সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তাঁর জামাইকে ডেকেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সোমবার তলব করা হয়েছে তাঁর জামাইকে। কিন্তু তাঁর ‘জামাইয়ের নামে কিছু নেই’। তাই তাঁকে ডেকে কোনও লাভ হবে না। এমনটাই বললেন নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সোমবার জোকা ইএসআই হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে সুজয়কে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময়ই জামাইকে তলবের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের সম্মুখীন হন সুজয়। প্রশ্ন শুনে ‘কাকু’র সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘বাড়ির লোককে ডাকছে। ওদের নামে কিছু নেই।’’ পরে জোকা ইএসআই-তে এই প্রসঙ্গে সুজয় বলেন, ‘‘কিছু বলার নেই। তদন্তের স্বার্থে ডেকেছে।’’ জামাইয়ের সম্পত্তির প্রসঙ্গে মেজাজ হারান তিনি। বলেন, ‘‘এত কোম্পানি কোথায়? ৩টে কোম্পানি। বাকি ৩টির কথা যা বলা হচ্ছে, সব বাজে কথা।’’
গত ৩০ মে প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে গ্রেফতার করে ইডি। তার পর যত তদন্ত এগোচ্ছে, সুজয় সম্পর্কে নানা তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সেতুবন্ধনের কাজ করেছিলেন সুজয়। মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। ২০১৮ সাল থেকে এই দুর্নীতিতে ‘কাকু’ জড়িত বলে দাবি করেছে ইডি। তদন্তকারীরা আরও দাবি করেছেন, জেরায় কুন্তল জানিয়েছেন, পার্থের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে তাঁর কাছ থেকে প্রথমে ৭০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন সুজয়। সুজয়ের কথাতেই তিনি পার্থকে আরও ১০ লক্ষ টাকা দেন। বর্তমানে ১৪ দিনের ইডি হেফাজতে রয়েছেন সুজয়।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের প্রাক্তন কর্মী সুজয়। মঙ্গলবার এই দুর্নীতির তদন্তে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে তলব করেছে ইডি। যদিও সংবাদমাধ্যমে অভিষেক ইতিমধ্যেই হাজিরা না দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। অভিষেকের তলব প্রসঙ্গে এর আগে সুজয় বলেছিলেন, ‘‘ডেকে কোনও লাভ হবে না।’’ তবে সোমবার এই প্রসঙ্গে আর মুখ খুলেননি সুজয়। পাশাপাশি তাঁর মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, মেজাজ হারিয়েছিলেন সুজয়। বলেছিলেন, “আমার ২০০ কোটি (টাকা) থাকতে পারে। তাতে ইডির কী? লোকের কি টাকা নেই? অম্বানী-আদানির কি টাকা নেই?” এই আবহে এ বার সুজয়ের জামাইকে তলব করা হয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, জামাইয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছেন সুজয়। সেই সংক্রান্ত তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। এর আগে, অনেক বারই জামাইয়ের প্রসঙ্গ এড়িয়েছেন সুজয়।
আগে যা ঘটেছে
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই গ্রেফতার করে বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডলকে। তাঁর মুখেই প্রথম ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা শোনা যায়। নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তে নাম এসেছে গোপাল দলপতির। তাঁর মুখেও ‘কাকু’র নাম শোনা গিয়েছিল। এর পরেই গোয়েন্দাদের আতশকাচের তলায় আসেন সুজয়। সিবিআই সুজয়কে দু’বার তলব করে। প্রথম বার সিবিআই দফতরে গিয়ে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের বার নিজের আইনজীবীকে দিয়ে নথিপত্র পাঠিয়েছিলেন। সেই সময় সুজয় জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে তাঁর কাছে কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল। সেগুলি তিনি আইনজীবী মারফত পাঠিয়েও দিয়েছেন সিবিআই দফতরে। একই সঙ্গে সুজয় দাবি করেছিলেন, তাঁর স্ত্রী-কন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথিও তিনি পাঠিয়েছেন আইনজীবীর মাধ্যমে।
গত ২০ মে সুজয়ের বেহালার ফকিরপাড়া রোডের ফ্ল্যাট, বাড়ি, অফিস-সহ বহু জায়গায় তল্লাশি চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ওই দিনই নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। সুজয় এক সময় অভিষেকের অফিসে কাজ করতেন। ‘কাকু’র সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এমন ৩টি সংস্থাতেও তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সেই সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ৩টি সংস্থার মধ্যে একটি সংস্থা বিশেষ করে নজরে রয়েছে তদন্তকারীদের। সেই সংস্থা ‘কালীঘাটের কাকু’ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে তদন্তকারীদের ধারণা। ওই সংস্থাগুলির ডিরেক্টর এবং অ্যাকাউন্টট্যান্টদের তলব করা হয় আগেই। এর পরেই ৩০ মে তলব করা হয় সুজয়কে। সেদিনই দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তার আগে, গত ৪ মে সুজয়ের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। সেই তল্লাশি অভিযানে সুজয়ের বাড়ি থেকে কয়েক লক্ষ নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করে সিবিআই। তিনি অবশ্য দাবি করেছিলেন, তাঁর বোন হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসার বিল মেটানোর জন্য ওই অর্থ তুলেছিলেন। পাওয়া গিয়েছিল একটি অ্যাডমিট কার্ডও। সুজয় দাবি করেছিলেন, সেটা পুরসভায় চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁর শ্যালিকার পুত্রের অ্যাডমিট কার্ড। সুজয়ের একটি ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়।
নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তাপস সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছিলেন, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুন্তল বলতেন, ‘‘কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ ইডি সূত্রে খবর, পরে গোপাল আর তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কুন্তলের ওই ‘কালীঘাটের কাকু’ রাজ্যের এক প্রভাবশালী শীর্ষ নেতার সংস্থার চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও)। তার পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আতশকাচের তলায় সুজয়। যদিও কুন্তল দাবি করেছিলেন, তিনি ওই ‘কাকু’কে চেনেন না। কুন্তল এ-ও দাবি করেন, যে সুজয়কে নিয়ে আলোচনা চলছে, তিনি ‘কালীঘাটের কাকু’ নন। সুজয় নিজে দাবি করেছিলেন, কেন তাঁকে ‘কালীঘাটের কাকু’ বলা হচ্ছে, তা তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর কাছে কোনও টাকা জমা পড়েনি বলেও দাবি করেন সুজয়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার কর্মস্থল নিউ আলিপুর। ‘কালীঘাটের কাকু’ কথাটা কোথা থেকে এল, আমার পক্ষে সেটা বলা সম্ভব নয়। যাঁরা এটা বলছেন, তাঁরাই এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy