Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
বিড়ম্বনার চার অধ্যায়

দলে দুর্বৃত্ত, ফের সুগতর বিবেকে অস্বস্তি তৃণমূলে

তৃণমূলকে ফের বিড়ম্বনায় ফেলল ‘বিবেক’! তাঁর ‘বিবেকে’র কথা বলে দলে অস্বস্তি বাড়ালেন যাদবপুরের শিক্ষাবিদ-সাংসদ সুগত বসু। ‘জাগ্রত বিবেকে’ এর আগে সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্তদের শাস্তির পক্ষে মুখ খুলেছিলেন সুগতবাবু। এ বার দলে দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন তিনি। দুর্বৃত্তদের দল থেকে দ্রুত সরানোর দাবি তুলে বৃহস্পতিবার আলিপুর হর্টিকালচারে এক অনুষ্ঠানের পরে সুগতবাবু বলেন, “রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে হবে। সব দলেই দুর্বৃত্তরা ঢুকে পড়েছে।

ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য! দলের কাঁটা বাড়ালেন সুগত বসু।—নিজস্ব চিত্র।

ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য! দলের কাঁটা বাড়ালেন সুগত বসু।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৬
Share: Save:

তৃণমূলকে ফের বিড়ম্বনায় ফেলল ‘বিবেক’! তাঁর ‘বিবেকে’র কথা বলে দলে অস্বস্তি বাড়ালেন যাদবপুরের শিক্ষাবিদ-সাংসদ সুগত বসু।

‘জাগ্রত বিবেকে’ এর আগে সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্তদের শাস্তির পক্ষে মুখ খুলেছিলেন সুগতবাবু। এ বার দলে দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন তিনি। দুর্বৃত্তদের দল থেকে দ্রুত সরানোর দাবি তুলে বৃহস্পতিবার আলিপুর হর্টিকালচারে এক অনুষ্ঠানের পরে সুগতবাবু বলেন, “রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে হবে। সব দলেই দুর্বৃত্তরা ঢুকে পড়েছে। যত তাড়াতাড়ি রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত করা যায়, ততই ভাল।” এই দুর্বৃত্ত তাঁর দলেও রয়েছে কি না প্রশ্নের জবাবে সুগতবাবু বলেন, “সব দলেই আছে। যে কোনও দল ক্ষমতায় থাকলেই খারাপ লোক ঢোকে।”

ক্ষমতায় থাকাকালীন যে কোনও দলে ‘অস্বচ্ছ’ লোকের ভিড় বাড়ে এবং এই বিপদ ঠেকাতে শাসক দলের বাড়তি সতর্ক থাকা উচিত বলে ক’দিন আগে মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ দেবব্রত বন্দ্যোপধ্যায়। সুগতবাবুর গলায় এ দিন প্রায় সে কথারই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে। তাঁরও অভিমত দুর্বৃত্তদের বহিষ্কার করা হলে আখেরে দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ হবে। তবে দুর্বৃত্তদের প্রভাব এড়িয়ে নিজের ‘মূল্যবোধে’ মানুষের জন্য তিনি কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সুগতবাবু। দুর্নীতি-দুর্বৃত্ত পরিবৃত দলের স্বরূপ বুঝেও রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা অবশ্য বলেননি সুগতবাবু। তাঁর বক্তব্য, “আমার মতো ব্যক্তি রাজনীতি ছেড়ে চলে গেলে কি ভাল হবে? পুরোপুরি দুর্বৃত্তদের হাতে রাজনীতি ছেড়ে দেব? রাজনীতিতে যে সৎ ও দক্ষ লোকেরা আছেন, তাঁদের এগিয়ে আনা উচিত।”

সুগতবাবু একা নন, তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী দলের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। ‘বিদ্রোহী’ সেই নেতাদের কারও বিরুদ্ধেই দল এখনও ব্যবস্থা নেয়নি। বরং কয়েক দিন আগে বিদ্রোহীদের প্রতি সুর নরম করেছিলেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সুগতবাবুর এ বারের মন্তব্য বিশেষ ভাল চোখে দেখছে না শাসক দল। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “দলের যে কর্মীরা তাঁদের রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে তৃণমূলকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছেন, তাঁদের সম্মানের কথা সবাইকেই মাথায় রাখতে অনুরোধ করব। এমন কোনও মন্তব্য বা আচরণ কাঙ্ক্ষিত নয়, যাতে কর্মীদের সম্মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।” দুর্বৃত্তদের তালিকা দলের কাছে জমা দিতে সুগতবাবুকে অনুরোধ করেছেন পার্থবাবু। মহসচিবের বক্তব্য, “সুগতবাবুর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হয়েই ওঁর কাছে সবিনয়ে অনুরোধ করছি, যে দুর্বৃত্তরা দলে ঢুকে পড়েছে বলে তিনি মনে করছেন, তাদের তালিকা দলীয় বৈঠকে দিন। যদি তাতেও অসুবিধা হয়, তা হলে ই-মেল করে পাঠিয়ে দিন। তার পরে দল ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবতে পারবে।”

সারদা-সহ একের পর এক ঘটনায় বিপর্যস্ত তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর নিজের ব্যক্তিগত অবস্থানের দূরত্বের ইঙ্গিত দিয়ে এ দিন সুগতবাবুর স্বীকারোক্তি, “আমি বরাবরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। কেউ যদি টাকা নয়ছয় করে, তাহলে তার বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত।” সারদা-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের মামলা সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি এ দিনই দলের পাশে না দাঁড়িয়ে বরং বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্ট যা বলবে, তা তো মেনে নিতেই হবে।”

গত লোকসভা ভোটে যাদবপুর কেন্দ্রের মধ্যে ভাঙড় থেকেই সবথেকে বেশি ভোটের লিড পেয়েছিলেন সুগতবাবু। অধুনা বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের সাহায্য নিয়ে কী ভাবে হার্ভার্ডের অধ্যাপক সুগতবাবু ভোটে লড়ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। সেই প্রশ্নের অস্বস্তিতে প্রায়শই আরাবুল-সংস্রব এড়িয়ে চলতে দেখা যেত সুগতবাবুকে। তাঁর এখনকার উপলব্ধির কথা শুনে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই আরাবুল প্রসঙ্গ তুলেছেন। এমনকী, দলীয় সাংসদের উদ্দেশে এ দিন পার্থবাবুরও তির্যক মন্তব্য, “উনি নির্বাচনে জিতেই সাংসদ হয়েছেন। যখন দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তখন আশা করি এই সব কথাই তাঁর মনে ছিল!”

অন্য বিষয়গুলি:

sugata basu TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE