Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Berhampur

Sutapa Murder Case: অনেক ছেলেকে নষ্ট করছিস, তোর পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে, শেষ চ্যাটে সুতপাকে লেখে সুশান্ত

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, জঙ্গিপুর কলেজের ছাত্র ওই তরুণের সঙ্গেই খুনের দিন সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন সুতপা। সুশান্ত সে কথা জানতে পারে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২২ ১৫:৪৮
Share: Save:

বহরমপুরের কলেজ পড়ুয়া সুতপা চৌধুরী খুনে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এল তদন্তকারীদের। খুন করার কয়েক দিন আগে সুশান্ত চৌধুরী তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে শেষ যে বার্তাটি পাঠিয়েছিল সেটি উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, সুতপা সেই বার্তাটি পড়েওছিলেন। তবে কোনও জবাব দেননি। যে কথা বেশ কিছু দিন ধরে নিজের ফেসবুক ওয়ালে বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে ‘বোঝানো’র চেষ্টা করছিল সুশান্ত, সেই কথাই সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে লিখে পাঠিয়েছিল সে। সুতপার পরিবারের ঘনিষ্ঠ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণীও ওই হোয়াটসঅ্যাপের কথা জানতেন বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। সুতপা তাঁকে বলেছিলেন ওই বার্তার কথা।

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সুশান্ত হোয়াটসঅ্যাপে সুতপাকে লিখেছিল, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি। স্বপ্ন দেখি সুন্দর জীবনের। কিন্তু আমার জীবন তুই নষ্ট করে দিচ্ছিস। বিশ্বাস করতে পারছি না তোকে। তুই নষ্ট করছিস আমার মতন অনেককেই। এ ভাবে চলতে থাকলে ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে তোর।’ এর কয়েক দিনের মধ্যেই ২ মে সন্ধ্যায় বহরমপুরের গোরাবাজারে রাস্তার উপর বার বার ছুরির আঘাতে সুতপাকে খুন করে সুশান্ত। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আপাতত পুলিশি হেফাজতে থাকা সুশান্তের মোবাইল ঘেঁটে ওই হোয়াটসঅ্যাপের সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

সুতপার বাবা জানিয়েছিলেন, তাঁর বড় মেয়ে সুশান্তের কারণেই অন্তত পাঁচ বার মোবাইল নম্বর বদলেছিলেন। যদিও নতুন সেই নম্বর কোনও না কোনও ভাবে জেনে যেত সুশান্ত। সুতপারই কোনও বন্ধুর মাধ্যমে সে নম্বর জানত বলে সুতপার পরিবারের দাবি। তবে তদন্তকারীদের কাছে সুশান্ত জানিয়েছে, সুতপার ‘বান্ধবী’র কাছ থেকেই সমস্ত তথ্য সে জানতে পারত। সুতপার পরিবারের দু’এক জনও তাকে পছন্দ করতেন বলে জানিয়েছে সে। সুতপার সঙ্গে সম্প্রতি এক তরুণের ঘনিষ্ঠতার কথাও সুশান্ত জানতে পারে বলে পুলিশকে জানিয়েছে সে।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, জঙ্গিপুর কলেজের ছাত্র ওই তরুণের সঙ্গেই খুনের দিন সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন সুতপা। সুশান্ত সে কথা জানতে পারে। তার পরেই চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে সে। জঙ্গিপুর কলেজের ওই ছাত্রকে পুলিশ ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। ওই তরুণ সে দিন সুতপার সঙ্গে মোহন শপিং মলে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সুতপার শুধু ‘বন্ধুত্ব’ই ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি।

সুতপার পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক তরুণী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তিনি সুশান্তের পাঠানো ওই বার্তার কথা জানতেন। তাঁর কথায়, ‘‘সুশান্ত রীতিমতো হুমকি বার্তাই পাঠিয়েছিল সুতপাকে। এক দিন নয়, দিনের পর দিন এমন বার্তা পাঠাত। সুতপা ওর বাবা-মাকে বলেছিল, পুলিশকে জানাতে।’’

যদিও সুশান্তের পরিবারের লোকজনের দাবি, সুতপা সুন্দরী হওয়ায় অনেক যুবকের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতেন। একই সঙ্গে সুশান্তকেও ‘উস্কানি’ দিতেন। সুশান্তের পিসি শান্তিরানি চৌধুরীও একই অভিযোগ করেছেন। তাঁর কাছেই সুশান্ত মানুষ হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুশান্তের এক বন্ধু বলছেন, ‘‘সুতপাই প্রথম প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল আমার বন্ধুকে। প্রথমে সুশান্ত এড়িয়ে গিয়েছিল। তার পর নিজের জীবনকে বাজি রেখে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল। আর তখন থেকেই এড়িয়ে যেতে থাকে সুতপা। ছোট থেকেই শৃঙ্খলার মধ্যে বড় হয়েছে সুশান্ত। বাবাকে ভীষণ ভয় করত। সুতপার মা এক সময় সুশান্ত ও সুতপার সম্পর্কের কথা জেনে যান। তখন সুশান্তের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সকলের সামনে হুমকি দিয়ে আসেন।’’ যদিও সুশান্তের সঙ্গে সুতপার শেষ দিকের ‘সম্পর্ক’ নিয়ে তিনি কিছু জানতেন না বলেই দাবি করছেন ওই যুবক।

এর আগে সুশান্তের ফেসবুক প্রোফাইলে একাধিক পোস্টে দেখা গিয়েছে শুধুই প্রতিহিংসার বার্তা। ভিডিয়ো হোক বা লেখা, সর্বত্রই ছিল ক্ষোভের আঁচ। কোনও কোনও পোস্টে স্পষ্ট ঘৃণার কথা ছিল। গত প্রায় এক বছর ধরেই সুশান্তের ওয়াল ভরে উঠেছে হুমকি, ঘৃণা, ক্ষোভ, প্রতিহিংসার আবহে। তার আগে যদিও সুশান্তের ফেসবুকে পোস্ট করা হত শুধুই প্রেমের কথা, ছবি, ভিডিয়ো। বছরখানেক ধরে সুশান্ত ফেসবুকে যে সমস্ত পোস্ট করেছে, তা পর্যবেক্ষণ করে তদন্তকারীদের ধারণা, এই সময়টা জুড়ে তার মনে অস্থিরতা চলছিল। তারই প্রকাশ দেখা গিয়েছে ফেসবুকে। এ বার সুতপাকে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাতেও তদন্তকারীরা পেলেন সেই ক্ষোভেরই আঁচ। শুধু তাই নয়, একেবারে ‘ভয়ঙ্কর পরিণতি’র হুমকিও রয়েছে সেই বার্তায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Berhampur Murder college student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy