত্যাচারিত, তাদের পাশে বিজেপি বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী দল হিসাবে দাঁড়াবে।’’
বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে নুসরত নিজের বক্তব্য জানান। সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি। মেরেকেটে ১০ মিনিটের সাংবাদিক বৈঠকে নুসরত বলেছিলেন, ‘‘যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তাদের থেকেই এক কোটি ১৬ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮৫ টাকার ঋণ নিয়েছিলাম। সেই টাকায় বাড়ি কিনেছি। ২০১৭ সালের ৬ মে সুদ-সহ এক কোটি ৪০ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৯৫ টাকা ফেরত দিয়েছি কোম্পানিকে। ব্যাঙ্কের নথিও আমার কাছে আছে। ৩০০ শতাংশ চ্যালেঞ্জ করতে পারি যে আমি দুর্নীতিতে যুক্ত নই! আমি এক পয়সা নিলেও এখানে আসতাম না।’’ নুসরতের আরও বক্তব্য, তিনি ওই সংস্থার শেয়ারহোল্ডারও নন। তিনি ওই সংস্থার ডিরেক্টরের পদ থেকে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ইস্তফা দিয়েছেন। তার পরে তাঁর সঙ্গে ওই সংস্থার আরও কোনও সম্পর্ক নেই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুধবারেই বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। এটা ওদের (নুসরতের) বিষয়। সেটা ওরা (নুসরত) নিজেরাই বলবে।’’ তবে একইসঙ্গে মমতা অভিযোগ করেছিলেন, প্রামাণের আগেই দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম বিচারসভা (মিডিয়া ট্রায়াল) বসিয়ে দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘ডিরেক্টর তো অনেকেই থাকে! নুসরত যদি কোনও জায়গায় ডিরেক্টর থেকেও থাকে, তা হলে ওরকম ডিরেক্টর তো অনেক আছে! ওদেরও (বিজেপির) তো কে একজন সাংসদ আছেন, যাঁর বিরুদ্ধে ইডিতে কমপ্লেন (অভিযোগ) আছে। যিনি বিদেশেও গিয়েছিলেন চিটফান্ডের মালিকের সঙ্গে। আমি নাম বলতে চাইছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy