দিলীপ ঘোষের পা ছুঁয়ে প্রণাম সুকান্ত মজুমদারের। মঙ্গলবার দিল্লিতে। — নিজস্ব চিত্র।
দিলীপ ঘোষের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে গেলেন সুকান্ত মজুমদার। মঙ্গলবার তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সুকান্ত। দিল্লিতে নিজের দফতরে যাওয়ার আগে সুকান্ত সোজা চলে যান দিল্লিতে দিলীপের বাসভবনে। বিজেপির নানা বৈঠকের জন্য এখন দিল্লিতেই রয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ। সুকান্ত তাঁর বাড়িতে গিয়ে দিলীপের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে তাঁর নতুন সফর শুরুর আগে।
দিল্লির মাটিতে দিলীপ-সুকান্তের এই সাক্ষাতে রাজনীতির অলিন্দে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। পরে আনন্দবাজার অনলাইনকে সুকান্ত বলেন, ‘‘উনি একজন প্রবীণ নেতা। ওঁর কাছ থেকে রাজনীতিতে অনেক কিছু শিখেছি। মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব নিতে যাওয়ার আগে আমার মনে হল ওঁর পা ছুঁয়ে একটা প্রণাম করা দরকার। তাই প্রণাম করে এসেছি।’’
সুকান্ত-দিলীপ সাক্ষাতের পাশাপাশি প্রত্যাশিত ভাবেই উঠে এসেছে শুভেন্দু অধিকারীর নামও। কারণ, বঙ্গ বিজেপির তিন কুশীলব বলতে শুভেন্দু-সুকান্ত-দিলীপই আছেন। লোকসভা ভোটের পরে শুভেন্দু-দিলীপের ‘বৈরিতা’ এখন কার্যত প্রকাশ্যে। বস্তুত, লোকসভা ভোটে দিলীপের আসন বদল এবং দিলীপের পরাজয়ের কারণ নিয়ে দিলীপ-পন্থীদের আলোচনা এবং বিশ্লেষণে বারেবারেই উঠে এসেছে শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ‘জটিলতা’র কথা। দিলীপও তাঁর পরাজয়ের কারণ হিসাবে প্রকাশ্যেই দায়ী করেছেন তাঁর আসন বদলের সিদ্ধান্তকে। বলেছেন, তাঁকে তাঁর কেন্দ্র মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না। কারও নাম না-করলেও রাজ্য বিজেপির অন্দরে এই ‘কাহিনি’ কারও অজানা নয় যে, এ বার লোকসভা ভোটে প্রার্থী নির্বাচনে শুভেন্দুকে কার্যত ‘অবাধ ছাড়পত্র’ দিয়েছিল দিল্লি বিজেপি। তার সঙ্গে রয়েছে অতীতেও রাজ্য বিজেপির অন্দরে শুভেন্দু-দিলীপ সম্পর্কের ‘অমসৃণতা’। বস্তুত, সুকান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই ফেসবুকে শুভেন্দু এবং দিলীপের ‘অনুগামী’ পরিচয় দিয়ে ‘পেজ’ খুলে দু’পক্ষের আকচাআকচি শুরু হয়েছে। যদিও বিজেপির দাবি, ওই কাজ ‘বেনামে’ করছে তৃণমূল। তারা চায়, রাজ্য বিজেপির অন্দরে কোন্দল লাগিয়ে দিতে।
সুকান্ত-শুভেন্দু সম্পর্কও যে দারুণ ‘মসৃণ’, তা-ও মনে করে না রাজ্য বিজেপির একাংশ। যদিও প্রকাশ্যে দু’জনেই একে অপরের সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল। বিশেষত, ‘দিলীপ-বিরোধিতা’র প্রশ্নে দু’জনে একই ধারণা পোষণ করেন। বিজেপি নেতৃত্বের প্রায় সকলেই জানেন, ভোটের আগে দিলীপ যখন বাংলার বিজেপি নেতৃত্ব নিয়ে ‘বিরূপ’ হয়েছিলেন, তখন সুকান্ত-শুভেন্দু মিলিত ভাবে দিল্লিতে গিয়ে অভিযোগ করেছিলেন দিলীপের বিরুদ্ধে। কিন্তু ঘটনাচক্রে, শুভেন্দু-সুকান্তের ‘জুটি’তেই বাংলায় লোকসভা ভোটে বিজেপির বিপর্যয় হয়েছে। দিলীপ থেকে গিয়েছেন নির্বাচনী রাজনীতির প্রেক্ষিতে বঙ্গ বিজেপির ‘সফলতম’ সভাপতি। এই প্রেক্ষিতেই দিলীপের সঙ্গে সুকান্তের সাক্ষাৎ এবং তাঁর আশীর্বাদ নেওয়া। প্রসঙ্গত, সুকান্ত প্রথম থেকে দিলীপেরই ‘পছন্দ’ ছিলেন। দিলীপের পরামর্শেই সুকান্তকে রাজ্য সভাপতি করা হয়েছিল।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও সুকান্তকে বালুরঘাটের প্রার্থী করেছিলেন দিলীপই। সঙ্ঘ পরিবারের ছেলে, শিক্ষিত ইত্যাদি দেখে সুকান্তের প্রার্থিপদের সুপারিশ করেছিলেন তৎকালীন বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ। এমনকি, ২০২১ সালে যখন দিলীপকে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা প্রশ্ন করেছিলেন, বঙ্গ বিজেপির সভাপতি হিসাবে দিলীপ কাকে দেখতে চান, তখনও সুকান্তেরই নাম বলেছিলেন দিলীপ। অর্থাৎ সুকান্তের রাজনৈতিক জীবনের যে প্রথম দু’টি সাফল্য, তার নেপথ্যে রয়েছেন দিলীপই। আবার সুকান্তও বঙ্গ বিজেপির সভাপতি হওয়ার পরে দিলীপকে পাশে নিয়ে প্রথম সাংবাদিক বৈঠকটি করেছিলেন।
এমন সম্পর্ক প্রথম ধাক্কা খায় পঞ্চায়েত ভোটের সময়। দিলীপ প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, সুকান্তের অভিজ্ঞতা কম। পাল্টা জবাব দেন সুকান্তও। যা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। পরে অবশ্য তা ঠিকও হয়ে যায়। তার পরে আবার রাজ্যের নেতৃত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে শুরু করেন দিলীপ। বিজেপির অভ্যন্তরের খবর, সেই সময় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুই দিল্লি নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেছিলেন দিলীপকে নিয়ে। যার জন্য দিলীপের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ খোয়া যায়। দিলীপ-সুকান্তের দূরত্ব তৈরি হয়। আশীর্বাদে সেই পর্ব মিটেছে বলেই আশা রাজ্য বিজেপির নেতাদের একাংশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy