সুন্দরবনে দূষণ আর নির্মাণে বিধিভঙ্গ নিয়ে মামলার শুনানি হলে জাতীয় পরিবেশ আদালত গুচ্ছ গুচ্ছ নির্দেশ দেবে। কিন্তু তা পালন করবে না রাজ্য সরকার ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। এ রাজ্যে এটাই যেন রেওয়াজ! নির্দেশ পালন না-করায় পরিবেশ আদালত বারবার অসন্তোষ প্রকাশ করলেও রাজ্যের কর্তারা তাকে আমল দেননি।
ছবিটা শুক্রবার কিছুটা বদলে গেল কলকাতায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি এস পি ওয়াংদির তীব্র উষ্মায়। আদালতের নির্দেশ নিয়ে মশকরা চলবে না বলে সরকারি কৌঁসুলি বিকাশ করগুপ্ত ও পর্ষদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরীকে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। আদালতের নির্দেশ কেন পালন করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলে রাজ্য এবং দূষণ পর্ষদকে তুলোধোনা করেন বিচারপতি। জানিয়ে দেন, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ পছন্দ না-হলে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন।
সুন্দরবনে উপকূল বিধি ভেঙে হোটেল ও লজ নির্মাণ, প্লাস্টিক দূষণ-সহ অজস্র অব্যবস্থা ও গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। এই সব অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধের ব্যবস্থা আগে তো হয়ইনি। আদালতে বিষয়টি ওঠার পরেও অনিয়ম রুখতে সরকার তেমন ভাবে সক্রিয় হয়নি বলে অভিযোগ। ইউনেস্কোর বিচারে ঐতিহ্যবাহী এলাকা হিসেবে চিহ্নিত সুন্দরবন আদালতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়ে বিচারপতি ওয়াংদি বলেন, সুন্দরবন নিয়ে রাজ্য সরকার ও পর্ষদের কর্তব্যে গাফিলতি রয়েছে। তা শোধরাতে বললেও রাজ্য ও পর্ষদ যে আদালতের নির্দেশকে আমল দেয়নি। বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আপনারা নির্দেশ অমান্য করছেন। আপনাদের অনেক সময় দেওয়া হয়েছে।’’ পর্ষদ ও সরকারের কর্তাদের উদ্দেশে আদালতের পরামর্শ, ঘরে বসে নয়, মাঠে নেমে কাজ করুন।
গঠনগত ভাবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের স্বাধীন সত্তা থাকার কথা। কিন্তু এ রাজ্যের পর্ষদের সেই সত্তা সত্যিই আছে কি না, তা নিয়েও আদালত প্রশ্ন তুলেছে। আদালতের নির্দেশ ছিল, হোটেলগুলিকে পরিবেশ বিধির আওতায় এনে তবেই ছাড়পত্র দিতে হবে। এ দিন অর্পিতাদেবী জানান, সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় পুরো এলাকাই ‘উপকূল বিধি ১’-এর আওতায় পড়েছে। ফলে এখানে কোনও হোটেলই ছাড়পত্র পাবে না। তাই মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে এক বৈঠকে স্থির হয়েছে, ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে যাতে উপকূল বিধি থেকে ছা়ড় পাওয়া যায়, সেই বিষয়ে আদালতে আর্জি জানানো হবে। আদালতের প্রশ্ন, সব খতিয়ে দেখে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। পর্ষদের মতো একটি স্বাধীন সংস্থার কাজের প্রক্রিয়ায় মুখ্যসচিব আসছেন কোথা থেকে?
পর্ষদকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে আদালত বলেছে, সুন্দরবনে যথেচ্ছ দূষণ ও বেআইনি নির্মাণে পর্ষদের ভূমিকা ঠিক কী, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই অবস্থায় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ না-মানলে আগামী ৩ অক্টোবর, পরবর্তী শুনানির দিন পর্ষদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy