(বাঁ দিকে) তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ, গুলি চালানোর মুহূর্তের সিসিটিভি ফুটেজ (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
কসবায় শাসক দলের পুরপ্রতিনিধি সুশান্ত ঘোষকে গুলি করে খুনের চেষ্টার ঘটনায় বিহারের দুষ্কৃতী পাপ্পু চৌধরির দলের যোগ পেল কলকাতা পুলিশ। সূত্রের খবর, এই ঘটনায় বিহারের বৈশালী থেকে যে দুষ্কৃতীদের আনা হয়েছিল, তারা সকলেই পাপ্পুর দলের লোক। তাদের মধ্যে এক জন, যুবরাজ সিংহ গ্রেফতার হলেও বাকি তিন জন পলাতক। তাদের খোঁজে বিহারে গিয়েছে লালবাজারের একটি দল। তবে শুধুই গুদামের দখল সংক্রান্ত শত্রুতার জেরে সুশান্তের উপরে হামলা, না কি এর নেপথ্যে এলাকা দখলের অঙ্কও কাজ করেছে—সে সবই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, ধৃত যুবরাজ পাপ্পুর দলের নতুন সদস্য। বাকি তিন জনের বিরুদ্ধে বিহারের বিভিন্ন থানায় ৪০টিরও বেশি মামলা রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। সুশান্তকে খুনের চেষ্টার ঘটনায় ইতিমধ্যেই মূল চক্রী গুলজ়ার-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি দুই ধৃত যুবরাজ এবং ট্যাক্সিচালক আহমেদ খান। গুলজ়ার প্রথমে পুলিশি জেরায় দাবি করেছিল, সে ১০ লক্ষ টাকা সুপারি দিয়েছে। পরে অবশ্য বয়ান বদলে সে জানায়, সুপারি দেওয়া হয়েছিল ৫০ লক্ষ টাকার।
তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতদের জেরা করে তাঁরা জেনেছেন, অপরাধে ব্যবহৃত স্কুটারটি সাত দিন আগে কিনেছিল মূল চক্রী গুলজ়ার। এর পরে সেটির নম্বর প্লেটও বদলে দেয় সে। পুলিশ জেনেছে, তাদের চোখে ধুলো দিতে বিহার থেকে কলকাতায় এসে অভিযুক্তেরা মোবাইল নম্বরও পাল্টেছিল। গুলজ়ারই তাদের নতুন সিম কার্ড দেয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, কসবার ঘটনায় গুলজ়ারের পাশাপাশি গুলশন কলোনির বাসিন্দা জুলকারের নামও সামনে আসছে। তাঁর বিরুদ্ধে দেড়শোরও বেশি মামলা রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। অভিযোগ, এর পরেও ‘অজ্ঞাত কারণে’ জুলকারের বিরুদ্ধে অতীতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, গুলশন কলোনি জুড়ে দাপট বাড়ছিল জুলকারের। ছবিটা বদলাতে শুরু করে পুরপ্রতিনিধি হিসেবে সুশান্ত আসার পর থেকে।
স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, সুশান্ত এসে ওই এলাকায় পুকুর ভরাট, সরকারি জমি দখল, বেআইনি নির্মাণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু অভিযোগ, এই নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও বিভিন্ন জনের থেকে টাকা আদায় বন্ধ হয়নি জুলকারের। এমনকি, তার নামে এলাকায় পড়েছে পোস্টারও। একটি জমির সামনে লাগানো পোস্টারে লেখা দেখা গিয়েছে, ‘জুলকারকে কেউ টাকা দেবেন না। এটা সরকারি জমি।’
প্রশ্ন উঠছে, জুলকারের এত দাপট হল কী ভাবে? স্থানীয় একটি সূত্র জানাচ্ছে, এর পিছনে রয়েছে তিলজলা-তপসিয়ার এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির মদত। অভিযোগ, জুলকারের মাথায় তাঁর ‘হাত’ থাকায় পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিত না। কিন্তু গত আড়াই বছরে জুলকারের বাড়বাড়ন্তে কিছুটা রাশ টেনেছিলেন সুশান্ত। অনেকেরই প্রশ্ন, তা হলে কি স্বার্থে ঘা লাগার ফলেই হামলার ঘটনা?
জুলকার এ দিন দাবি করেছেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করানো হয়েছে অনেক বার। আমিই জমি কিনে এখানে ঠকেছি।”
সোমবার সুশান্ত বলেন, “এই এলাকার কাউন্সিলর হয়েছি আড়াই বছর। তার আগে এখানে জমি লুট করে অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। ১৫ বছর আগের দায়ভার আমি নেব না।” তিনি আরও বলেন, “গুলশন কলোনিতে পুর পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা আমার হয়ে হায়দার দেখেন। আমি সপ্তাহে এক দিন সেখানে যাই। জুলকারদের নিশ্চয়ই আঁতাঁত ছিল কারও সঙ্গে। সেই স্বার্থে আঘাত লেগেছে বলেই আমার উপরে হামলা।” যদিও জমি লুট নিয়ে সুশান্তের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “ওঁকে তো কেউ দায় নিতে বলেনি। পুর আইনে কোথাও সে কথা বলাও নেই। পুরপ্রতিনিধিদের সেই ক্ষমতা নেই, সেটা তাঁদের কাজও নয়। এই দায়িত্ব এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy