Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

নাম না করেও কুণালের নিশানায় দলের মাথারা

সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই কেন শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের জেরা করছে না, তা নিয়ে আদালতে বারবারই সরব হয়েছেন তিনি। এ বার তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শঙ্কুদেব পণ্ডাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরিপ্রেক্ষিতেও ফের কুণাল ঘোষের নিশানায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:০৫
Share: Save:

সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই কেন শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের জেরা করছে না, তা নিয়ে আদালতে বারবারই সরব হয়েছেন তিনি। এ বার তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শঙ্কুদেব পণ্ডাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরিপ্রেক্ষিতেও ফের কুণাল ঘোষের নিশানায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। তবে এ দিন সরাসরি কারও নাম বলেননি তিনি।

বৃহস্পতিবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে বিচারক বরুণ রায়ের এজলাসে সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস মামলার শুনানির জন্য তৃণমূলের সাসপেন্ডেড রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন এবং তাঁর ছায়াসঙ্গিনী তথা সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে হাজির করানো হয়েছিল।

শুনানির সময় এজলাসে কুণাল বলেন, ‘‘শুধু শঙ্কুকে ডেকে কী হবে? ওকে যে পাঠিয়েছিল, তাকে ডেকে পাঠান!’’ এই প্রসঙ্গেই ক্রিকেট
দলের ‘ক্যাপ্টেনের’ ভূমিকার কথা বলেছেন তিনি। কুণালের বক্তব্য, ক্রিকেট দলে অধিনায়কই বোলার-ব্যাটসম্যান ঠিক করে। এই চুরিতেও যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের ডেকে পাঠানো হোক।

কুণালের এই মন্তব্যের জেরে অনেকেই মনে করছেন, দলের নির্দেশেই শঙ্কুদেব সারদার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তাই দলে শঙ্কুর উপরের সারির নেতাদের কথাই এ দিন বলতে চেয়েছেন একদা দলের শীর্ষ স্তরের ঘনিষ্ঠ কুণাল। যদিও তৃণমূলের নেতারা এ বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শাসক দলের এক নেতার কথায়, ‘‘ও আমাদের দলের কেউ নয়। তা ছাড়া, এক জন অভিযুক্ত কী বলল, তা নিয়ে মন্তব্য করব না।’’

কুণাল যখন তাঁর দল এবং নেত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন, তখন সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য দলনেত্রীর বক্তব্যে সিলমোহরই দিয়েছেন। কয়েক দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কেউ ব্যক্তিগত কারণে চুরি করলে দল দায়ী হবে না। সে ক্ষেত্রে দল চোর হয় না। ব্যক্তি চোর হয়। এ ব্যাপারে এ দিন আলিপুর আদালতে এ প্রশ্নের জবাবে মদনবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মু্খ্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন।’’

কুণালের কটাক্ষ না বদলালেও এ দিন তাঁর শরীরী ভাষায় বদল নজরে পড়েছে। সারদা মামলা সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পর থেকে আদালতের ভিতরে এবং বাইরে বারবার সরব হয়েছেন কুণাল। আদালতের বাইরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর কথা বলা আটকাতে ধাঁই-ধপাধপ শব্দে পুলিশ ভ্যানের গায়ে বাজনাও বাজাতেন এক দল পুলিশকর্মী! সংবাদমাধ্যমের থেকে দূরে রাখতে ইদানীং কুণালকে ঢাকা গাড়িতে সরাসরি নগর দায়রা আদালতের বেসমেন্টে নিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এ দিন আদালতে ঢোকার পথে তিনি মুখ খোলেননি। বেরোনোর পথে তিনি বলেন, ‘‘যত দিন থাকব, নিজের স্বার্থে শান্ত নীরব বন্দি হয়েই থাকব।’’ তাঁর অনশনের ব্যাপারে জেল যে রিপোর্ট দিয়েছিল, তার বিরোধিতা করে গত ২৩ নভেম্বর একটি আর্জিপত্র আদালতে পাঠিয়েছিলেন কুণাল। সে বিষয়টি নিয়ে শুনানির প্রয়োজন নেই বলেও এ দিন আদালতে জানান তিনি।

এ দিন এজলাসে সওয়াল করতে গিয়েও হতাশার সুর শোনা গিয়েছে কুণালের গলায়। কী রকম? সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস মামলার নথি অন্য একটি শুনানির প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে গিয়েছিল। তা নিম্ন আদালতে এখনও ফেরত আসেনি। তার ফলে গত মাস তিনেক ধরে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর শুনানিই হচ্ছে না। এ দিন সেই প্রসঙ্গেই কুণাল বিচারকের কাছে নিজের হতাশা লুকিয়ে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘আদালতে আসছি আর জেলে ফেরত যাচ্ছি! বিচার পাচ্ছি না। আমার আর বিচার দরকার নেই!’’

মামলার নথি ফেরত না আসা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেবযানীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতাও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিচার শুরুর জন্য তৈরি। কিন্তু তা শুরুই হচ্ছে না।’’ তাঁর কটাক্ষ, সিবিআই এর আগে দু’মাসের মধ্যে চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দেবে বলেছিল। কিন্তু সেই সময় পেরিয়ে গেলেও কোনও চার্জশিট জমা পড়েনি।

চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দেওয়া নিয়ে এ দিন কার্যত সদুত্তর দিতে পারেননি সিবিআইয়ের কৌঁসুলি অঙ্কুশ সরকার। তাঁর অভিযোগ, কুণাল ঘোষ তদন্তকারী সংস্থাকে প্রভাবিত করতে চাইছেন। বিচারক বরুণ রায় এ দিন এই মামলার তদন্তকারী অফিসার শৈবালকুমার ত্রিপাঠীর বক্তব্য জানতে চান। শৈবালবাবু আদালতে বলেন, মামলার তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে। এই কেলেঙ্কারিতে প্রচুর নথি ও তথ্য রয়েছে। সেগুলি পরীক্ষা করে দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হবে।

আদালতে এ দিন কুণাল ঘোষের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী অভিযোগ করেন যে, তিনি জেলে গেলেও তাঁর মক্কেলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে মামলা লড়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে।

শুনানি শেষে বিচারক সুদীপ্ত, কুণাল এবং দেবযানীকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কুণাল যাতে তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

অর্থ লগ্নি সংস্থা রোজভ্যালি মামলায় এ দিন নগর দায়রা আদালতে হাজির করানো হয়েছিল ওই সংস্থার কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুকে। নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক শুভ্রা ঘোষের এজলাসে গৌতমবাবু নিজে কিছু কথা বলতে চান। কিন্তু আদালত তা ম়ঞ্জুর করেনি। গৌতমের আইনজীবী তীর্থঙ্কর রায় জানান, তাঁর মক্কেল আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে চান। কিন্তু এ বিষয়টি নিম্ন আদালতের বিচার্য বিষয় নয় বলে বিচারক জানান। শুনানি শেষে রোজভ্যালির কর্ণধারকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

এ দিনই আলিপুর আদালতে সারদা রিয়েলটি মামলায় চতুর্থ অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিল সিবিআই। বৃহস্পতিবার আলিপুরের আদালতের অতিরিক্ত মু্খ্য বিচারক সৌগত রায়চৌধুরীর এজলাসে ওই চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। সারদা মামলায় ধৃত রমেশ গাঁধীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। সারদার প্রায় ১০০ কোটি টাকা রমেশ গাঁধী দু’টি কোম্পানির মাধ্যমে সরিয়ে ফেলেছিলেন বলে ওই চার্জশিটে অভিযোগ করেছে সিবিআই।

অন্য বিষয়গুলি:

kunal ghosh saradha scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy