শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষ —ফাইল চিত্র
চ্যালেঞ্জের মুখে দিলীপ ঘোষ। এমনটাই বলছে গেরুয়া শিবির। বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই দলের ভরকেন্দ্র কিছুটা বদলাতে থাকে। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার দিন থেকেই বাড়তি গুরুত্ব পেতে শুরু করেন। সেই সময় দিলীপ শিবির একটু হলেও খুশি হয়েছিল কারণ, শুভেন্দুর যোগদানে মুকুল রায়ের গুরুত্ব অনেকটাই কমে যায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। একটা বড় সময় পর্যন্ত সাংগঠনিক ক্ষমতা মুকুলের দিকে যাতে না চলে যায় তার জন্য চিন্তিত ছিল দিলীপ শিবির। পাশে ছিল সঙ্ঘ পরিবার। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা দখলের আশাভঙ্গের পরে বিজেপি-তে এই রাজ্যের সঙ্ঘকর্তাদের রাশ অনেকটাই আলাদা হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, বিরোধী দলনেতা ঘোষণার পর থেকে ক্রমশই রাজ্য বিজেপি-র মুখ হয়ে উঠছেন শুভেন্দু। যেটা এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে শুভেন্দুর সাম্প্রতিক দিল্লি সফরে।
শুভেন্দুর এই সফর নিয়ে রাজ্য বিজেপি-তে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। বাংলায় দলের ছন্নছাড়া অবস্থার মেরামতিতে শুভেন্দুর উপরে যে কেন্দ্রীয় নেতারা বেশি ভরসা করছেন তা নিয়েও চলছে আলোচনা। রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘মুকুল রায় দলে থাকবেন কি না তা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারাও চিন্তিত। এই অবস্থায় বাংলার রাজনীতিতে দিলীপের তুলনায় অভিজ্ঞ শুভেন্দুর উপরে ভরসা করাই হয় তো ঠিক বলে মনে করছেন দিল্লির নেতারা।’’ আর এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘অনেক সাংসদই দিলীপদাকে নিয়ে খুশি নন। তাঁরা অনেক দিন ধরেই সেই অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনের জন্য সে সব নিয়ে মাথা ঘামানো সম্ভব ছিল না। এখন এমনটাও হতে পারে যে, রাজ্য সভাপতির বাইরেও একটা ক্ষমতার কেন্দ্র হয়ে উঠবেন শুভেন্দু অধিকারী। কারণ, এখন দলের ক্ষুব্ধদের ধরে রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ।’’
দিলীপ শিবির চিন্তায় থাকলেও তা মানতে রাজি নয়। তাদের ভরসার জায়গা সঙ্ঘ পরিবার। সংগঠনে আরএসএস ঘনিষ্ঠ নয় এমন কারও গুরুত্ব বৃদ্ধি সঙ্গ মানবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা। দিলীপ শিবিরের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘রাজ্য বিজেপি-র সবচেয়ে সফল সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আজ দল যে জায়গায় এসেছে তার সবটাই দিলীপদার পরিশ্রমে হয়েছে। এখন দলের জেলা নেতৃত্বকে উজ্জীবিত করতে তিনি সফর করে চলেছেন। এটা সবাই জানেন যে, দিলীপদা দিল্লি গিয়ে বৈঠকের রাজনীতি করেন না। রাস্তায় নেমে কাজ করতে ভালবাসেন। সেটাই করে চলেছেন। আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও জানে যে দিলীপদাই সংগঠনকে চাঙ্গা করার জন্য যোগ্য।’’
সোমবার দিলীপকে না জানিয়েই দিল্লি যান শুভেন্দু। মঙ্গল ও বুধবার যে ভাবে জেপি নড্ডা, অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন তা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, এই সফর আচমকা নয়। আগে থেকেই সাক্ষাৎ ও বৈঠকের সময় ঠিক হয়েছিল। অথচ দিলীপকে গোটাটাই অন্ধকারে রাখা হয় বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারাই। ‘‘শুভেন্দু কেন দিল্লি গিয়েছেন সেটা দিল্লির নেতারাই বলতে পারবেন,’’— বলে দিলীপ সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি আগে থেকে কিছু জানতেন না। অথবা জানলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেননি। স্পষ্টতই দিলীপের গলায় অভিমান শোনা যায় মঙ্গলবার।
বুধবার মোদীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে শুভেন্দু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি দিলীপের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে চান। কিন্তু বিষয়টাকে অত সহজ ভাবে দেখছে না দিলীপ শিবির। তাঁদের আশঙ্কা, বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব পাওয়ার পরে এ বার সংগঠনেও ক্ষমতার অধিকারী হবে শুভেন্দু। গত মঙ্গলবার রাজ্য পদাধিকারীদের বৈঠকে বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নীতির বিরোধিতায় যাঁরা সরব হয়েছিলেন সেই সৌমিত্র খাঁ, অর্জুন সিংহরাই বুধবার অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সঙ্গে ছিলেন আর এক সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। সেই বৈঠকেও ছিলেন শুভেন্দু। দিল্লিতে শুভেন্দু শুধু মোদী-শাহ-নড্ডার সঙ্গেই বৈঠক করেননি। এই সফরে তিনি বৈঠকে বসেছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র যাদবের সঙ্গে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গেও তার আগে কথা হয়েছে। বুধবার বৈঠক হয়েছে বিজেপি-র তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে পরিচিত অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। যিনি বিধানসভা নির্বাচনে বোলপুরে প্রার্থী হয়েছিলেন। ক্ষমতা দখলের যে স্বপ্ন বিজেপি দেখেছিল তা সত্যি হলে দিল্লিবাসী অনির্বাণ মন্ত্রিসভার উল্লেখযোগ্য মুখ হবেন বলেও পরিকল্পনা ছিল গেরুয়া শিবিরের। এই সব বৈঠকই বাড়াচ্ছে জল্পনা।
এখনই কোনও রদবদল না হলেও অনেকেই মনে করছেন, দিলীপ ও শুভেন্দু দু’টি আলাদা আলাদা ভরকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারেন রাজ্য সংগঠনে। তবে দাঁড়িপাল্লায় কার দিক ভারী হবে সেটা ঠিক করবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তার আগে রাজ্যের নেতারা জল মাপা শুরু করে দিয়েছেন। সেই মতো কোন দিকে ঝুঁকবেন, তা নিয়েও করছেন ভাবনাচিন্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy